কার্যকারিতা কম হলেও মার্কিন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ফাইজারের তৈরি টিকা ভারতে প্রথম শনাক্ত করোনার ধরন প্রতিরোধ করতে পারে। একইসঙ্গে ফাইজারের টিকা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি টিকার চেয়ে মানবশরীরে বেশি অ্যান্টিবডি তৈরি করে। ফ্রান্সের পাস্তুর ইনস্টিটিউটের গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে বলে শনিবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
গবেষণা পরিচালনাকারী পাস্তুর ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, তারা ২৮ জন স্বাস্থ্যকর্মীর ওপর ফাইজার এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার পরীক্ষা করে। ওই ২৮ জনের মধ্যে ১৬ জন ফাইজারের দুই ডোজ টিকা এবং ১২ জন অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার একটি ডোজ গ্রহণ করেছিলেন।
তাতে দেখা গেছে, গ্রহীতাদের শরীরে করোনার ভারতীয় ধরন বি.১.৬১৭কে প্রতিরোধ করার মতো যথেষ্ট অ্যান্টিবডি তৈরি করেছে ফাইজারের টিকা। অন্যদিকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা গ্রহীতাদের শরীরে তুলনামূলক কম অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে।
ফ্রান্সের পাস্তুর ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, ফাইজারের এই টিকা ব্রিটেনে শনাক্ত করোনার ধরন বা দক্ষিণ আফ্রিকার ধরনের বিরুদ্ধে যতটা কার্যকরী, ভারতে শনাক্ত ধরনের বিরুদ্ধে ঠিক ততোটা কার্যকরী নয়। কিন্তু তারপরও ফাইজারের টিকা ভাইরাসের ভারতীয় ধরনকে প্রতিরোধ করতে পারে।
পাস্তুর ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর এবং গবেষণা দলের সদস্য অলিভার সোয়ার্জ বলছেন, ‘ল্যাবরেটরিতে চালানোর পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী, কার্যকারিতা কিছুটা কম হলেও করোনার ভারতীয় ধরন প্রতিরোধে সক্ষম ফাইজারের টিকা।
ভারতে শনাক্ত ভাইরাসের এই ধরনটি অনেক বেশি সংক্রামক। গত বছর করোনা মহামারির শুরুতে ভারতে দৈনিক ৯০ হাজারের কিছু বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভাইরাসের নতুন এই ধরনটি প্রতিদিন চার গুণ বেশি মানুষকে সংক্রমিত করছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, গত মার্চ মাসের শেষের দিকে ভারতে করোনার নতুন ও ডবল মিউটেশনের খোঁজ মেলে। এরপর থেকেই দেশটিতে সংক্রমণ বাড়তে থাকে লাফিয়ে লাফিয়ে, এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে এসে যা চরম আকার ধারণ করে। অবশ্য রাজ্যে রাজ্যে লকডাউন-সহ নানা বিধিনিষেধ জারি থাকার কারণে দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা চার লাখ থেকে ১ লাখ ৬০ হাজারের ঘরে নেমে এসেছে।
বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, করোনার এই নতুন ধরনটি তুলনামূলকভাবে বেশি সংক্রামক। শুধু তাই নয়, টিকা গ্রহণ করা ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধও ক্ষমতা কিছুটা হলেও ভাঙতে সক্ষম ভাইরাসের নতুন এই ধরনটি।
আগে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন, এমন ব্যক্তিকেও আবার আক্রান্ত করতে সক্ষম ভাইরাসের ডবল মিউটেশান। আর তাই পাস্তুর ইনস্টিটিউটের সর্বশেষ এই গবেষণার ফলাফলে আশার আলো দেখতেই পারেন মহামারিতে বিপর্যস্ত মানুষ।