ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য অন্ধ্র প্রদেশে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন শনাক্ত হয়েছে। নতুন এই ধরনটির নাম দেওয়া হয়েছে এন৪৪০কে। ভারতের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, নতুন শনাক্ত হওয়া এই ধরনটির সংক্রমিত হওয়ার ক্ষমতা প্রচলিত সার্স কোভ ২ ভাইরাসের চেয়ে অন্তত ১৫ গুন বেশি।
ভারতের জীবানুতত্ত্ব বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর সেলুলার অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজি (সিসিএমবি) সম্প্রতি এই তথ্য জানিয়েছে। দেশটির অন্ধ্র, তেলেঙ্গানা, কর্নাটক, কেরল, ছত্তিশগড় ও মাহারাষ্ট্রের কিছু অংশে এই ভাইরাসের নমুনা পাওয়া গেছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে সিসিএমবি।
বিবৃতিতে সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সম্প্রতি অন্ধ্র, তেলেঙ্গানা ও কর্নাটক রাজ্যে করোনার প্রচলিত লক্ষণ জ্বর, শুষ্ক কাশি, গা ব্যথা, গন্ধ ও স্বাদহীনতার পাশাপাশি চোখ ওঠা, গলা শুকিয়ে যাওয়া ও মাথা ধরার মতো নতুন কিছু লক্ষণ দেখা দিয়েছে। গত কিছুদিন ধরে এই কয়েকটি রাজ্যে যারা করোনা টেস্ট করাতে এসেছেন, তাদের কয়েকজনের মধ্যে এই নতুন লক্ষণগুলো দেখতে পান চিকিৎসকরা।
ব্যাপারটি জানতে পেরে এ বিষয়ক অনুসন্ধানে উদ্যোগ নেয় সিসিএমবি। তখনই ভাইরাসের এই নতুন ধরনটি শনাক্ত হয়।
সিসিএমবির গবেষক ও অন্ধ্র মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ পি. সুধাকর ভারতের জাতীয় দৈনিক দ্য হিন্দুকে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের নতুন ধরন এন৪৪০কে খুবই অল্পসময়ের মধ্যে ইনকিউবেশনে (বংশবিস্তার) সক্ষম। পাশাপাশি অত্যন্ত দ্রুতগতিতে একজনের দেহ থেকে অপরের দেহে ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতাও রয়েছে এই ধরনটির।’
তিনি আরো বলেন, ‘করোনায় আক্রান্ত রোগীদের সর্বোচ্চ দুটি স্তর হয়েছে— হাইপোক্সিয়া ও ডিসপোনিয়া। ভাইরাসের প্রচলিত ধরনটিতে আক্রান্ত রোগীদের এই দুই স্তরে পৌঁছাতে সময় লাগত এক সপ্তাহেরও বেশি, কিন্তু শনাক্ত হওয়া নতুন ধরনটিতে আক্রান্ত রোগীরা সংক্রমিত হওয়ার তিন থেকে চারদিনের মাথায়ই সর্বোচ্চ স্তরে চলে যাচ্ছেন।’
সিসিএমবির আরেক গবেষক দিব্যা তেজসোওপতি বলেন, ‘আমাদের হাতে এখনও সম্পূর্ণ তথ্য নেই, তবে ধারণা করা হচ্ছে, ভারতে চলমান করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে যে লাগামহীন সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে, তার অন্যতম কারণ ভাইরাসের নতুন শনাক্ত হওয়া ধরন এন৪৪০কে।’
গত বছর বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ভারতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মোট মোট ২ কোটি ১০ লাখ ৭০ হাজার ৮৫২ জন, মারা গেছেন মোট ২ লাখ ৩০ হাজার ১৫১ জন।
সম্প্রতি করোনায় দৈনিক আক্রান্ত ও মৃত্যুর তালিকায় বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে রেকর্ড করেছে দেশটি। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪ লাখ ৪ লাখ ১২ হাজার ৬১৮ জন, মারা গেছেন ৩ হাজার ৩৮২ জন। আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান বলছে, এর আগে বিশ্বের কোনো দেশ করোনায় একদিনে এত বেশি সংখ্যক আক্রান্ত ও মৃত্যু দেখেনি।
ভারতের সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, গত তিন দিন ধরে দেশের রাজ্যগুলোতে করোনা টেস্টে ‘পজিটিভ’ শনাক্তের হার দেখা গেছে ২৪ দশমিক ৪ শতাংশ। অর্থাৎ, গত তিন দিনে যারা টেস্ট করাতে আসছেন, তাদের প্রায় এক তৃতীয়াংশই শনাক্ত হচ্ছেন ‘করোনা পজিটিভ’হিসেবে।