মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ফাইল ছবি
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এবারের মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকানরাই নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ পেতে যাচ্ছে বলে ধারণা পাওয়া গেছে। যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার ভারসাম্য কোন দলের দিকে হেলে পড়বে, তা ঠিক করতে মধ্যবর্তী নির্বাচনে গতকাল ভোট দিয়েছেন নাগরিকরা। এবার নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের বড় ধরনের পরাজয় হলে ৮০ বছর বয়সি বাইডেনের ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়ানো উচিত হবে কিনা, দলের ভেতরে সে আলোচনাই সামনে চলে আসতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। গতকালের ভোটে মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের সব ও উচ্চকক্ষ সিনেটের এক তৃতীয়াংশ আসনের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ একাধিক রাজ্যের গভর্নর পদের ভাগ্য নির্ধারিত হবে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
বেশিরভাগ জনমত জরিপের হিসাবে এবারের মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকানরাই নি¤œকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ পেতে যাচ্ছে বলে ধারণা দেয়া হয়েছে। তেমনটা হলে প্রেসিডেন্ট হিসেবে মেয়াদের বাকি দুই বছর ডেমোক্র্যাটদের চাহিদা অনুযায়ী আইন পাসে বাইডেনকে বেশ বেগ পেতে হবে।
প্রেসিডেন্টের মেয়াদের মাঝপথে হওয়া নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলগুলো সাধারণত বিরোধীদের কাছে গড়ে দুই ডজন বা এর কিছু বেশি আসন হারায়। এবারের নির্বাচনেও তার ব্যতিক্রম হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে; বিশেষ করে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, নারীদের গর্ভপাতের অধিকার হারানোর মতো বিষয়গুলো নিয়ে উদ্বেগের এই প্রেক্ষাপটে। তাছাড়া গত বছরের ৬ জানুয়ারিতে ক্যাপিটলে দাঙ্গার ঘটনাও এখনো ভোটারদের মন থেকে মুছে যায়নি।
মধ্যবর্তী নির্বাচনকে সাধারণত মার্কিন প্রেসিডেন্টের নেতৃত্ব বিষয়ক গণভোট হিসেবে দেখা হয়, তাই এটি বাইডেনের জনপ্রিয়তারও একটি পরীক্ষা। বিবিসির মার্কিন অংশীদার সিবিএস নিউজের এক হিসাবে দেখা গেছে, মধ্যবর্তী নির্বাচনে লড়া অর্ধেকের বেশি রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পের মতোই ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে সন্দিহান। সেবারের নির্বাচনে বিস্তৃত জালিয়াতি হয়েছিল বলে প্রমাণ ছাড়াই অভিযোগ করে যাচ্ছেন ট্রাম্প।
মধ্যবর্তী নির্বাচনের প্রাক্কালে সাবেক এ প্রেসিডেন্ট রিপাবলিকানদের হয়ে শেষ সমাবেশটি করেছেন ওহাইওতে, সঙ্গে ছিলেন রিপাবলিকান সিনেট প্রার্থী জেডি ভান্স। ২০২৪ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জোরালো ইঙ্গিত দেয়া ট্রাম্প সোমবার বলেছেন, তিনি আগামী ১৫ নভেম্বর ফ্লোরিডার মার-আ-লগো থেকে এক ‘বড়সড় ঘোষণা’ দেবেন।
কংগ্রেসের নিম্নকক্ষের নিয়ন্ত্রণ পেতে ট্রাম্পের দলকে কেবল ৫টি আসনের ভোটের ফল উল্টে দিলেই হবে; আর সিনেটের নিয়ন্ত্রণ নিতে এখন তাদের যত আসন আছে তার চেয়ে মাত্র একটি আসন বেশি লাগবে। নিরপেক্ষ নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর হিসাবে রিপাবলিকানরা এবারের নির্বাচনে ৪৩৫ আসনের প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্র্যাটদের তুলনায় ১৫ থেকে ২৫ আসন বেশি পাবে।
উচ্চকক্ষে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়েরও আভাস দিয়েছেন তারা। অনেক বিশ্লেষকই বলছেন, পেনসিলভেনিয়া, জর্জিয়া, নেভাদা ও আরিজোনার ভোটের ফলের ওপরই সিনেট কাদের নিয়ন্ত্রণে যাবে, তা নির্ধারিত হবে। রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠ নিম্নকক্ষ বাইডেনকে অভিশংসনের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করবে না, এমন কথা বলতেও রাজি হননি দলটির অন্যতম নেতা কেভিন ম্যাককার্থি।
ডেমোক্র্যাটরা যদি সিনেটের দখলও হারায় তাহলে আগামী দুই বছর বাইডেন বিচারক নিয়োগ, এমনকি প্রশাসনে নিজের পছন্দের লোক বসানোর ক্ষমতাও অনেকখানি হারাবেন। ভোটের নির্ধারিত দিন মঙ্গলবার হলেও এরই মধ্যে ৪ কোটি ৩৫ লাখের বেশি মার্কিনি আগাম ভোট দিয়ে দিয়েছেন বলে জানিয়েছে ইউএস ইলেকশনস প্রজেক্ট।