ফাইল ছবি
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে রিপাবলিকান পার্টি। এর আগে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ডেমোক্র্যাটিক পার্টি উচ্চকক্ষ সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায় আগামী ২ বছরের জন্য দেশটিতে বিভক্ত সরকারের মঞ্চ প্রস্তুত হলো। একই সঙ্গে স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির ক্ষমতারও অবসান ঘটল। তার জায়গায় প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার হতে পারেন রিপাবলিকান নেতা কেভিন ম্যাককার্থি। খবর- বিবিসির।
মধ্যবর্তী নির্বাচনের ভোট গ্রহণের পর থেকে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে গণনা চলছে। এর মধ্যেই নিম্নকক্ষ হাউসের (হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ) নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় ২১৮টি আসনে রিপাবলিকানরা জয় পেয়েছে বলে বুধবার এডিসন রিসার্চের প্রদর্শিত ফলাফলে দেখা গেছে।
রয়টার্স জানায়, ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের ২৭তম কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্টে জয় পাওয়ার মাধ্যমে রিপাবলিকান পার্টি এ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। গত ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ভোটে সর্বশেষ ফলাফল অনুযায়ী প্রতিনিধি পরিষদের ৪৩৫টি আসনের মধ্যে রিপাবলিকানরা ২১৮ আসনে এবং ডেমোক্র্যাটরা ২১০টি আসনে জয়ী হয়েছে। বাকি ৭ আসনের ফল এখনো ঘোষিত হয়নি।
সিবিএস নিউজ বলছে, রিপাবলিকানরা ২১৮ থেকে ২২৩টি আসনে জয়ী হতে পারে। কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদে খুবই অল্প ব্যবধানে রিপাবলিকান পার্টি জয় পেল। তবে নিম্নকক্ষে ডেমোক্র্যাটদলীয় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মেয়াদের বাকি দুই বছর তার এজেন্ডা বাস্তবায়ন ঠেকানোর জন্য এই সংখ্যাগরিষ্ঠতাই যথেষ্ট।
এর আগে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে ডেমোক্র্যাটরা। তবে রিপাবলিকানরা প্রত্যাশিত ফল পায়নি। নির্বাচনী প্রচারণায় দলটি কংগ্রেসের উভয়কক্ষের নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে বলে দাবি করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা এ লক্ষ্যে সফল হতে পারেনি। সিনেটের নিয়ন্ত্রণ ডেমোক্র্যাটদের হাতেই থাকায় রিপাবলিকানরা তেমন একটা সুবিধা করতে পারবে না।
প্রথমে প্রতিনিধি পরিষদকে আগামী ২ বছরের জন্য একজন নতুন স্পিকার বেছে নিতে হবে। মঙ্গলবার কেভিন ম্যাককার্থিকে নিজেদের নেতা নির্বাচিত করেছে প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান সদস্যরা। আর এর মাধ্যমে তিনি ডেমোক্র্যাট ন্যান্সি পেলোসিকে সরিয়ে স্পিকারের প্রভাবশালী পদটি পাওয়ার দৌড়ে তার ককাসের সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন অর্জন করেছেন।
প্রতিনিধি পরিষদ বিরোধী দল রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেলেও তাতে চিন্তিত নন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। তিনি সরকারি দল, বিরোধী দল সবার সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন। শুধু তাই নয়, রিপাবলিকানদের জয়ে তিনি অভিনন্দনও জানিয়েছেন। কেভিন ম্যাককার্থিকে অভিনন্দন জানিয়ে বাইডেন বলেছেন, আমেরিকান জনগণ চায় আমরা তাদের কল্যাণের জন্য কাজ করি। আমি যে কারো সঙ্গে কাজ করব। রিপাবলিকান বা ডেমোক্র্যাট- যারা আমার সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক, তাদের সঙ্গে কাজ করতে চাই যাতে ভালো কিছু করা যায়।
‘অচলাবস্থা’য় পড়তে পারেন বাইডেন : যুক্তরাষ্ট্রে সদ্যসমাপ্ত মধ্যবর্তী নির্বাচন দেশটিকে ‘অচলাবস্থায়’ ফেলতে পারে। এখন পর্যন্ত প্রাথমিক ফলাফলে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের নিয়ন্ত্রণ প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ডেমোক্র্যাটিক পার্টির হাতে। অন্যদিকে, কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউসের নিয়ন্ত্রণ সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টির হাতে। বাইডেন ও ট্রাম্পের রাজনৈতিক সম্পর্ককে বাংলায় ‘দা-কুমড়া’ সম্পর্ক বলা যায়। গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প নিজের পরাজয় মেনে নেননি। ভোট কারচুপির অভিযোগও তোলেন তিনি। এছাড়া সে সময় নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বাইডেনের হাতে ঐতিহ্য মেনে ক্ষমতা হস্তান্তরও করেননি ট্রাম্প। সে সময় বিশ্ববাসী দেখেছে- উগ্র সমর্থকরা ট্রাম্পকে ‘ক্ষমতায় রাখতে’ ক্যাপিটলে হামলা চালাতেও দ্বিধা করেনি। এখন প্রশ্ন- সেসব পুরনো দিন কি আবার ফিরে আসতে যাচ্ছে?
গত ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত মধ্যবর্তী নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল এখনো আসেনি। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদন অনুসারে, প্রাথমিক ফলাফলে ১০০ আসনের সিনেটে ৫০ আসন পেয়েছে ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটরা। বিরোধী রিপাবলিকানরা পেয়েছে ৪৯ আসন। জর্জিয়াতে রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাট কোনো দলের প্রার্থীই ৫০ শতাংশ ভোট না পাওয়ায় আগামী ৬ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফা (রান অফ) ভোট অনুষ্ঠিত হবে। সেই আসনে রিপাবলিকানরা জিতলে দুদলের আসন হবে সমান সমান। এমন পরিস্থিতিতে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ভোট দিয়ে ডেমোক্র্যাটদের উদ্ধার করতে পারবেন।
তবে প্রতিনিধি পরিষদের চিত্র ভিন্ন। প্রাথমিক ফলাফলে এরই মধ্যে ২১৮ আসন পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করায় নিয়ন্ত্রণ এখন রিপাবলিকানদের হাতে। এমন পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কোনো প্রস্তাব প্রতিনিধি পরিষদে তোলা হলে বিরোধীরা তা আটকে দিতে পারেন। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে রিপাবলিকানরা প্রতিনিধি পরিষদে দাপট দেখালে তাদের পাস করা প্রস্তাব আবার আটকে যেতে পারে সিনেটে।
রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই : সংবিধান অনুসারে, জো বাইডেন ক্ষমতায় থাকছেন আরো ২ বছর তথা, ২০২৪ সালে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পর্যন্ত। বিরোধী রিপাবলিকানরা, বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প চেয়েছিলেন, এই মধ্যবর্তী নির্বাচনেই জনগণকে বাইডেনবিরোধী করে ভোটের বাক্সে বাজিমাত করবেন। তা তিনি পুরোপুরি পারেননি। আবার এটাও বলা যাবে না যে, তিনি ব্যর্থ হয়েছেন।
মধ্যবর্তী নির্বাচনের প্রচারণায় খোদ প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছিলেন যে, কংগ্রেসের ২ কক্ষের একটি হারানোর আশঙ্কা আছে। হয়েছেও তাই। অন্যদিকে, ট্রাম্পও আছেন বেশ খোশ মেজাজে। এরই মধ্যে তিনি আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির হয়ে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে বিরোধী শিবিরে বাস্তবতা হচ্ছে, সেখানে ট্রাম্পবিরোধী বিজয়ী সদস্যদের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। রিপাবলিকানদের এই বিরোধের সুযোগ নিতে পারেন ডেমোক্র্যাটরা। দলমত নির্বিশেষে এখন পর্যন্ত নির্বাচিত সব সদস্যকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। তার এই ‘শুভেচ্ছা বাণী’কে শুভ উদ্যোগ হিসেবে দেখা যেতে পারে। কেননা, বাইডেন জানেন এখন দেশ চালাতে তাকে বিরোধীদের মন জুগিয়ে চলতে হবে।
বিবিসির সংবাদ বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, বহু উপদলে বিভক্ত রিপাবলিকানদের এক করা যাবে এমন নিশ্চয়তা নেই। তবে তারা সম্মিলিতভাবে বাইডেনকে ‘বিপদে ফেলা’র ক্ষমতা রাখেন। এমন সুযোগ এলে তারা তা কাজে লাগানোর চেষ্টা করবেন। প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে রিপাবলিকানরা যেহেতু এখন সরকারের সব কমিটিতে থাকবেন, তাই একথা বলা যায় যে, আগামী দিনগুলোয় দেশ চালাতে ‘অচলাবস্থা’য় পড়তে পারেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।
এমকে