সুলেমানা আবদুল সামেদ
ঘানার উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দা সুলেমানা আবদুল সামেদকে তার স্থানীয় হাসপাতাল সম্প্রতি এক স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর জানিয়েছে, তার উচ্চতা এখন ৯ ফুট ৬ ইঞ্চি বা ২.৮৯ মিটার বৃদ্ধি পেয়েছে।
বর্তমান রেকর্ডের সঙ্গে মিলিয়ে দেখলে তিনিই হচ্ছেন বিশ্বের দীর্ঘতম মানব। তবে গ্রামের ওই ক্লিনিকের নার্সরা তার উচ্চতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ নিশ্চিত নন, কারণ সামেদকে নির্ভুলভাবে মাপার উপযুক্ত যন্ত্র সেখানে নেই। খবর বিবিসির।
সুলেমানা আবদুল সামেদ- স্থানীয় ভাষায় যার ডাকনাম আউচে- একটি বিরল স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত যার নাম জাইগ্যান্টিজম। বেশ কয়েক বছর আগে তার এ রোগ ধরা পড়ে এবং প্রতি মাসেই হাসপাতালে যেতে হয় তাকে।
শেষবার হাসপাতালে তাকে পরীক্ষা করার সময় বিস্মিত ওই নার্স জানান, সামেদ এখন উচ্চতা মাপার মেশিনটির চেয়েও অতিরিক্ত দীর্ঘকায় হয়ে উঠেছেন। তখন সেই মেশিনের সঙ্গে বাড়তি একটি কাঠি লাগিয়ে এবং ১৬ ফিট লম্বা টেপ দিয়ে কয়েকজনে মিলে তার উচ্চতা মাপা হয়- আর এভাবেই তারা বের করেন যে সামেদের উচ্চতা এখন সাড়ে ৯ ফিট।
বিবিসির সংবাদদাতা ফেভার নানু উত্তর ঘানার গাম্বাগা গ্রামে গিয়ে সামেদের সঙ্গে দেখা করেছেন কয়েক মাস আগে। তখনই তারা মেপে দেখেছিলেন যে আউচের উচ্চতা ছিল ৭ ফুট ৪ ইঞ্চি।
গিনেস বুক অব রেকর্ডসের তথ্য অনুযায়ী বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা জীবিত লোক হলেন তুরস্কের ৪০ বছর বয়স্ক সুলতান কোসেন- যার উচ্চতা ৮ ফুট ২.৮ ইঞ্চি। সে সময় তার চেয়ে উচ্চতায় অল্প কিছুটা পিছিয়ে ছিলেন সামেদ।
এখন, সুলেমানা আবদুল সামেদের বর্তমান উচ্চতা যদি ৯ ফুট ৬ ইঞ্চি হয়- তাহলে বিশ্বের দীর্ঘতম ব্যক্তি তিনিই।
জিভ বড় হয়ে যাচ্ছিল
আউচের বয়স যখন ২২ বছর তখন রাজধানী আক্রায় থাকতেন তিনি। কাজ করতেন এক কসাইয়ের দোকানে, আর সেই বেতনের টাকা জমাচ্ছিলেন গাড়ি চালানো শেখার জন্য।
সেখানেই একদিন তিনি অনুভব করেন যে তার মুখের ভেতরে জিহ্বা এত বড় হয়ে গেছে যে তিনি ঠিকমতো নিঃশ্বাস নিতে পারছিলেন না। কয়েকদিন পরই তিনি টের পেলেন যে তার শরীরের অন্যান্য অংশও বড় হয়ে যাচ্ছে।
আত্মীয়স্বজনরা তার এই আকস্মিক ও অস্বাভাবিক উচ্চতা বৃদ্ধি নিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করতে শুরু করলেন। এর ফলে অন্য আরো সমস্যা দেখা দিতে লাগলো। তার মেরুদণ্ড অস্বাভাবিক বাঁকা হয়ে গেল।
সামেদ বুঝতে পারলেন যে এক ‘দানবাকৃতির’ মানুষে পরিণত হচ্ছেন তিনি।
‘মারফান সিনড্রোম’
সামেদ যে সমস্যায় আক্রান্ত চিকিৎসাবিজ্ঞানে তাকে ‘মারফান সিনড্রোম’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। এটি এমন একটি জিনগত সমস্যা যাতে দেহের সংযোগকারী কোষগুলো আক্রান্ত হয় এবং তার ফলে মানুষের হাত-পা অস্বাভাবিক লম্বা হয়ে যায়।
এতে হৃদযন্ত্রের ত্রুটির মতো দেখা দিতে পারে গুরুতর সমস্যা। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সামেদের এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধি থামাতে তার মস্তিষ্কে একটি অস্ত্রোপচার করতে হবে।
তবে ঘানার সরকারি চিকিৎসাব্যবস্থায় এর খরচ মেটানো সম্ভব নয়।
আউচে এখন আক্রা ছেড়ে তার গ্রামে ফিরে গেছেন। তার গাড়ি চালক হওয়ার স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। এখন তিনি তার ভাইয়ের সঙ্গে একটি ছোট ব্যবসা করছেন। সামাজিক জীবনও সংকুচিত হয়ে গেছে তার। তবে গ্রামে তিনি একজন ‘সেলিব্রিটিতে’ পরিণত হয়েছেন। পথ চলতে তাকে নিয়মিত লোকের ডাকে হাসিমুখে সাড়া দিতে হয়। এখন অনেকেই তার সঙ্গে সেলফি তোলেন।