প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি
** ‘ফলপ্রসূ’ বৈঠক: শেখ হাসিনা ** সম্পর্কের অমৃতকাল: নরেন্দ্র মোদি ** সাত সমঝোতা-চুক্তি সই, পাঁচ প্রকল্প উদ্বোধন **
দৃশ্যমান সাতটি সমঝোতা চুক্তি সইয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার দুই প্রধানমন্ত্রীর ‘হাইভোল্টেজ’ বৈঠক শেষ হয়েছে। ওই বৈঠকের পর বাংলাদেশ ও ভারত নিজেদের মধ্যকার অনেক বিষয় আলোচনার মাধ্যমে সমাধান টেনেছে বলে জানিয়েছেন ভারত সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু আলোচনার মাধ্যমে কি কি সমাধান হয়েছে তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা না দিয়ে তিনি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে ‘প্রতিবেশী কূটনীতির’ রোল মডেল বলেছেন। অপরদিকে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুই দেশের সম্পর্ককে ‘অমৃতকাল’ বলে উল্লেখ করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে প্রথমে একান্ত ও পরে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর তারা দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে এসব মন্তব্য করেন। গত সোমবার চার দিনের সফরে দিল্লি যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ বুধবার তিনি সেখানে একটি বিজনেস সামিটে অংশ নেবেন। প্রসঙ্গত, ২০১৫ সাল থেকে ১২ দফা বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এসব বৈঠক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য মাত্রা যোগ করেছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি তাদের বৈঠকে বাংলাদেশ ভারত সম্পর্কের বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করেছেন। এ সম্পর্ক কিভাবে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় সে বিষয়েও আলোচনা করেন দুই নেতা।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ়ভাবে বলেন, নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। এখানে আমরা এমন কিছু সমঝোতা স্মারক সই করেছি, যাতে উভয় দেশের উন্নয়ন ও কল্যাণ হবে। এমন কিছু বিষয়ে আমরা মতৈক্যে পৌঁছেছি যা উভয় দেশের মানুষের জন্যই কল্যাণকর। আমাদের প্রত্যাশা, শুধু বাংলাদেশ-ভারত নয়; দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ারও কল্যাণ হোক, সমৃদ্ধি হোক। অপরদিকে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আগামী ২৫ বছরের মধ্যে দুই দেশের সম্পর্ক আরো উচ্চতায় যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন। একে তিনি ‘অমৃতকাল’ উল্লেখ করে বলেন, অমৃতকালে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক আরো নতুন উচ্চতায় উঠবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ হলো ভারতের অন্যতম বড় বাণিজ্য সহযোগী। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কিত সব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। শিগগিরই দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা শুরু হবে। সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সম্পদ বজায় রাখার ব্যাপারেও ভারত চেষ্টা করছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বৈঠকের পর নরেন্দ্র মোদি ও শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেও তিস্তা চুক্তি, সীমান্ত-হত্যা নিয়ে একটি কথাও কেউ বললেন না। রাশিয়ার কাছ থেকে সস্তায় তেল পাওয়ার ব্যাপারে কোনো কথাও হলো না। এমনকি সাতটি সমঝোতা হলেও বিশাল বড় কোনো ঘোষণা হলো না। সাধারণত, একজন প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফরের পর প্রাপ্তি নিয়ে আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী হাসিনার শীর্ষ বৈঠকের পর সাতটি সমঝোতা স্মারকের বাইরে প্রাপ্তির তালিকা ঠিক কী সেটা জানানো হয়নি। তবে দুই প্রধানমন্ত্রীই উজ্জীবিতভাবে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন। শেখ হাসিনা তো প্রধানমন্ত্রী মোদিকে মুক্তকণ্ঠে প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, মোদি থাকলে সব সমস্যার সমাধান হবে। শেখ হাসিনা এটাও জানিয়েছেন, মোদি হলেন ভিশনারি নেতা। ভারত ও বাংলাদেশের বন্ধুত্ব ও অংশীদারিত্বের সম্পর্কের জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ধন্যবাদও দিয়েছেন। মোদি জানিয়েছেন, বন্যা সংক্রান্ত রিয়েল টাইম ডেটা বাংলাদেশকে সরবরাহ করা হবে। দীর্ঘ বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের যৌথভাবে সন্ত্রাসী ও মৌলবাদী শক্তির মোকাবিলা করা উচিত- যা দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাসকে আক্রমণ করার হুমকি দেয়।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, এই ধরনের সফরে দুটো দিক থাকে। এরমধ্যে একটি হচ্ছে ধারাবাহিক চুক্তি, অপরটি হচ্ছে দুই নেতার মধ্যে একান্ত আলোচনা। আলোচনায় হয়ত কোনো চুক্তি হয় না। তবে তারা দুই দেশের ভবিষ্যৎ পথচলার বিষয়ে একমত হন। এখন আমাদের দেখতে হবে, দুই দেশ ভবিষ্যতে কিভাবে পথ চলে?
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ভারত সফরে শেখ হাসিনার কথায় আবেগ খুব বেশি ছিল। হিন্দিতেও কথা বলেছেন তিনি। তিনি বলেন, আমি ছয় বছর ভারতে ছিলাম। যখন বাবা ও পরিবারের অন্যদের মারা হয়েছিল, তখন আমাকে ও আমার বোনকে আশ্রয় দিয়েছিল ভারত। দুঃখের সময় ভারত পাশে থেকেছে। ৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ও ভারত পাশে থেকেছে। যার ফলে দুই দেশের মানুষ উপকৃত হয়েছেন। এ কারণে ভারতবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কুশিয়ারাসহ সাত সমঝোতা : কুশিয়ারা নদীর পানিবণ্টন নিয়ে সমঝোতার পাশাপাশি বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণার ক্ষেত্রে সমঝোতা হয়েছে। ভোপালের ন্যাশনাল জুডিশিয়াল একাডেমির সঙ্গে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের সমঝোতা হয়েছে। রেলের কর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং রেলে তথ্যপ্রযুক্তি, মহাকাশ প্রযুক্তি এবং প্রসার ভারতী ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। স্বাক্ষর হওয়া সমঝোতা স্মারকের প্রথমটিই হচ্ছে রহিমপুর হয়ে বাংলাদেশের সিলেটে কুশিয়ারা নদী থেকে সুরমা-কুশিয়ারা প্রকল্পের আওতায় ১৫৩ কিউসেক পানি বণ্টনে সমঝোতা। চুক্তিটিতে বাংলাদেশের পক্ষে সই করেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কবির বিন আনোয়ার এবং ভারতের পক্ষে জলশক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব পঙ্কজ কুমার। এ চুক্তি সম্পর্কে জানতে চাইলে পানি বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত বলেন, সুরমা-কুশিয়ারায় পানি আছে ২ হাজার কিউসেকের ওপরে। বরাকে পানি আছে ৪-৫ হাজার কিউসেকের ওপরে। বণ্টন শব্দটির কথা বললে অর্ধেক পানি পাওয়ার কথা আমাদের। সেটাতো হচ্ছে না। এখানে বণ্টন কথাটি ব্যবহার করার কোনো মানে হয় না। তিনি বলেন, আগে আমাদের জানা দরকার কীভাবে পানি বণ্টন করা হচ্ছে, কারা কোন পদ্ধতিতে বণ্টন করছেন। বরাক নদী দু’ভাগ হয়ে নাম হয়েছে সুরমা-কুশিয়ারা। এ দুটি নদী আবার ভৈরবের কাছে মিলিত হয়ে মেঘনা নামে প্রবাহিত হয়। প্রাকৃতিকভাবে সুরমা ও কুশিয়ারা যখন ভারত হয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে সেখানে ২০-২৫ কিলোমিটার এটি একটি অভিন্ন নদী। অর্থাৎ একপাশে ভারত, অন্যপাশে বাংলাদেশ। এখান থেকে ৫ কিলোমিটার ভেতরে রহিমপুর নামে একটি জায়গা আছে, যেখানে বাংলাদেশ ঠিক করল একটি পাম্প স্টেশন বসাবে- যার মাধ্যমে সেচের জন্য ১৮২ কিউসেক পানি সেচের জন্য ব্যবহার হবে। পানি নেয়ার জন্য বাংলাদেশ যখন খাল কাটতে গেছে, তখন ভারত বাধা দিয়েছে। ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা গুলি পর্যন্ত চালিয়েছে। এখন আবার তারাই বলছে, তোমরা পানি নাও আমরা আপত্তি করব না। এটা কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত আমি ভারতকে বিশ্বাস করি না। তিনি বলেন, সুরমা-কুশিয়ারার দু’প্রান্তে নদী ভাঙছে। এখানে বণ্টনের থেকেও যারা সংশ্লিষ্ট আছেন তাদের উচিত ব্যবস্থাপনায় জোর দেয়া। এ ছাড়া ভারত না হয় আমাদের পানি দিচ্ছে, বিনিময়ে ভারত কী নিচ্ছে এটাও আমাদের জানা উচিত।
এদিকে, এবারের ভারত সফরে তিস্তার পানি চুক্তি বরাবরের মতোই আলাদা করে গুরুত্ব পাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, তিস্তা নিয়ে একটা সমঝোতাপূর্ণ সুফল আসতে পারে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও নিকটতম প্রতিবেশী ভারত। বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক প্রতিবেশী কূটনীতির রোল মডেল হিসেবে পরিচিত। দুই দেশ বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার চেতনায় অনেক অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান করেছে। তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সইসহ সব অমীমাংসিত ইস্যু দ্রুত সমাধানের আশা করা হচ্ছে।
এর আগে হায়দরাবাদ হাউসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ভারতের ‘নেবারহুড ফার্স্ট’ নীতির অধীনে বাংলাদেশ একটি অপরিহার্য অংশীদার। এরপর দুই নেতার মধ্যে বৈঠক হয়।
বৈঠক শেষে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পানি, বাণিজ্য, অর্থনৈতিক সম্পর্ক এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সমস্যা সম্পর্কিত দ্বিপক্ষীয় ইস্যুগুলো নিয়ে সম্পূর্ণ পরিসরে একটি বিস্তৃত এবং ফলপ্রসূ আলোচনা করেছেন। দুই নেতা সন্ত্রাস দমন, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা এবং আন্তঃসীমান্ত অপরাধের ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ নিরাপত্তা সহযোগিতা অব্যাহত রাখার ওপর জোর দিয়েছেন এবং বাংলাদেশে রেলওয়ে অবকাঠামো প্রকল্পগুলোর আপগ্রেডেশনসহ উন্নয়ন অংশীদারিত্ব আরো বাড়াতে সম্মত হয়েছেন। সচিব কোয়াত্রা আরো বলেন, ভারত রোহিঙ্গা ইস্যুতে সচেতন। তাদের আশ্রয় দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভূমিকার বিশ্বব্যাপী প্রশংসা রয়েছে। আমরা আর্থিক সহায়তাও দিয়েছি। ভবিষ্যতে, যা যা সহায়তা প্রয়োজন, ভারত সরকার তা দেবে। ভারত তাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের সমস্ত প্রচেষ্টাকে সমর্থন করবে।
অন্যান্য বিষয় : সাতটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের পাশাপাশি ৫টি প্রকল্পের উদ্বোধন ঘোষণা দেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। এরমধ্যে বাগেরহাটের রামপালে ভারত-বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিটের উদ্বোধন করেছেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি। একই অনুষ্ঠানে উদ্বোধন করা হয়েছে রূপসা রেলসেতুও। গতকাল নয়াদিল্লির হায়দারাবাদ হাউজে দুই সরকার প্রধানের যৌথ বৈঠকের দিন এই প্রকল্প দুটি উদ্বোধন করা হয় বলে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি এক টুইট বার্তায় বলেছেন। যদিও রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের জনসংযোগ কর্মকর্তা আনোয়ারুল আজিম বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেননি। তিনি বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে রামপালের প্রথম ইউনিটের কাজ শেষ হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। একই সঙ্গে তিনি এটাও জানিয়েছেন, রামপালের প্রথম ইউনিটকে জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে সংযোগ করা হয়েছে। কিন্তু উদ্বোধনের ঘোষণা আসেনি। একইসঙ্গে আরো ৪টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন তারা। এগুলো হল-খুলনার রূপসা রেলসেতু, বাংলাদেশ সড়ক ও জনপথ বিভাগের ২৫টি প্যাকেজে সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ ও নির্মাণ সরঞ্জাম এবং যন্ত্রপাতি সরবরাহ, খুলনা দর্শনা রেললাইন সংযোগ প্রকল্প ও পার্বতীপুর-কাউনিয়া মিটারগেজ রেললাইনকে ডুয়েল গেজ লাইন রূপান্তর প্রকল্প। ওই বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুই দেশ অনেক অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান করেছে এবং আমরা আশা করি যে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিসহ সমস্ত অমীমাংসিত সমস্যাগুলি দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাপ্ত হবে।
আনুষ্ঠানিক বৈঠকের আগে একান্তে আলাপ করেন শেখ হাসিনা-নরেন্দ্র মোদি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউজে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা হয় মঙ্গলবার। নিরাপত্তা সহযোগিতা, বিনিয়োগ, বর্ধিত বাণিজ্য সম্পর্ক, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, রোহিঙ্গা সমস্যা, পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, মাদক চোরাচালান ও মানব পাচার প্রতিরোধে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো আলোচনার শীর্ষে স্থান পায়। তবে প্রতিনিধি পর্যায়ে আলোচনা শুরুর আগে দুই প্রধানমন্ত্রী একান্ত আলাপচারিতায় মিলিত হন। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা ও কোভিড-১৯ মহামারি এবং রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে দক্ষিণ এশিয়ার দুই নিকট প্রতিবেশী দেশের শীর্ষ পর্যায়ের এই সফর বিনিময়কে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। সংকট কাটিয়ে উঠতে বর্ধিত সহযোগিতার বিষয়েও আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অমৃতকালে সম্পর্ক আরো নতুন উচ্চতায় উঠবে : ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, অমৃতকালে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক আরো নতুন উচ্চতায় উঠবে। গতকাল দুপুরে নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ২০১৫ সাল থেকে ১২ দফা বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এসব বৈঠক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য মাত্রা যোগ করেছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি তাদের বৈঠকে বাংলাদেশ ভারত সম্পর্কের বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করেছেন। এ সম্পর্ক কিভাবে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় সে বিষয়ে তারা আলোচনা করেছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার ৫৪টি নদী দুই দেশের মানুষের জীবিকার সঙ্গে যুক্ত। আজ আমরা কুশিয়ারা নদীর পানিবণ্টন সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। তিনি বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য দ্রুত বাড়ছে। আমরা আইটি, মহাকাশ এবং পারমাণবিক খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নিয়েও ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আলোচনা চলছে।
এর আগে সকাল সাড়ে ৯টায় মোদিসহ তার মন্ত্রিসভার সদস্যরা রাষ্ট্রপতি ভবনের ফোরকোর্টে রাষ্ট্রীয় রীতিতে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান। এ সময় তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীকে বর্ণাঢ্য মোটর শোভাযাত্রার মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি ভবনের সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। বেলা সাড়ে ১০টায় রাজঘাটে ভারতের জাতিরজনক মহাত্মা গান্ধীকে শ্রদ্ধা জানাতে তার সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা। এরপর তার সম্মানে গানস্যালুট দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী গার্ড অব অনারও পরিদর্শন করেন। পরে বিকেলে শেখ হাসিনা ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জগদীপ ধনখরের সঙ্গেও দেখা করেন।
ডি- এইচএ