ক্রমেই মস্কোর উপর ইইউর নির্ভরতা কমানোর উদ্যোগ যথেষ্ট গতি পাচ্ছে
কয়লার পর রাশিয়া থেকে পেট্রোলিয়াম আমদানি নিষিদ্ধ করার তোড়জোড় করছে ইইউ। জার্মানি বিকল্প বন্দোবস্তের ব্যবস্থা করায় এমন কঠিন পদক্ষেপের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হচ্ছে। তবে কিছু বাধাও রয়েছে।
ইউক্রেনের উপর হামলার শাস্তি হিসেবে একদিকে রাশিয়ার উপর কড়া নিষেধাজ্ঞা চাপানো, অন্যদিকে সেই রাশিয়া থেকেই তেল ও গ্যাসের জন্য কোটি কোটি ইউরো দাম মিটিয়ে পুতিনের সামরিক যন্ত্র চালু রাখা কতটা ন্যায্য? ইউরোপীয় ইউনিয়ন সংকটের শুরু থেকেই এমন অপ্রিয় প্রশ্নের মুখে পড়ছে। জ্বালানির ক্ষেত্রে জার্মানিসহ একাধিক ইইউ সদস্য দেশ রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল থাকায় এমন ‘অসহায়’ অবস্থায় পড়েছে, এমন যুক্তিও আর গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না। বিশেষ করে পূর্ব ইউরোপের কিছু দেশ স্বেচ্ছায় রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানি বন্ধ করে ব্রাসেলসের উপর চাপ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। খবর ডয়েচে ভেলের।
ইইউ পররাষ্ট্র বিষয়ক কর্মকর্তা জোসেপ বোরেল বলেন, রাশিয়া ইউক্রেনের উপর হামলার মাত্রা বাড়িয়ে চলেছে। ফলে নতুন নিষেধাজ্ঞা ‘অত্যন্ত অপরিহার্য’ হয়ে পড়েছে। তার মতে, ইইউ-কে তার অর্থনৈতিক ও আর্থিক ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে রাশিয়ার কাছ থেকে এর মূল্য আদায় করতে হবে। উল্লেখ্য, ইউক্রেনও রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ করার জন্য ইইউ-র উপর চাপ বাড়াচ্ছে।
এমনই প্রেক্ষাপটে রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানি রাতারাতি বন্ধ করতে না পারলেও ধাপে ধাপে মস্কোর উপর নির্ভরতা কমানোর উদ্যোগ যথেষ্ট গতি পাচ্ছে। প্রথমে কয়লা, তারপর পেট্রোলিয়াম, সবশেষে গ্যাস আমদানি কমানোর পরিকল্পনা নিচ্ছে জার্মানি তথা ইইউ। ইতোমধ্যেই কয়লা আমদানি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এবার রাশিয়ার উপর ষষ্ঠ দফার নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পেট্রোলিয়াম আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা চাপাতে পারে ইইউ। উল্লেখ্য, রাশিয়ার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ পেট্রোলিয়াম ইইউ-তে বিক্রি হয়।
ইইউ কমিশন আগামী বুধবারের মধ্যেই এমন নিষেধাজ্ঞার খসড়া প্রস্তুত করার তোড়জোড় করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন কূটনীতিক একাধিক সংবাদ মাধ্যমের কাছে সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন। তাদের মতে, মূলত জার্মানির অবস্থান বদলের ফলেই এমন কড়া পদক্ষেপের উদ্যোগ নিতে পারছে ইইউ। জার্মানির অর্থনীতি ও জ্বালানি বিষয়ক মন্ত্রী রোব্যার্ট হাবেক রবিবার বলেছেন, জার্মানি ইতোমধ্যেই রাশিয়া থেকে কয়লা, গ্যাস ও তেল আমদানির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমিয়ে এনেছে। তার মতে, সম্মিলিত উদ্যোগ ছাড়া এমন পরিবর্তন সম্ভব হবে না। তবে শিল্পজগত ও সাধারণ ক্রেতারাও বাড়তি চাপ অনুভব করবেন। তা সত্ত্বেও আর রাশিয়ার ব্ল্যাকমেল মেনে নেওয়া যায় না বলে হাবেক মন্তব্য করেন।
রাশিয়া থেকে পেট্রোলিয়াম আমদানি বন্ধ করতে হলে অবশ্য ইইউ-র সব সদস্য দেশকে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জার্মানি মত বদল করলেও হাঙ্গেরি সেই প্রচেষ্টা বানচাল করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ক্রেমলিনের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত সদ্য পুনর্নির্বাচিত সরকার প্রধান ভিক্টর অরবান ভেটো শক্তি প্রয়োগ করতে পারেন। এমন পদক্ষেপ কার্যকর করলে অন্যান্য কিছু দেশ মূল্যস্ফীতি আরও বাড়ার আশঙ্কা করছে। ফলে পেট্রোলিয়ামের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এড়ানোর কোনো ব্যবস্থা ছাড়া এমন দেশের সম্মতি আদায় করাও কঠিন। সোমবার ব্রাসেলসে ইইউ জ্বালানি মন্ত্রীরা এ বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা করবেন।
ডি-ইভূ