আজ ৪ জুলাই, যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস। এবারের স্বাধীনতা দিবসে ‘করোনাভাইরাসকে হারানোর’ উৎসব উদযাপন করবেন দেশটির ৪৬তম প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। হোয়াইট হাউস প্রাঙ্গণে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন হাজারখানেক আমন্ত্রিত অতিথি। অতিথিদের মধ্যে জরুরি ও অপরিহার্য সেবায় সংশ্লিষ্ট কর্মী, সেনাসদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যরাও থাকবেন। গত বছর লকডাউনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে এমন আয়োজনের কথা চিন্তাও করা যেত না।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সাউথ লনে এ অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ন্যাশনাল মলে করা হবে আতশবাজির প্রদর্শনী। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, স্বাধীনতা দিবসে বাইডেন যতই ‘করোনা মুক্তির’ উৎসব করুন না কেন, তার সামনে সংকট ও মাথাব্যথা সৃষ্টি হওয়ার মতো বেশ কিছু বিষয় অপেক্ষমান। তার মধ্যে রয়েছে- জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যু মোকাবিলা, বিভক্ত কংগ্রেস এবং প্রতিশোধপরায়ণ আচরণ করা সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সামলানো ইত্যাদি।
এক বছর আগেও বিশ্বে করোনা মহামারিতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর হার ছিল যুক্তরাষ্ট্রে। তবে বাইডেন ক্ষমতা গ্রহণের পর গত ছয় মাসে দেশটিতে করোনার সংক্রমণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। অর্থনীতির চাকাও হয়েছে সচল। পূর্বসূরি ট্রাম্পের চেয়ে করোনার ব্যাপারে বাইডেনের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ আলাদা। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে মাস্কের ব্যবহার ও টিকাদান কর্মসূচিকে খুব একটা গুরুত্ব দেননি ট্রাম্প। কিন্তু ক্ষমতায় এসেই এ দুই বিষয়ে ব্যাপক জোর দিয়েছেন বাইডেন। বিশেষ করে গণটিকাদান কর্মসূচি অনেকটাই সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে নিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট।
একই সঙ্গে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা পুনরুদ্ধার ও করোনায় সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর সুরক্ষায় ১ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঐতিহাসিক ‘আমেরিকান রেসকিউ প্ল্যান’ কংগ্রেসের অনুমোদনক্রমে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছেন বাইডেন। যদিও এসব পদক্ষেপ এখনও পুরোপুরি গুছিয়ে উঠতে পারেননি তিনি।
করোনা থেকে দেশকে মুক্ত করতে বাইডেনের অন্যতম লক্ষ্য ছিল পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তিদের ৭০ শতাংশকে ৪ জুলাইয়ের মধ্যে করোনার অন্তত এক ডোজ টিকাদানের বিষয়টি নিশ্চিত করা। এই লক্ষ্যমাত্রা পুরোপুরি অর্জিত না হলেও প্রায় কাছাকাছি পৌঁছাতে পেরেছেন তিনি।
সাউথ লনে ‘করোনা মুক্তি’র উৎসব আয়োজন প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি বলেন, ‘আপনি টিকা নিয়ে থাকলে আমরা বলতে চাই যে আপনি নিরাপদ।’
কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে, চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি ক্ষমতাগ্রহণের সময় বাইডেনের সামনে বৈশ্বিক মহামারি ছাড়াও বেশকিছু নজিরবিহীন সমস্যা ছিল।
আমেরিকান ইউনিভার্সিটির ইতিহাসের অধ্যাপক অ্যালান লিচটম্যানের মতে, ১৯৩৩ সালে ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্টের পর বাইডেনই প্রথম প্রেসিডেন্ট, যিনি প্রথম দফা দায়িত্ব নেয়ার সময়ই এত ভয়ঙ্কর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন। তাকে একই সঙ্গে করোনা মহামারি ও অর্থনৈতিক সঙ্কট উভয়কেই মোকাবিলা করতে হবে।