করোনা মহামারি মোকাবিলা ও অর্থনৈতিক ধাক্কা সামাল দিতে মন্ত্রিসভায় রদবদল এনেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বুধবার সন্ধ্যায় শপথ নিয়েছেন ভারতের নতুন ৪৩ জন মন্ত্রী। রাষ্ট্রপতি ভবনে তাদের শপথ পড়ানো হয়। এদের মধ্যে নতুন মুখ রয়েছেন ৩৬ জন। অন্যরা পদোন্নতি পায়েছেন। বাদ পড়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন, রবিশঙ্কর প্রসাদের মতো নেতারা। খবর এনডিটিভির।
দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতাগ্রহণের পর প্রথমবার মন্ত্রিসভা সংস্কারের উদ্যোগ নেন নরেন্দ্র মোদি। রদবদলকে কেন্দ্র করে এর আগে স্বাস্থ্য-শিক্ষাসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ১২ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। নতুন মন্ত্রী হওয়াদের মধ্যে রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের চার সাংসদ। এরা হলেন সুভাষ সরকার, নিশীথ প্রামাণিক, জন বার্লা ও শান্তনু ঠাকুর।
এছাড়া শপথ নেয়া অন্য মন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা হলেন- নারায়ণ রানে, সর্বানন্দ সোনোওয়াল, ডা. বীরেন্দ্র কুমার, জয়শ্রী দত্ত এম সিন্দিয়া, রামচন্দ্র প্রসাদ সিং, অশ্বিনী বিশ্বনাও, পশুপতি পরস, কিরেন রিজিজু, রাজকুমার সিং, হারদ্বীপ সিং পুরি, মানসুখ মান্দাভিয়া, ভুপেন্দ্র যাদব, পুরুষোত্তম রুপালা, জি. কিশান রেড্ডি, আওরং শিং ঠাকুর, পঙ্কজ চৌধুরী, অনুপ্রিয়া সিং প্যাটেল, ডা. সত্যপাল সিং বাগাল, রাজিব চন্দ্র শেখর, শুভ্রা কারান্দলাজি, ভানু প্রতাপ সিং ভর্মা, দর্শনা ভিকরম জার্ডোশ, মিনাক্ষী লিখি, অন্নপূর্ণা দেবি, এ. নারায়ণ স্বামী, কুশাল কিশোর, অজয় ভাট, বি. এল. ভার্মা, অজয় কুমার, চৌহান দেবুসিং, কাপিল মেরসাওয়ার পাতিল, প্রতিমা ভৌমিক, ডা. সুবাস সরকার, ডা. ভগবতী কিশোর কারাদ, ডা. রাজকুমার রঞ্জন সিং, ডা. ভারতি প্রবীণ পাবর, বিশ্বওয়ার টিডু, শান্তানু ঠাকুর, ডা. মুঞ্জাপারা মাহেন্দ্রভাই, ডা. এল. মুরুগান।
কোচবিহার থেকে শপথ নিয়েছেন বিজেপি সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক। শপথ নিয়েছেন আলিপুরদুয়ারের সাংসদ জন বার্লা। প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর। মণিপুর থেকে রয়েছেন বিজেপি সাংসদ রাজকুমার রঞ্জন সিংহ। এছাড়া শপথ নিয়েছেন পশ্চিম ত্রিপুরার বিজেপি সাংসদ প্রতিমা ভৌমিক। তিনি ত্রিপুরা থেকে প্রথমবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় জায়গা পেলেন। মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন পঙ্কজ চৌধুরী। উত্তরপ্রদেশ থেকে ছয়বারের সাংসদ হলেও প্রথমবার মন্ত্রিসভায় জায়গা পেলেন পঙ্কজ। অর্থ প্রতিমন্ত্রী থেকে পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন অনুরাগ ঠাকুর।
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী থেকে পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন সেকেন্দ্রাবাদ থেকে প্রথমবার সাংসদ হওয়া জি কিষাণ রেড্ডি। শপথ নিলেন পুরুষোত্তম রুপালা। গুজরাট থেকে দু’বারের রাজ্যসভার সাংসদ পুরুষোত্তম রুপালা। মোদি মন্ত্রিসভায় কৃষি প্রতিমন্ত্রী ছিলেন পুরুষোত্তম।
ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো জানায়, মোদির নতুন মন্ত্রিসভা হয়েছে ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, অঞ্চল, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতায় ভারসাম্যের ভিত্তিতে। নতুন মন্ত্রীদের মধ্যে ১৪ জনের বয়স ৫০ বছরের নিচে। নতুন সদস্যদের মধ্যে অন্তত চারজন বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং ১৮ জনের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা রয়েছে।
এছাড়া ভিন্ন ভিন্ন পেশাজীবীদের উপযুক্ত সংমিশ্রণে হয়েছে এবারের মন্ত্রিসভা। যেখানে অন্তত ১৩ জন আইনজীবী, ছয়জন চিকিৎসক, পাঁচজন প্রকৌশলী, সাতজন সরকারি চাকরিজীবী স্থান পেয়েছেন। এছাড়া সাতজনের বিভিন্ন গবেষণায় ডিগ্রি এবং অন্তত তিনজনের ব্যবসায়িক ডিগ্রি রয়েছে। নয়টি রাজ্য থেকে উঠে আসা ১১ জন নারী মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন।
মোদির নতুন মন্ত্রিসভায় রেকর্ড ১২ জন বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর নেতা ঠাঁই পেয়েছেন। বিহার, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, পশ্চিমবঙ্গ, কর্ণাটক, রাজস্থান ও তামিলনাড়ু থেকে মন্ত্রী হয়েছেন। এছাড়া ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মধ্য থেকে হয়েছেন তিনজন মন্ত্রী। নতুন মন্ত্রিসভার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে ছিলেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ।