ইউরোপের দেশে দেশে ন্যাটোর বিরুদ্ধে ক্ষোভ
আন্তর্জাতিক

ইউরোপের দেশে দেশে ন্যাটোর বিরুদ্ধে ক্ষোভ

প্রতীকী ছবি

রাশিয়াকে একঘরে করতে গিয়ে নিজ ঘরেই ভাঙন ও গৃহবিবাদের আগুন লেগেছে ইউরোপের দেশে দেশে। শুধু তাই নয়, বিশাল প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও ন্যাটোর নেতারা। জার্মানি, পোলান্ড , ইতালি, গ্রিস, হাঙ্গেরি, লাটভিয়ার পর এবার ফ্রান্সের হাজারো মানুষ তাদের সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নেমেছে। ফ্রান্সের জনগণ শুধু বিক্ষোভ করেই ক্ষান্ত হয়নি, আরো এক ধাপ এগিয়ে তারা ইইউ ও ন্যাটো জোট ত্যাগ করার জন্য সরকারকে চাপ দিয়েছে।

ফ্রান্সের ডানপন্থি দল লেস প্যাট্রিয়টস (দ্য প্যাট্রিয়ট) ‘প্রতিরোধের জাতীয় সভা’ নাম দিয়ে এই বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে। বিক্ষোভকারীরা বড় আকারের প্ল্যাকার্ড নিয়ে আসেন, তাতে লেখা ছিল ‘প্রতিরোধ’। আরো ছিল ব্রেক্সিটের (ইইউ থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়া) আদলে ‘ফ্রেক্সিট’ লেখা প্ল্যাকার্ড।

ন্যাটো ছাড়: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফিলিপটের প্রোফাইল থেকে শেয়ার করা ভিডিওতে দেখা যায়, সমাবেশে জড় হওয়া মানুষ স্লোগান দিচ্ছে ‘চলো ন্যাটো থেকে বেরিয়ে আসি।’ চলমান জ্বালানি সংকটে ফ্রান্সের এই বিক্ষোভ জানান দিয়ে গেল আসন্ন শীত নিয়ে উদ্বিগ্ন সেখানকার মানুষ। সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা পার্লামেন্ট ভবনের কাছে মিছিল করার সময় ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে ক্ষমতাচ্যুত করারও দাবি জানায়। লেস প্যাট্রিয়টসের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্যমতে, নিষেধাজ্ঞা (রাশিয়ার ওপর) কাজ করছে না এবং এর পরিবর্তে ফরাসি জনগণের ক্ষতি হচ্ছে। বর্তমান সংকটের জন্য রাশিয়ার ওপর দেয়া ইইউর নিষেধাজ্ঞাকে দায়ী মনে করছে তারা।

যুদ্ধের প্ররোচনাকারী: বিক্ষোভকারীরা ইউক্রেনের সংঘাতের জন্য রাশিয়ার ওপর ইইউ আরোপিত নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে যুক্ত ন্যাটোকে ‘যুদ্ধের প্ররোচনাকারী’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। সেই সঙ্গে অর্থনৈতিক ব্যাঘাত এবং জ্বালানি ও স্বাস্থ্য বিধিনিষেধের নিন্দা করেছে। চলমান জ্বালনি সংকট মোকাবিলায় ফ্রান্স ক্রমবর্ধমান লড়াই করে যাচ্ছে। তারা বলছেন, চলমান জ্বালনি সংকটের প্রধান কারণ ইইউর নিষেধাজ্ঞা নীতি। গত মাসে, ফরাসি এনার্জি রেগুলেটর সিআরই প্রধান সতর্ক করে বলেছেন, শীতে যদি তীব্র ঠাণ্ডা পড়ে তাহলে জনগণ বিরাট বিদ্যুৎ বিভ্রাটের মুখোমুখি হবে।

ন্যাটো ও ইইউ-এর সঙ্গে সম্পর্কের অবস্থানের আমূল পরিবর্তনের দাবিতে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে বিশাল বিক্ষোভ মিছিলের পর নতুন মাত্রায় আলোচনা হচ্ছে এ দুটির ভবিষ্যৎ।

ফ্রান্স সরকারের ইউটার্ন: জনগণের অব্যাহত বিক্ষোভ ও জ্বালানি সংকটের রুঢ় বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে গতকাল ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাথরিন কলোনা বলেছেন, প্যারিস বিশ্বাস করে যে মস্কোর সঙ্গে আলোচনার জন্য দরজা খোলা রাখা উচিত। সংলাপের চ্যানেলগুলো বন্ধ না রেখে আলোচনার প্রেক্ষিত বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করার বিরোধিতা করে ফ্রান্স ইন্টার রেডিও স্টেশনে তিনি বলেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য একটি চ্যানেল থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিচ্ছিন্ন করে রাখা সবচেয়ে খারাপ। যে কোনো সংকটে সংলাপ ভালো ফলাফল অর্জনে সাহায্য করে। ফরাসি এই শীর্ষ কূটনীতিক জোর দিয়ে বলেন, একটি সময় আসবে যখন সংঘাতের অবসান হবে। এটি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে কিন্তু রাশিয়া সবসময় আমাদের প্রতিবেশী থাকবে।

ইইউতে এবার ইউক্রেনের বিদ্যুৎ বন্ধ: ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, ইইউ দেশগুলোতে গতকাল বিদ্যুৎ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে ইউক্রেন। সোমবার বিদ্যুৎ অবকাঠামোতে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর এই সিদ্ধান্তের তথ্য জানাল কিয়েভ। ইউক্রেনের জ্বালানি মন্ত্রণালয় তাদের ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে বলেছে, থার্মাল জেনারেশন এবং বৈদ্যুতিক সাবস্টেশনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কারণে নিজেদের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্থিতিশীল করতে ১১ অক্টোবর থেকে বিদ্যুৎ রপ্তানি স্থগিত করা হচ্ছে।

হঠাৎই হিংস্রতার রূপ: এক মাসেরও বেশি সময়ের মধ্যে, ইউক্রেনের যুদ্ধ হঠাৎ করে হিংস্র হয়ে উঠল। কামানের যুদ্ধ থেকে বিমান আর মিসাইল যুদ্ধে পরিণত হয়েছে যা শীতকাল পর্যন্ত স্থায়ী হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর পরবর্তী ধাপ পারমাণবিক (নিউক্লিয়ার)। যা ভুলেও কল্পনায় আনতে চায় না বিশ্বের মানুষ। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন রাশিয়ার মিসাইল হামলাকে ‘ঢেউয়ের পর ঢেউ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন ।
যুদ্ধের টার্নিং পয়েন্ট: এ সপ্তাহটি হতে পারে যুদ্ধের টার্নিং পয়েন্ট। জি-৭ নেতাদের (মঙ্গলবারের) জরুরি বৈঠক এবং সপ্তাহান্তে ন্যাটো প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের বৈঠকে মূল আলোচ্যসূচি হতে পারে যুদ্ধের পরবর্তী পদক্ষেপ। মার্কিন কর্মকর্তারা চাইছেন দ্রুত পদক্ষেপ। বাইডেন প্রশাসনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, যুদ্ধের টার্নিং পয়েন্টগুলো সাধারণত বিপজ্জনক হয়।

রুশ নেতারাও কিয়েভে বিমান হামলাকে নিজেদের টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে উল্লেখ করেছেন। রাশিয়ার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের বৈদেশিক বিষয়ক কমিটির প্রধান ভিক্টর বোন্ডারেভ সোমবার এক টেলিগ্রাম পোস্টে লিখেছেন, ক্রেমলিন যেটিকে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ বলেছে তার ‘একটি নতুন পর্বের’ সূচনা ছিল এই হামলা। ইউক্রেনে, আরো ‘সংকল্পবদ্ধ’ পদক্ষেপ হবে।

শেষ পরিণতি: অস্ত্র নিয়ন্ত্রণবিষয়ক স্টেট ডিপার্টমেন্টের সাবেক সিনিয়র কর্মকর্তা এবং ন্যাটোর সাবেক ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল রোজ গোটেমোয়েলার বলেছেন, পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার একটি শেষ পরিণতি। আমি মনে করি আমাদের এই হুমকিগুলোকে খুব, খুব গুরুত্ব সহকারে নিতে হবে। সিআইএ এবং পেন্টাগনের সাবেক একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এলিসা স্লটকিন টুইট করেছেন, এই আক্রমণের মাত্রা বিবেচনা করা জরুরি।

Source link

Related posts

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চান দাউদ ইব্রাহিমের প্রেমিকা

News Desk

সুরক্ষিত থাকতে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ মোদীর

News Desk

রানির ছবির নোটগুলো কী হবে

News Desk

Leave a Comment