করোনাভাইরাস মহামারি পাল্টে দিয়েছে বিশ্বের অনেক স্বাভাবিক নিয়মই। মহামারির আগে কারও দেখা হলে সৌজন্যতার কারণে হাত মেলানোর নিয়ম ছিল। কোথাও কোথাও ছিল আলিঙ্গন করারও রীতিও। তবে করোনায় এসব নিয়ম এখন অনেকটাই জাদুঘরে। মহামারির কারণে কারও সঙ্গে দেখা হলে একে অন্যকে কনুই দিয়ে স্পর্শ করাটা যেন এখন ‘নিউ নরমাল’।
এই ‘নিউ নরমাল’ রীতি মেনেই জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মেরকেলের দিকে কনুই এগিয়ে দিয়েছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। কিন্তু সাড়া দেননি মেরকেল। হয়তো জার্মান চ্যান্সেলর বরিস জনসনের কনুই এগিয়ে দেওয়া খেয়াল করেননি। আবার এমনও হতে পারে বিষয়টি খেয়াল করেও ‘কনুই মিলিয়ে’ সৌহার্দ্য প্রকাশে আগ্রহী হননি মেরকেল।
ঘটনাটি ইংল্যান্ডের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় কর্নওয়ালে জি-৭ সম্মেলনের সময় ঘটেছে। তবে অল্প কয়েক মুহূর্তের এই ঘটনাটিই যেন ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রসহ ধনী দেশগুলোর মধ্যকার দুর্বল সম্পর্কের চিত্র সামনে এনেছে বলে মনে করছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ। সোমবার (১৪ জুন) এক প্রতিবেদনে একথা জানায় সংবাদমাধ্যমটি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, (বিশ্ব মঞ্চে) যুক্তরাষ্ট্র এখনও সেভাবে ফিরে আসতে পারেনি। ইউরোপও যেন আগের মতো ঐক্যবদ্ধ নয়। ব্রেক্সিট এখনও সম্পন্ন হয়নি। এর মধ্যেই অনুষ্ঠিত হওয়া জি-৭ সম্মেলনে ঘটেছে অনেক কিছুই। তার মধ্যে কেবল কয়েকটি মুহূর্ত বেরিয়ে এসেছে বাইরে।
গত দুই বছরের মধ্যে এটাই ছিল প্রথম কোনো জি-৭ সম্মেলন। এছাড়া করোনা পরবর্তী সময়ে এই সম্মেলনটাই প্রথম আয়োজিত হয়েছে সশরীরে। এছাড়া ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র চারটি সমস্যা ও সংকট-পীড়িত বছর শেষ করার পরও এটা প্রথম সম্মেলন। সেসময় ইউরোপের দীর্ঘদিনের মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক পৌঁছেছিল তলানিতে। এছাড়া ১৬ বছর ধরে ইউরোপের রক্ষাকর্তা হিসেবে কাজ করা জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মেরকেলেরও এটা ছিল সর্বশেষ সম্মেলন।
নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়া এই সম্মেলন নিয়ে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র নেতাদের উচ্ছ্বসিত থাকার কথাই ছিল। সামনে আসা বেশ কয়েকটা ছবিতে দেখা গেল- মাস্ক পরে থাকা অ্যাঞ্জেলা মেরকেলকে সৌহার্দ্য জানাতে বরিস জনসন কনুই এগিয়ে দিলেও কোনো সাড়াই দিলেন না তিনি। ইউরোপ থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়া অর্থাৎ ব্রেক্সিট নিয়েই ইউরোপের এই ঐক্যে ফাঁটল বা নেতাদের মধ্যে মনোমালিন্য বলেই মনে হচ্ছে।
এমনকি ব্রেক্সিট নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে নতুন করে বিবাদে জড়িয়েছে বরিস জনসনের দেশ। রোববার জি-৭ সম্মেলনের অবসরে ব্রেক্সিট বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে উভয়পক্ষের উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। এ নিয়ে সম্মেলনে উপস্থিত ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গেও উত্তপ্ত বিতর্কে জড়ান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। বিবাদের একপর্যায়ে বরিস জনসন উত্তর-আয়ারল্যান্ডের ব্রেক্সিট ডিভোর্স চুক্তির নির্দিষ্ট অংশ একতরফাভাবে স্থগিতের হুমকি দেন।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যকে আলাদা করার পক্ষে রায় দেয় ব্রিটিশ নাগরিকরা। এরপর থেকেই বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে শুরু হয় উভয়পক্ষের মধ্যে টানাপড়েন। বিশেষ করে ব্রিটেন ও উত্তর আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে সরকারি বাণিজ্য চুক্তিগুলো নিয়ে টানাপোড়েন চলছিল। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে এই টনাপোড়েন এখনও চলছে। করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে সশরীরে আয়োজিত কোনো সম্মেলনের ‘ব্লু প্রিন্ট’ হয়ে থাকা জি-৭ সম্মেলন সেটাই যেন আরও স্পষ্ট করে দিলো।