যুক্তরাজ্যের প্রিন্স অ্যান্ড্রুর বিরুদ্ধে এক নাবালিকাকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে করা মামলাটি আদালতের বাইরে নিষ্পত্তি করা হয়েছে। প্রিন্স অ্যান্ড্রু ১ কোটি ৬৩ মার্কিন ডলারে (১৪০ কোটি টাকার বেশি) মামলাটির নিষ্পত্তির করেছেন। এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকে প্রিন্স অ্যান্ড্রুকে তাঁর অবসরজীবন লোকচক্ষুর আড়ালে কাটানোর আহ্বান জানানো হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালতে ওই মামলার বিচারকাজ চলছিল। গত মঙ্গলবার মার্কিন আদালতের নথিপত্রে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ভার্জিনিয়া জিওফ্রে নামের এক নারী যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে অভিযোগ করেছিলেন, ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্য ও ডিউক অব ইয়র্ক প্রিন্স অ্যান্ড্রু ২০০১ সালে তাঁকে তিনবার যৌন নির্যাতন করেন, তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৭ বছর। তবে এ অভিযোগ প্রিন্স অ্যান্ড্রু অস্বীকার করে আসছেন।
জিওফ্রের আইনজীবী বলেন, অ্যান্ড্রুকে অপমান থেকে রক্ষা করতে আদালতের বাইরে দুই পক্ষ নিষ্পত্তিতে পৌঁছেছে। তবে এর বিস্তারিত তিনি কিছু বলেননি।
মার্কিন ধনকুবের জেফরি এপস্টেইন জিওফ্রেকে অ্যান্ড্রুর হাতে তুলে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। প্রিন্স অ্যান্ড্রুর বন্ধু ছিলেন এপস্টেইন। শিশু-কিশোরীদের পাচার ও জোর করে যৌনকাজ করানোর মতো গুরুতর অভিযোগে কারাবাসে থাকা অবস্থায় ‘আত্মহত্যা’ করেন জেফরি এপস্টেইন।
ডেইলি টেলিগ্রাফ সংবাদপত্র জানিয়েছে, অ্যান্ড্রু জিওফ্রেকে ১১৬ কোটি টাকা ও একটি দাতব্য সংস্থাকে ২৪ কোটি টাকা দিতে সম্মত হয়েছেন। তবে তাঁর আইনজীবীরা এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
এদিকে আদালতের বাইরে গিয়ে মামলা নিষ্পত্তিতে অর্থ কোথা থেকে আসবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। টেলিগ্রাফ বলছে, এই অর্থ অ্যান্ড্রুর মা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ব্যক্তিগত সম্পত্তির একটি থেকে আসবে।
প্রিন্স অ্যান্ড্রুকে ঘিরে তৈরি হওয়া কেলেঙ্কারির ঘটনাটি এই বছর রানির প্লাটিনাম জুবিলি আয়োজনকে ছাপিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। এ বছরে রানির সিংহাসনে বসার ৭০ বছর পূর্তি।
প্রিন্স অ্যান্ড্রু প্রয়াত মার্কিন ধনকুবের জেফরি এপস্টেইনের সঙ্গে তাঁর মেলামেশার জন্য অনুশোচনার পাশাপাশি জিউফ্রে এবং অন্য ব্যক্তিদের নিজেদের এবং অন্যদের সাহসিকতার প্রশংসা করেছেন।
তবে যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যমগুলো এত সহজে প্রিন্স অ্যান্ড্রুকে ছাড়ছে না। গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, প্রিন্স অ্যান্ড্রু চিরতরে শেষ হয়ে গেছেন। তাঁকে পুরোপুরি জনসম্মুখ থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। দ্য সান-এর সম্পাদকীয়তে বলা হয়, এ ধরনের জঘন্য অভিযোগ থেকে নাম মুছে ফেলার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ একজন ব্যক্তি প্রাণপণ লড়াই করতেন। এরপর যদি জিততেন, তবে জীবন পুনর্গঠনের চেষ্টা করতেন। কিন্তু তা এখন চিরতরে শেষ হয়ে গেছে। অ্যান্ড্রু এখন শেষ। তাঁকে অবশ্যই জনজীবন থেকে সম্পূর্ণভাবে সরে যেতে হবে এবং অপমানের সঙ্গে তাঁর অবসর জীবন যাপন করতে হবে।