মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল ম্যাক্রোঁ
দুই দেশের রয়েছে দুইশতাধিক ধরে চলে আসা বন্ধুত্ব। কিন্তু সম্প্রতি সেই সম্পর্কে চিড় ধরেছে। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে কাঁটা হয়ে থাকা বিষয়গুলো দূর করতে এ সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন ইম্যানুয়েল ম্যাক্রোঁ।
কী কী থাকছে ম্যাক্রোঁর এই রাষ্ট্রীয় সফরের আলোচ্যসূচিতে?
সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে বিষয়টি তুলে ধরেছে জার্মানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে।
তার সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনো খোলাখুলি কিছু জানানো হয়নি। তবে গত সপ্তাহে মাক্রোঁ সরকারের এক মুখপাত্র বলেন, এটা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ সফর। এ সফরে অংশীদারিত্বের বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে। তাছাড়া আমরা ফ্রাঙ্কো-জার্মান প্রকল্প ও ইউরোপীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়েও কথা বলবো।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের এই সাক্ষাতে করোনা সংকট ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ফ্রান্সসহ সারা ইউরোপে দেখা দেয়া অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে আলোচনা হবে। সেখানে সংকট নিরসনে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বিষয়ও গুরুত্ব পাবে।
তবে প্যারিসকেন্দ্রিক ইকোল পলিটেকনিকের ট্র্যান্স-আটলান্টিক সম্পর্ক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ইভস বয়ার মনে করেন, বাইডেনের সঙ্গে আলোচনার এ সুযোগে ম্যাক্রোঁ এইউকেইউএস, বা অকাস চুক্তি অবসানের চেষ্টাও খুব জোরালোভাবে করবেন।
তিনি বলেন, ‘ম্যাক্রোঁর এ সফর তথাকথিত অকাস চুক্তি নামের অস্বস্তিতে যবনিকা টানবে, যদিও এর মাধ্যমে বিষয়টি যে বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে তা একেবারেই বলা যাবে না।’
১৮০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে লুজিয়ানা বিক্রি করেছিলেন নেপোলিয়ন বোনাপার্টে। সেই যে বন্ধুত্বের শুরু, গত বছর পর্যন্ত সেই সম্পর্ক পুরোপুরি অটুট ছিল।
কিন্তু ২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া ত্রিপাক্ষিক নিরাপত্তা চুক্তি অকাস স্বাক্ষর করলে ফ্রান্স-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে চিড় ধরে। কারণ, অকাস চুক্তিতে বলা হয়, পারমাণবিক শক্তি চালিত সাবমেরিন তৈরি এবং মোতায়েনের বিষয়ে অস্ট্রেলিয়াকে সার্বিক সহায়তা করবে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। এর ফলে জাহাজ নির্মাণকারী সংস্থা ন্যাভাল গ্রুপের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার একটি চুক্তি কার্যত অকার্যকর হয়ে যায়। কারণ, সেই চুক্তিতে বলা হয়েছিল,অস্ট্রেলিয়াকে পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন তৈরিতে সার্বিক সহায়তা করবে ফ্রান্সের ন্যাভাল গ্রুপ।
নেপোলিয়নের শাসনামল থেকে চলে আসা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে পাশ কাটিয়ে ফ্রান্সের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই যুক্তরাষ্ট্রের এভাবে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনকে ভালোভাবে নিতে পারেনি ফ্রান্স। ফ্রান্সের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জঁ-ইভস লা দ্রিয়ান যুক্তরাষ্ট্রের এমন আচরণকে ‘পেছন থেকে ছুরি মারা’র সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। ইভস বয়ার মনে করেন, মাক্রোঁর এ সফরে যুক্তরাষ্ট্রকে অকাস চুক্তি থেকে সরিয়ে ২১৯ বছরের বন্ধুত্বে ফিরিয়ে আনবে।