ইসরায়েলের রাজনৈতিক দলগুলো মিলে যে জোট সরকার গঠনে সম্মত হয়েছে, তাকে ‘বামপন্থি’ সরকার বলে সমালোচনা করে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনঞ্জামিন নেতানিয়াহু মন্তব্য করেছেন, এই সরকার ইসরায়েলের ভবিষ্যতকে বিপদাপন্ন করে তুলবে। প্রস্তাবিত সরকারের বিরুদ্ধে দেশের ডানপন্থিদের একজোট হওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছানোর পর প্রথম প্রতিক্রিয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে এক টুইটে নেতানিয়াহু বলেন, ‘এটি হলো ইসরায়েলবাসীর জন্য শতাব্দীর সবচেয়ে বড় প্রতারণা। এটি একটি বামপন্থি সরকার এবং নিশ্চিতভাবেই অদূর ভবিষ্যতে এর কারণে ইসরায়েলের সার্বভৌমত্ব ও জনগণের জীবন-নিরাপত্তা বিপদাপন্ন হবে।’
‘আমি নেসেটের ডানপন্থি সব সদস্যকে এই সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান স্পষ্ট করার আহ্বান জানাচ্ছি। এই বামপন্থিদের রুখে দিন।’
ইসরায়েলে একটি নতুন সরকার গঠনে চুক্তিতে পৌঁছেছে সেখানকার বিরোধী দলগুলো, যা দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর ১২ বছরের শাসনের সমাপ্তির পথ পরিষ্কার করে দিয়েছে অনেকটাই।
দেশটির আটটি দল মিলে একটি কোয়ালিশন সরকার গঠন করতে সক্ষম হয়েছে। মধ্যপন্থী দল ইয়েশ আতিদ পার্টির নেতা ইয়ার লাপিদ বৃহস্পতিবার এই ঘোষণা দেন।
সেখানে তিনি বলেন, দলগুলোর মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী আগামী সরকারের শুরুর দিকে নাফাতালি বেনেত দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। তারপর ২০২৩ সালের আগস্টে তিনি ইয়েশ আতিদ পার্টির নেতার লাপিদকে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।
ইয়ার লাপিদ ঘোষণা দেওয়ার কিছুক্ষণ পরই এই টুইট করেন নেতানিয়াহু। দলটির অন্যতম জ্যেষ্ঠ নেতা মিকি জোহার বৃহস্পতিবার প্রস্তাবিত নতুন সরকারকে কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘ইসরায়েলের জন্য এটি একটি অন্ধকার দিন। যেসব ডানপন্থী দল নতুন সরকারে গিয়েছে, তাদের লজ্জিত হওয়া উচিত।’
দেশটির সংবিধান বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যদিও ইসরায়েলের রাজনীতিতে বর্তমানে খাদের প্রায় কিনারায় অবস্থান করছেন নেতানিয়াহু, কিন্তু এখনও অনেক কিছু উল্টে যাওয়ার সুযোগ আছে।
কারণ, সংবিধান অনুযায়ী, আইনসভা নেসেটের সদস্যদের ভোটের ওপরই প্রস্তাবিত সরকারের স্বীকৃতি নির্ভর করছে; আর, গত মার্চে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও নেসেটের ১২০ টি আসনের মধ্যে ৩০ টিতে জয়ী হয়েছেন নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক দল লিকুদ পার্টির প্রার্থীরা।
এখন পর্যন্ত যদিও ভোটের দিনক্ষণ ঠিক হয়নি, তবে প্রস্তাবিত সরকারের একাধিক নেতা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহেই এ বিষয়ে নেসেটে ভোট হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
ইসরায়েলের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল লিকুদ পার্টি বরাবরই ডানপন্থি রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত।
এদিকে, গত বৃহস্পতিবারই ইসরায়েলের সদ্য বিদায় নেওয়া প্রেসিডেন্ট রুভেন রিভলিনকে নতুন জোট সরকার সম্পর্কে অবহিত করেছেন ইয়ার লাপিদ। প্রেসিডেন্টকে তিনি জানিয়েছেন, স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী নাফাতালি বেনেত এবং তিনি নিজে এক সাথে সরকার পরিচালনা করবেন এবং ২০২৩ সালের ২৭শে অগাস্ট তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নাফতালি বেনেতের কাছ থেকে ক্ষমতা বুঝে নেবেন।
জবাবে রুভেন রিভলিন যত শিগগির সম্ভব এক আস্থা ভোট আয়োজনের জন্য পার্লামেন্টের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। তবে পার্লামেন্টে এই কোয়ালিশন যদি সমর্থন না পায়, তাহলে ইসরায়েলে দুই বছরের মধ্য পঞ্চমবারের মত নির্বাচন আয়োজনের দরকার হতে পারে।
যে দলগুলো মিলে এই কোয়ালিশন হয়েছে, তার মধ্যে ইসরায়েলের সকল ঘরানার রাজনৈতিক দল রয়েছে। রাজনৈতিক দিক দিয়ে এসব দলের মধ্যে খুব কম বিষয়ে মতের মিল রয়েছে। শুধু একটি বিষয় ছাড়া – আর তা হলো দেশটিতে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে ক্ষমতাচ্যুত করা।
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের করা একাধিক মামলা দেশটির আদালতে বিচারাধীন আছে। গত মার্চে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনেও তিনি চূড়ান্ত সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ব্যর্থ হয়েছেন।
এটি ছিল গত দুই বছরে দেশটিতে চতুর্থ সাধারণ নির্বাচন, যার পর তিনি জোট গঠনের জন্য মিত্র পেতে ব্যর্থ হন।