Image default
আন্তর্জাতিক

সবেচেয়ে দামি ওষুধ, এক ডোজের দাম প্রায় ৩৬ কোটি টাকা

রক্ত জমাট বাঁধার বিরল রোগের নতুন চিকিৎসা অনুমোদন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ড্রাগ এডমিনিস্টেশন (এফডিএ)। তবে এই চিকিৎসা পদ্ধতি অত্যন্ত ব্যায়বহুল। বলা হচ্ছে, এ পর্যন্ত বিশ্বে যত ওষুধ এসেছে তার মধ্যে এর দাম সবচেয়ে বেশি। প্রতি ডোজের নাম ৩৫ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা হলো প্রায় ৩৫ কোটি ৭৯ লাখ ৩৭ হাজার ৩০০ টাকার সমান। বিশ্বে আর কোথাও এত দামি ওষুধ নেই। প্রথমে দাম শুনলেই আমাদের মতো দেশের মানুষদের অসুখ এমনিতেই ভাল হয়ে যাওয়ার কথা। আকাশচুম্বী এর দাম। তাও মনে হয় কম বলা হয়। এর চেয়ে বড় কোনো বিশেষণ থাকলে তা এই ওষুধের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায়।

বিজ্ঞাপন
এই ওষুধ নিয়ে খবর দিয়েছে অনলাইন সায়েন্স এলার্ট।
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে দামের দিক থেকে বেশি হলেও এই ওষুধের কার্যকারিতা অনেক ভাল। সেই হিসেবে চিকিৎসায় এটাকে বড় এক অর্জন বলা যেতে পারে, অন্তত যুক্তরাষ্ট্রে। ওষুধটির নাম হেমজেনিক্স। হেমোফিলিয়া বি-এর চিকিৎসায় এটা হলো জিন থেরাপির চিকিৎসা। হেমোফিলিয়া বি হলো একটি বিরল জিনগত অসুখ। এর ফলে শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা কমিয়ে দেয়। সবচেয়ে গুরুত্বর লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে আকস্মিক নিজের থেকেই বা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এবং বার বার রক্তপাত। এমন রক্তপাত হলে তা থামানো কঠিন হয়ে পড়ে।
নারীদের চেয়ে পুরুষের মধ্যে হেমোফিলিয়া বি-এর প্রবণতা অনেক বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে সারাজীবন এই রোগে ভুগছেন প্রায় ৮ হাজার মানুষ। তাদের প্রকৃত সংখ্যা বলা কঠিন। যুক্তরাষ্ট্রে এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে বর্তমানে যে চিকিৎসা দেয়া হয়, তা বিশেষত রক্ত জমাট বাঁধানোর জন্য। কিন্তু এই পদ্ধতিতে আজীবন যদি চিকিৎসা দেয়া হয়, তা হবে অত্যন্ত ব্যায়বহুল।
যাদের এই রোগের লক্ষণগুলো প্রকট তাদেরকে নিয়মিত এই ব্যায়বহুল চিকিৎসা নিতে হয়। একই ওষুধ বার বার ব্যবহারের ফলে তার কার্যকারিতা কমে আসতে পারে।
গবেষকরা হিসাব কষে দেখেছেন একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের সারাজীবন হেমোফিলিয়া বি-এর চিকিৎসায় খরচ হতে পারে দুই কোটি ১০ লাখ ডলার থেকে দুই কোটি ৩০ লাখ ডলার পর্যন্ত। যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় বৃটেন এবং ইউরোপে এই খরচ কিছুটা কম। তা সত্ত্বেও প্রতিজন রোগিকে লাখ লাখ ডলার খরচ করতে হয়। পক্ষান্তরে হেমজেনিক্স হলো মাত্র একবার ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করিয়ে দেয়ার ওষুধ। একবারই এক ডোজ ওষুধ প্রয়োগ করতে হয়। ফলে তাতে অর্থের দিক থেকে লাখো ডলার সাশ্রয় হতে পারে। ভাইরালভিত্তিক একটি ভেক্টরের মাধ্যমে এই ওষুধটি শরীরে প্রবেশ করানো হয়। তারা ডিএনএ সৃষ্টি করে তা লিভার বা যকৃৎ কোষকে টার্গেট করে। এই জেনেটিক তথ্য এরপরে পর্যায়ক্রমে কোষে কোষে ছড়িয়ে পড়ে। এতে শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার একটি প্রোটিন- ফ্যাক্টর নাইন ছড়িয়ে দেয়।
এ ওষুধের কার্যকারিতা এবং নিরাপত্তার বিষয়টি এখন পর্যন্ত দুটি গবেষণায় পরীক্ষা করা হয়েছে। একটি গবেষণায় অংশগ্রহণ করেছেন ৫৪ জন স্বেচ্ছাসেবক। তাদের ছিল মারাত্মক থেকে মাঝারি মাত্রার ভয়াবহ হেমোফিলিয়া বি। গবেষকরা দেখতে পান ফ্যাক্টর-নাইনের ক্রমবর্ধমান সক্রিয়তা। বর্তমানে রোগিদের যে থেরাপি দেয়া হয়, তার প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে আনে। এই জিন থেরাপির চিকিৎসার পর দেখা যায় যেসব রোগির অনিয়ন্ত্রিতভাবে রক্তক্ষরণ হতো, তা শতকরা ৫০ ভাগ কমে গেছে। এ ওষুধের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও আছে। তার মধ্যে আছে মাথাব্যথা, ফ্লুর মতো লক্ষণ এবং লিভারে এনজাইমের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া। যখন চিকিৎসকরা এই চিকিৎসা দেবেন তখন তাদেরকে এসব বিষয়ে অত্যন্ত সতর্ক নজরদারি করতে হবে।
এফডিএর সেন্টার ফর বায়োলজিকস ইভাল্যুয়েশন অ্যান্ড রিসার্স-এর পরিচালক পিটার মার্কস বলেন, হেমোফিলিয়ার চিকিৎসায় জিন থেরাপি দেয়া হচ্ছে কমপক্ষে দুই দশক ধরে। এটা নতুন করে অনুমোদন দেয়ার ফলে এখন হোমোফিলিয়া বি’তে আক্রান্তদের জন্য চিকিৎসার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো।

Related posts

পাকিস্তানের সেনাপ্রধান হচ্ছেন আসিম মুনীর

News Desk

চীনে করোনাভাইরাস: ১ দিনে আক্রান্ত ৩ কোটি ৭০ লাখ

News Desk

পাকিস্তানের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে : ইমরান খান

News Desk

Leave a Comment