Image default
আন্তর্জাতিক

ইরানে সেই ভয়াবহ অভিযানের রোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন সাবেক মোসাদ প্রধান

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে একের পর এক হামলা এবং দেশটির শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসিন ফখরেহ জাদেহকে হত্যার সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করলেন সদ্য প্রাক্তন হওয়া দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রধান ইয়োসি কোহেন। ইসরায়েলি টেলিভিশন চ্যানেল ১২ কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

গত বছরের নভেম্বরে তেহরানের উপকণ্ঠে একটি সড়কে গুপ্তঘাতকের হামলায় নিহত হন তিনি। ওই হামলার জন্য প্রকাশ্যেই ইসরায়েলকে দায়ী করে আসছে ইরান। যদিও ওই মৃত্যুর সঙ্গে মোসাদের সম্পৃক্ত থাকার কথা সরাসরি স্বীকার বা অস্বীকার করেননি সাবেক মোসাদ প্রধান। তবে বলেন, ওই বিজ্ঞানীকে অনেক বছর ধরে ‘টার্গেট’ করা হয়েছিল, কারণ তার বৈজ্ঞানিক জ্ঞান মোসাদের উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছিল।

“যদি কোন ব্যক্তি ইসরায়েলি নাগরিকদের জন্য বিপদের কারণ হয়ে ওঠেন, তাহলে তাকে অবশ্যই থামতে হবে। তবে কেউ যদি পেশা পরিবর্তন করে বা আর ক্ষতি না করে, তাহলে তিনি বেঁচে যেতে পারেন।”

পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ প্রধানের দায়িত্ব পালন করে সদ্য বিদায় নিয়েছেন ইয়োসি কোহেন। তিনিই ইরানে অপারেশন পরিচালনার এই রোমহর্ষক বর্ণনা তুলে ধরলেন। ইরানের পরমাণু আর্কাইভ থেকে কীভাবে নথিপত্র চুরি করা হয়েছিল, সম্প্রতি ওই সাক্ষাৎকারে তারও বিস্তারিত তুলে ধরেন কোহেন। ২০১৮ সালে আর্কাইভে ওই অভিযান চালিয়ে হাজার হাজার নথিপত্র চুরি করে ইসরায়েলে নিয়ে আসা হয়।

বিবিসি বলছে, মোসাদের সাবেক প্রধানদের সাক্ষাৎকার দেওয়া বা নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে গণমাধ্যমের কাছে বক্তব্য দেওয়া নতুন নয়। কিন্তু ইয়োসি কোহেন এমন কিছু মন্তব্য করেছেন যা বিস্ময়কর। প্রথমবারের মতো তিনি প্রায় স্বীকার করে নিয়েছেন, ইরানের ভূগর্ভস্থ পরমাণু কেন্দ্রে নাশকতার পেছনে ইসরায়েল জড়িত রয়েছে। সাক্ষাৎকারে তিনি উল্লেখ করেছেন, এই পেশায় থাকার সময় তার শত শত পাসপোর্ট ছিল। কোহেনের সাক্ষাৎকারের সবচেয়ে রোমহর্ষক অংশ ছিল, যখন তিনি ইরানের পরমাণু আর্কাইভ থেকে চুরির বিস্তারিত জানাতে শুরু করেন।

২০১৮ সালে একটি সংবাদ সম্মেলনে চুরি যাওয়া এসব নথির কথা উল্লেখ করে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছিলেন যে, ইরান একবার গোপনে পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করেছে এবং অস্ত্র তৈরির প্রযুক্তি তাদের আছে। কিন্তু ইরান বরাবরই সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সাক্ষাৎকারে কোহেন বলেন, ইরানে ওই অপারেশনের জন্য প্রস্তুতি নিতে তাদের দুই বছর লেগেছে। সেখানে ২০ জন মোসাদ এজেন্ট অংশ নিয়েছিলেন, যাদের একজনও ইসরায়েলি নাগরিক নন।

তেল আবিবের একটি কমান্ড সেন্টার থেকে ওই অপারেশন নজরদারি করেন মোসাদ প্রধান। এজেন্টরা ওয়্যারহাউসের ভেতরে প্রবেশ করে ৩০টির বেশি সিন্দুক ভাঙে। “যখন সেসব নথিপত্রের ছবি স্ক্রিনে দেখানো হয়, তা ছিল আমাদের জন্য দারুণ রোমাঞ্চকর।” ওই অভিযানে অংশ নেওয়া সবাই বেঁচে ফিরে এসেছেন এবং ভালো আছেন, যদিও তাদের কয়েকজনকে ইরান থেকে বের করে আনা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। এই হাজার হাজার নথিপত্র পাওয়ার কথা ইসরায়েল প্রকাশ্যেই বলে আসছে। কিন্তু কোহেন আরও কিছু অপারেশনে মোসাদের সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত দিয়েছেন, যা দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলি এজেন্টরা করেছে বলে গুঞ্জন ছিল।

সাক্ষাৎকারের শুরুর দিকে ইরানের নাতাঞ্জ পরমাণু কেন্দ্রের বিষয়ে বলেন কোহেন।

ইরান জানিয়েছিল, ২০২০ সালের জুলাই মাসের ওই নাশকতার ঘটনায় নাতাঞ্জ পরমাণু কেন্দ্রের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ অংশে আগুন লাগে। এই বছরের এপ্রিলে নতুন সরঞ্জাম সংযোজনের পরদিনই কর্মকর্তারা জানান, সেখানে আবার নাশকতার ঘটনা ঘটেছে এবং বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সেসব ঘটনায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘পরমাণু সন্ত্রাসের’ অভিযোগ আনে ইরান।

সাক্ষাৎকারে কোহেন বলেন, তিনি ওই পরমাণু স্থাপনা সম্পর্কে এত ভালোভাবে জানেন যে, যেখানে ঘূর্ণমান যে সেন্ট্রিফিউজ রয়েছে, সেখানেও তাকে তিনি নিয়ে যেতে পারবেন। এই সাক্ষাৎকার এমন সময়ে দেওয়া হল যখন ইরানের পরমাণু চুক্তির পুনর্জীবন নিয়ে আলোচনা শুরু হতে যাচ্ছে। তবে অনেক হিসাবনিকাশ করে সাক্ষাৎকারটি দেওয়া হয়েছে এবং ইসরায়েলের সামরিক সেন্সর পার হয়ে এসেছে।

২০১৫ সালে মোসাদের প্রধান হিসেবে ইয়োসি কোহেনকে নিয়োগ দেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনে পড়াশোনা শেষে ১৯৮২ সালে তিনি এই সংস্থায় যোগ দিয়েছিলেন।

Related posts

বিশ্বে প্রথমবারের মতো আলঝেইমার ওষুধের অনুমোদন

News Desk

পার্টিতে নাচ-গান: সমালোচনা বন্ধে মাদক পরীক্ষা ফিনিশ প্রধানমন্ত্রীর

News Desk

টেলর-উইলিয়ামসনকে ছাড়া নতুন যুগ শুরু নিউজিল্যান্ডের

News Desk

Leave a Comment