রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের দফতর ক্রেমলিন থেকে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠকের বিশেষ কোনো পরিকল্পনা নেই।
সোমবার রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে এক সংবাদ সম্মেলনে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এই কথা জানান।ইউক্রেন সংকটের সমাধানে পুতিন ও বাইডেনের মধ্যে বৈঠকের সম্ভাবনা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এই কথা বলেন।
দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘এখনো পর্যন্ত এই ধরনের কোনো নির্দিষ্ট পরিকল্পনা হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘তবে অবশ্যই আমরা এর সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছি না। যদি রাষ্ট্রপ্রধানরা এটিকে উপযুক্ত মনে করেন, তবে তা করতে পারেন।’
ক্রেমলিন মুখপাত্র সাংবাদিকদের জানান, উত্তেজনা বাড়লেও কূটনৈতিক যোগাযোগ চালু রয়েছে।
তিনি জানান, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই ল্যাভরভ চলতি সপ্তাহেই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টোনি ব্লিনকেনের সাথে সাক্ষাত করবেন।
২০১৪ সালে ইউক্রেনে রুশপন্থী সরকারের পতনের পর রাশিয়া দেশটিতে আগ্রাসন চালিয়ে ক্রিমিয়া অঞ্চলটি দখল করে নেয়। পাশাপাশি মস্কোর পৃষ্ঠপোষকতায় পূর্ব ইউক্রেনে বিপুল অঞ্চল দখল করে নেয় বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহী গোষ্ঠী।
পূর্ব ইউক্রেনে রুশপন্থী বিদ্রোহীরা দুই রাষ্ট্র ‘দনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিক’ ও ‘লুহানস্ক পিপলস রিপালিক’ প্রতিষ্ঠা করে। রাশিয়া ছাড়া আর কোনো দেশ ওই দুই রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়নি।
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে এই সংঘর্ষ বন্ধে ফ্রান্স ও জার্মানির মধ্যস্থতায় ২০১৫ সালে বেলারুশের মিনস্কে ইউক্রেন ও রাশিয়া এক চুক্তি করে।
মিনস্ক চুক্তি অনুযায়ী এই অঞ্চলে দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি, বন্দি বিনিময় ও দোনবাস অঞ্চল থেকে রুশপন্থী বিদ্রোহীদের সরে যাওয়ার বিষয় যুক্ত ছিলো। দোনবাস অঞ্চল থেকে রুশপন্থী বিদ্রোহীরা সরে গেলে ইউক্রেনের ওই অঞ্চলে গণভোটের ব্যবস্থা করবে।
কিন্তু পরস্পরের প্রতি সহিংসতার অভিযোগের জেরে এই চুক্তি আর বাস্তবায়িত হয়নি।
এরই মধ্যে ২০২০ সালে ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বের ন্যাটো সামরিক জোটের ‘ইনহ্যান্সড অপারচুনিটি পার্টনার’ পদ পেলে রাশিয়া ক্ষুব্ধ হয়। নিজ দেশের সীমান্তে ন্যাটোর সম্প্রসারণের শঙ্কায় রাশিয়া ইউক্রেনের যুক্তরাষ্ট্রের এই সামরিক জোটে যোগ দেয়ার বিরোধিতা করছে।
এরই মধ্যে গত বছরের ডিসেম্বরে উক্রেন সীমান্তে রাশিয়ার সৈন্য সমাবেশের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনের পর উত্তেজনা নতুন করে বাড়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় এক লাখ সৈন্য ইউক্রেন সীমান্তে মোতায়েন করেছে মস্কো।
যুক্তরাষ্ট্র দাবি করছে, ইউক্রেনে হামলার জন্যই রাশিয়া ওই সৈন্য সমাবেশ করেছে। কিন্তু রাশিয়া এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, সামরিক বাহিনীর মহড়ার অংশ হিসেবে ওই সৈন্য সমাবেশ করা হয়েছে।
সৈন্য সমাবেশের জেরে ইউক্রেন ও পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে রাশিয়ার সম্পর্কে উত্তেজনা চলছে। উত্তেজনা প্রশমনে বিভিন্ন পন্থায় কূটনৈতিক সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।
সূত্র : ডয়চে ভেলে