রানি এলিজাবেথ। ফাইল ছবি
ব্রিটেনের রানী হিসেবে দীর্ঘ সাত দশকেরও বেশি সময় বিশ্বমঞ্চে সুপরিচিত মুখ ছিলেন দ্বিতীয় এলিজাবেথ। এ সময়ে রাজনৈতিক অনেক উত্থান-পতনের সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তিতে নানা পরিবর্তনের সাক্ষীও ছিলেন তিনি। নতুন প্রযুক্তিতে অবজ্ঞা নয়, বরং স্বাগত জানাতেই উৎসাহী ছিলেন এ মহারানী। ১৯৫৭ সালে টেলিভিশনে প্রথমবার রানীর বড়দিনের শুভেচ্ছাবার্তা সম্প্রচার হয়। বহু লোক তার শুভেচ্ছা বার্তা টেলিভিশনে দেখতে পায় এবং এর মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে তার সংযোগ সুদৃঢ় হয়। কয়েক দশক ধরে এতে আরো অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। যেমন ফ্লাই-অন-দ্য-ওয়াল ডকুমেন্টারি তৈরিতে সহযোগিতার পাশাপাশি বাকিংহাম প্যালেসের জন্য ওয়েবসাইট তৈরিতেও তার সমর্থন ছিল- নতুন প্রযুক্তিকে স্বাগত জানানোর এ প্রয়াসের সূচনা প্রায় ৬৫ বছর আগে বড়দিনের শুভেচ্ছা বার্তা সম্প্রচারের মাধ্যমে। তখন রানী বলেছিলেন, আজকের দিনটি আরেকটি মাইলফলক। আজ বড়দিনের এ উৎসবের আমেজে আপনারা ঘরে বসেই আমাকে দেখতে পাচ্ছেন। টেলিভিশনই এটি সম্ভব করেছে। আমিও সপরিবারে প্রায়ই টেলিভিশন দেখি। আমি কল্পনায় দেখতে পাচ্ছি, আপনারাও আমাদের মতো টেলিভিশনের সামনে জড়ো হয়েছেন। আমি খুব আশাবাদী, এ নতুন যোগাযোগমাধ্যম আমার বড়দিনের শুভেচ্ছা বার্তাটি আরো ব্যক্তিগত ও স্পষ্ট করে তুলবে।
‘রয়্যাল ফ্যামিলি’ নামে একটি ডকুমেন্টারির সম্প্রচারমাধ্যম হিসেবে টেলিভিশনের বৈশ্বিক জনপ্রিয়তা এনে দেয়। বিবিসি-আইটিভির যৌথ প্রযোজনায় ১৯৬৯ সালের জুনে সম্প্রচার হয়েছিল তথ্যচিত্রটি। এটি দর্শকদের কাছে রানী ও তার রাজপরিবারের অন্তরঙ্গ জীবন তুলে ধরে। ধারণা করা হয়, অনুষ্ঠানটি বিশ্বব্যাপী ৩৫ কোটি মানুষ দেখেছিল।
রয়টার্স ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব জার্নালিজমের সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট নিক নিউম্যান জানান, রানীর কাছে জনগণের প্রত্যাশা ছিল ব্যাপক এবং জনগণের প্রত্যাশা মাঝে মাঝে রানীর সার্বভৌমত্বকেও ছাড়িয়ে যেত, বিশেষভাবে প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যুর পর। তা সত্ত্বেও রানী দেশ ও রাজপ্রাসাদের মাঝে হঠাৎ তৈরি হওয়া দূরত্ব কমিয়ে আনেন জাতীয় সম্প্রচারমাধ্যম টেলিভিশনে ফেরার মাধ্যমে। নিউম্যান বলেন, ডায়ানার মৃত্যুকে ঘিরে অনেক পরিবর্তন এসেছিল। এজন্য রানীকে সংগ্রাম করতে হয়েছে।
ইংল্যান্ডের প্রথম রাজকীয় ওয়েবসাইট চালু করা হয় ১৯৯৭ সালে এবং তখন থেকে বেশ কয়েকবার নবায়নের মধ্য দিয়ে গিয়েছে। ২০০৯ সালে ওয়েবসাইটটি নতুন করে উন্মোচনের সময় উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্ল্ডওয়াইড ওয়েবের উদ্ভাবক স্যার টিম বার্নার্স-লি। দ্য রয়্যাল ফ্যামিলি নামে টুইটার অ্যাকাউন্টটিও একই বছর হাজির হয়েছিল। তার দুই বছর পরে একটি অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেল চালু করা হয় এবং একই ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালে ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। তরুণ-তরুণীদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও অফিশিয়াল টিকটক অ্যাকাউন্ট ছিল না রাজপরিবারের। লকডাউনের সময়ে রানী জুমের মতো ভিডিও কনফারেন্স অ্যাপের মাধ্যমে বিভিন্ন কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন। এর মধ্যে একটি হচ্ছে হাসপাতালের সেবিকাদের সঙ্গে একটি জুম কনফারেন্সে অংশগ্রহণ। ওই সময়ে ফ্রন্টলাইন কর্মীদের সঙ্গে রানীর এ সংলাপ খুবই ইতিবাচক হিসেবে দেখা হয়েছিল। রানীর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় বিভিন্ন ছবি ও ক্লিপের মাধ্যমে তাকে স্মরণ করতে দেখা যায় ভক্ত-অনুরাগীদের।