ইসরায়েলের দখলমুক্ত স্বাধীন ফিলিস্তিনের কল্পিত জীবনযাত্রার চিত্র ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে। বিশেষ করে টুইটারে ফিলিস্তিনি ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার সমর্থকরা বিভিন্ন টুইটে স্বাধীন ফিলিস্তিনে তাদের জীবনযাত্রা ও ভ্রমণের কল্পনাকে তুলে এনেছেন।
গত ২১ মে অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজায় টানা ১১ দিন ইসরায়েলি আগ্রাসন শেষে যুদ্ধবিরতির পর পরই স্বাধীন ফিলিস্তিনে কল্পিত জীবনযাত্রার চিত্র নিয়ে টুইট শুরু হয়। হ্যাশট্যাগে ‘একে (ফিলিস্তিনকে) স্বাধীন মনে করে টুইট করুন’ (#TweetLikeItsFree বা #غرد_كانها_حره) লিখে স্বাধীন ফিলিস্তিনে চলাচল, ভ্রমণসহ আরো বিভিন্ন বিষয়ে টুইট করা হচ্ছে।
মানবাধিকার কর্মী আবির খতিব জেরুসালেমের একটি দোকানের ছবি যুক্ত করে গত বৃহস্পতিবার এক টুইটে লিখেন, ‘আমার বৃহস্পতিবারের দৌড় শেষ করে জেরুসালেমে সর্বোত্তম লেমোনেড পান করছি। কাছে থাকলে আমার সাথে যোগ দিন।’
সমাজতত্ত্ববিদ আমরু আলী বৃহস্পতিবার এক টুইটে মিসর, সিরিয়া ও জর্দান থেকে ফিলিস্তিনি শহর হাইফা, আক্রা, জেরুসালেমগামী রেল সার্ভিস ‘প্যালেস্টাইন রেলওয়ের’ একটি পোস্টার শেয়ার করেন। এই টুইটে তিনি লিখেন, ‘অবশেষে এই ট্রেন সার্ভিস আবার শুরু হয়েছে। আমি টিকেট কিনেছি এবং আজ রাতে ফিলিস্তিনের উদ্দেশ্যে কায়রো ছাড়ছি। আমার কাছে দুইটি অতিরিক্ত টিকেট আছে। কেউ কি আসবেন আমার সাথে?
পরে অপর এক টুইটে তিনি ফিলিস্তিনি সমাজবিজ্ঞানী অ্যাডোয়ার্ড সাইদের কবরের ছবি শেয়ার করে তিনি লিখেন, ‘কেউ একজন এডোয়ার্ড সাইদের কবরে একটি চমৎকার নোট রেখে গেছেন। তাতে বলা হয়েছে, ‘এখন এটি স্বাধীন। আপনি কি বিশ্বাস করবেন? আমরা সবাই স্বাধীন। আপানার অবিরাম পরিশ্রম সাফল্যময় সমাপ্তিতে এসেছে। আজকে যদি আপনি তা দেখতে বেঁচে থাকতেন।’
অ্যাডোয়ার্ড সাইদ খ্যাতনামা ফিলিস্তিনি-আমেরিকান সমাজবিজ্ঞানী ছিলেন। পাশ্চাত্যে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে তিনি জোর প্রচারণা চালান। ২০০৩ সালে তার মৃত্যুর পর লেবাননের ব্রুমমানা শহরে তাকে দাফন করা হয়।
টুইটারে ১৯৪৮ সালের ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের বংশধরদের অনেকেই তাদের ফেলে আসা বাড়ির চাবির ছবি শেয়ার করে বাড়িতে ফিরে আসার কথা জানান।
অনেকেই লিখেন, পুরনো চাবিতে মরচে পড়ে যাওয়ায় তাতে আর কাজ করছে না। শেষে তালা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকতে হয়েছে তাদের। অনেক টুইটেই ফিলিস্তিনের বিভিন্ন শহরের বিমানবন্দরের ছবি শেয়ার করে তাতে বিমান অবতরণের কথা জানান। আবার অনেক নেটিজেনই জেরুসালেম, আক্রা, হাইফা, রামাল্লা, নাবলুস, গাজাসহ বিভিন্ন শহরে ঘুরে বেড়ানোর কথা জানান।
টুইটে অনেকেই মসজিদুল আকসাসহ বিভিন্ন মসজিদে নামাজ পড়ার কথা জানান। অনেকেই গাজার সমুদ্র সৈকত ও অন্য দর্শনীয় স্থানে পিকনিক করার কথা টুইটে বলেন।
১৯৪৮ সালের ১৪ মে ফিলিস্তিনের ওপর ব্রিটেনের ম্যান্ডেট শাসন শেষ হওয়ার পর অভিবাসী ইহুদি জনগোষ্ঠী দুই তৃতীয়াংশ ভূমিতে ইহুদিবাদী ইসরায়েল রাষ্ট্র ঘোষণা করে। ইসরায়েলের অধিকৃত ভূখণ্ড থেকে ফিলিস্তিনিদের বিতাড়িত করা হয়। পরে ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে পুরো ফিলিস্তিন দখল করে নেয় ইসরায়েল। ১৯৯৩ সালে অসলো চুক্তির অধীনে স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠায় ইসরায়েল সম্মতি দেয়। কিন্তু ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের দখলদারিত্বের মনোভাবের কারণে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা এখনো সম্ভব হয়নি।
অপরদিকে ফিলিস্তিনিরা এখনো তাদের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
সূত্র : দ্য নিউ আরব