ফাইল ছবি
চলতি বছরের শুরুতে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে অতীতের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর নানা উদ্যোগের কারণে এপ্রিলে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক বাজার নিম্নমুখী হতে শুরু করে। সর্বশেষ গত মাসেও দাম কমেছে। এ নিয়ে টানা ছয় মাস ধরে বাজার নিম্নমুখী রয়েছে। স¤প্রতি জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, জ্বালানি পণ্যের আকাশচুম্বী দাম ও অতিরিক্ত পরিবহন ব্যয়ের প্রভাব থাকলেও তাতে ভারসাম্য এনেছে দুর্বল চাহিদা ও শক্তিশালী উৎপাদন। এফএও জানায়, গত মাসে খাদ্যপণ্যের গড় বৈশ্বিক মূল্যসূচক দাঁড়িয়েছে ১৩৬ দশমিক ৩ পয়েন্টে, আগস্টে যা ছিল ১৩৭ দশমিক ৯ পয়েন্ট। এর আগের মাসে সূচক ছিল ১৩৮ পয়েন্টে।
এ বছরের মার্চে সূচক রেকর্ড ১৫৯ দশমিক ৭ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছিল। পাঁচ মাসের ব্যবধানে সে পর্যায় থেকে লক্ষণীয় মাত্রায় কমেছে সূচক। যদিও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক দাম এখনো ৫ দশমিক ৫ শতাংশের ওপরে অবস্থান করছে।
গত মাসে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক দাম কমে যাওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে ভোজ্যতেল। এক মাসের ব্যবধানে এটির দাম ৬ দশমিক ৬ শতাংশ কমেছে। কারণ বিশ্বজুড়ে ভোজ্যতেলের সরবরাহ বেড়েছে। এছাড়া অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম কমার কারণেও এসব পণ্যের দাম কমছে। চিনি, দুগ্ধপণ্য ও আমিষের দাম এক শতাংশেরও কম হারে কমেছে। এটি মূল্যস্ফীতি থেকে উত্তরণ ও স্বস্তির বার্তা দিচ্ছে। দুগ্ধপণ্যের দাম দশমিক ৬ শতাংশ, আমিষ পণ্যের দাম দশমিক ৫ এবং চিনির দাম দশমিক ৭ শতাংশ কমেছে।
তবে অন্যান্য পণ্যের দাম কমলেও এফএও দানাদার খাদ্যশস্যের মূল্যসূচক ১ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে গমের দাম ২ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্লেষকরা জানান, আর্জেন্টিনা ও যুক্তরাষ্ট্রে খরা পরিস্থিতির কারণে আবাদ ও উৎপাদন নিয়ে উৎকণ্ঠা কাজ করছে। অন্যদিকে নভেম্বরের পর ইউক্রেনের কৃষ্ণ সাগরীয় বন্দর দিয়ে আবারো শস্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এসব কারণেই গমের বাজারদরে উল্লম্ফন দেখা দিয়েছে।
চালের দাম বেড়েছে ২ দশমিক ২ শতাংশ। সম্প্রতি পাকিস্তানে ভয়াবহ বন্যার কারণে দেশটির উৎপাদন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে বাজার ঊর্ধ্বমুখী চাপে পড়েছে।
দানাদার খাদ্যশস্যের সরবরাহ ও চাহিদাসংক্রান্ত অন্য একটি প্রাক্কলনে এফএও জানায়, চলতি বছর দানাদার খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক উৎপাদন দাঁড়াবে ২৭৬ কোটি ৮০ লাখ টনে। এর আগের বছর উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ২৭৭ কোটি ৪০ লাখ টন। অর্থাৎ এ বছর এসব পণ্যের উৎপাদন কমবে ১ দশমিক ৭ শতাংশ। বিশ্বের শীর্ষ উৎপাদক দেশগুলো বৈরী আবহাওয়ার কারণে কৃষিপণ্য আবাদে হিমশিম খাচ্ছে। এ বছরের শেষ নাগাদ পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা দেখছে না এফএও।
অন্যদিকে ২০২২-২৩ বিপণন মৌসুমে দানাদার খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক ব্যবহার উৎপাদনকে ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করছে এফএও। এর ফলে মৌসুম শেষে বৈশ্বিক মজুত ১ দশমিক ৬ শতাংশ কমে ৮৪ কোটি ৮০ লাখ টনে নামতে পারে।
এমকে