Image default
আন্তর্জাতিক

ভিডিও গেম খেলল পাত্রে রাখা মস্তিষ্ককোষ

ভিডিও গেম পং খুব সাধারণ একটি খেলা। যে কেউ এটি খেলতে পারে। এমনকি পাত্রে রাখা মস্তিষ্ককোষও এ গেম খেলতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীরা এমনটাই দাবি করেছেন। তাঁরা কম্পিউটারের সঙ্গে মানুষ ও ইঁদুরের নিউরনকে যুক্ত করেন। এ সময় নিউরনগুলোকে উদ্দীপ্ত করে খেলায় অংশ নিচ্ছে কি না, বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখেন তাঁরা। নিউরন হলো একধরনের স্নায়ুকোষ। বাইরের দুনিয়া থেকে সংবেদনশীল তথ্য গ্রহণ করে তা পেশিতে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে এই নিউরন। একে স্নায়ুতন্ত্রের গঠনমূলক ও কার্যকর একক বলা হয়ে থাকে।

বিজ্ঞানীরা বৈদ্যুতিক পর্যবেক্ষণপদ্ধতি ব্যবহার করে নিউরনের প্রতিক্রিয়া ও কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন। তাঁরা এর ফলাফলকে বিশেষ ধরনের স্পাইক হিসেবে চিহ্নিত করেন। তাঁরা দেখেন, গেম খেলার সময় প্যাডেল নড়াচড়া ও বলে আঘাত করার সময় স্পাইক অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে ওঠে। নিউরন যখন কোনো বলে আঘাত করতে পারে না, তখন তার প্রতিক্রিয়াও সফটওয়্যার ব্যবহার করে বিশ্লেষণ করেছেন বিজ্ঞানীরা।

গবেষণাসংক্রান্ত নিবন্ধটি গত বুধবার নিউরন সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। এতে বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, নিউরনগুলো পরিবর্তনশীল পরিবেশের কার্যকলাপের সঙ্গে একটি লক্ষ্যভিত্তিক উপায়ে, তাৎক্ষণিক সময়ে মানিয়ে নিতে পারে। বিষয়টি তাঁরা প্রমাণ করতে পেরেছেন।

অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের করটিকাল ল্যাবসের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ব্রেট কাগান এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘কীট, মাছি থেকে শুরু করে মানুষের ক্ষেত্র পর্যন্ত সাধারণ বুদ্ধিমত্তার শুরু হচ্ছে এই নিউরন। এ ক্ষেত্রে প্রশ্নটি ছিল, আমরা নিউরনের সঙ্গে এমন কোনো উপায়ে যোগাযোগ করতে পারি কি না, যাতে সহজাত বুদ্ধিমত্তার বিষয়টি আহরণ করা যায়?’

বিজ্ঞানী কাগান বলেন, গবেষকেরা ভিডিও গেম পং বেছে নিয়েছিলেন। কারণ, এটি পরিচিত ও সহজ একটি খেলা। এ ছাড়া মেশিন লার্নিংয়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা প্রথম দিককার গেমগুলোর এটি একটি। তাঁর গবেষক দল এখন অন্য গেম নিয়েও পরীক্ষা করছে।

কাগান বলেছেন, তাঁরা যে প্রযুক্তি তৈরিতে কাজ করছেন, তা ভবিষ্যতে আরও উন্নত ওষুধ উদ্ভাবন, রোগের মডেল তৈরি ও কীভাবে বুদ্ধিমত্তা জেগে ওঠে, তা বুঝতে সহায়তা করবে। এ থেকে মেশিন লার্নিং প্রযুক্তির জন্য নতুন অ্যালগরিদম তৈরি করা যাবে।

কাগান আরও বলেন, মানুষ হওয়ার অর্থের মৌলিক দিকগুলোকে স্পর্শ করার পাশাপাশি পরিবর্তনশীল ও গতিশীল পৃথিবীতে তথ্য প্রক্রিয়াকরণ করে ও সংবেদনশীল হিসেবে বেঁচে থাকা ও বুদ্ধিমান হওয়ার দিকটিকেও তুলে ধরে এটি।

কাগান মনে করেন, দীর্ঘ মেয়াদে তাঁদের এ গবেষণা নতুন ধরনের তথ্য প্রক্রিয়াকরণ বা ইনফরমেশন প্রসেসর তৈরির মূল কাঠামো হবে। এটি তখন রোবোটিকসের মতো ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে। বর্তমানে এ ধরনের ক্ষেত্রে তথ্য প্রক্রিয়াকরণ অত্যন্ত জটিল। কাগান আশা করছেন, তাঁরা সিনথেটিক বায়োলজিক্যাল সিস্টেমভিত্তিক পণ্য বাজারে আনতে পারবেন।

অবশ্য মস্তিষ্কের সক্ষমতা ব্যবহার করে পং খেলার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এর আগেও গবেষকেরা এ নিয়ে কাজ করেছেন। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্কের আরেক প্রতিষ্ঠান নিউরালিংক এ ধরনের গবেষণার কথা জানায়। তারা বানরের মস্তিষ্ক–শক্তি ব্যবহার করে পং খেলার ভিডিও সামনে আনে।

Related posts

ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলায় অংশ নিতে পারেন বেলারুশের সেনারাও

News Desk

ভারতে পি কে হালদারকে ফের ১৪ দিনের জেল হেফাজতে

News Desk

ইউক্রেনসহ তিন দেশের প্রার্থিতা অনুমোদনের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত ইইউয়ের

News Desk

Leave a Comment