ভারতজুড়ে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের অন্যতম কারণ ডাবল মিউটেন্ট ভাইরাস। তবে এবার ভয় জাগাচ্ছে করোনার নতুন ধরন। এবার জানা গেলো ট্রিপল মিউনেন্ট ভাইরাসের কথা। দেশটিতে ছড়িয়ে পরা করোনার তিনটি ধরন মিলিয়ে আরেকটি ধরন হয়েছে, আর এই ধরনটি ভারতের বিভিন্ন স্থানে পাওয়া গেছে।
ধারণা করা হচ্ছে মহারাষ্ট্র, দিল্লি ও পশ্চিমবঙ্গে করোনার বাড় বাড়ন্তের পেছনে এই তৃতীয় ধরনের সম্পর্ক থাকতে পারে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, কোভিড-১৯ ভাইরাসের তিনটি আলাদা স্ট্রেইন মিলে তৈরি ভাইরাসের এই নয়া ভ্যারিয়্যান্টের সংক্রামক ক্ষমতাও প্রায় তিন গুণ।
এই নয়া স্ট্রেইনের দাপটেই বিশ্ব জুড়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। সংক্রামক শক্তি অনেক বেশি তো বটেই, শারীরিক অবস্থার অবনতিও খুব দ্রুত হচ্ছে এই নয়া স্ট্রেইনে আক্রান্তদের। বিশেষজ্ঞদের সতর্কবাণী, ঠিক সময় লাগাম পরানো না গেলে এ বার সংক্রমণ সুনামির আকার ধারণ করতে পারে।
কানাডার ম্যাকগিল ইউনির্ভাসিটির সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ মধুকর পাই জানান, নতুন ধরনের ভাইরানটিরও সংক্রমণ ক্ষমতা অনেক বেশি। পাশাপাশি এটি রোগীকে দ্রুত অসুস্থ কর তুলছে।
তিনি বলেন, ভাইরাসের দ্রুত চরিত্র বদলের দিকে আমাদের সার্বক্ষণিক নজর রাখতে হবে। সেই সাথে টিকাদান কর্মসূচিকে দ্রুত এগিয়ে নিতে হবে।
এই সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ডাবল মিউটেন্টের বিষয়টি দেরিতে জানার ফলেই ভারতে দ্বিতীয় ঢেউ দ্রুত ছড়িয়েছে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতে করোনা ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স করা হচ্ছে খু্ব কম। দেশটির মাত্র দশটি ল্যাবে বর্তমানে সিকোয়েন্সিংয়ের কাজ চলছে। মধুকর পাই জানান, জিনোম সিকোয়েন্সের সংখ্যা বাড়ানো অনেক জরুরি। তাহলেই জানা যাবে করোনার বিস্তার কোন দিকে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, করোনার চরিত্র বদলের ফলেই বিশজুড়ে করোনার দ্বিতীয় ও তৃতীয় ঢেউ সবচেয়ে বেশি ভয়ংকর হয়েছে। করোনার সবগুলো নতুন ধরনের সংক্রমণ ক্ষমতা ৫০-৭০ গুণ বেশি। সেই সঙ্গে এটি শিশু থেকে তরুণদেরও আক্রান্ত করছে।
তবে ট্রিপল মিউটেন্ট নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই জানিয়ে মধুকর জানান, ভাইরাস যখন দ্রুতগতি ও বিস্তৃত আকারে ছড়ায়, তখন সেটির রূপও বেশি বদল হয়।
তবে আতঙ্কের বিষয় হলো, ট্রিপল ভ্যারিয়েন্টের করোনা ভাইরাস দুইটি মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডিকে ফাঁকি দিতে সক্ষম বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা। ফলে টিকা এই ধরন থেকে কতটা সুরক্ষা দেবে তা এখনো পরিস্কার নয় বিজ্ঞানীদের কাছে।
মোকাবিলার উপায় কী? বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, আপাতত এর বিরুদ্ধে একের পর এক ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা পরীক্ষা করে যাওয়া ছাড়া কোনও পথ নেই। তবে সবার আগে প্রয়োজন এর চরিত্র বিশ্লেষণ। যা যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে করার পরামর্শই দিচ্ছেন তারা। প্রয়োজন নিয়মিত জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের। তবে ভারতে যেখানে মোট আক্রান্তের মাত্র ১ শতাংশের উপর এই জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হচ্ছে সেখানে এক ধাক্কায় সেই হার বাড়িয়ে তোলাই বড় চ্যালেঞ্জ।
ভাইরাস যত ছড়ায় সেটির মিউটেশনের হারও তত বৃদ্ধি পায়। এই নয়া স্ট্রেইনটি শিশুদেরও সংক্রমিত করছে। তবে এখনও পর্যন্ত এই নয়া ভ্যারিয়্যান্ট নিয়ে বিশেষ কোনও তথ্য নেই বিজ্ঞানীদের কাছে। যে কারণে আপাতত ‘ভ্যারিয়্যান্ট অব কনসার্ন’-এর বদলে ‘ভ্যারিয়্যান্ট অব ইন্টারেস্ট’-এর তালিকাতেই রাখা হয়েছে এটিকে।
এদিকে, করোনা সংক্রমণে আগের সব রেকর্ড ভেঙেছে ভারত। দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩ লাখ ১৪ হাজার ৮৩৫ জন মানুষ নতুন করে এই প্রাণঘাতী ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। বিশ্বে এই প্রথম কোনও দেশে একদিনে ৩ লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হলেন। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমণে প্রাণ হারিয়েছে ২ হাজার ১০৪ জন। অর্থাৎ একদিন আগের তুলনায় আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে।