তীব্র গতিতে ধেয়ে আসা চীনা রকেটের ধ্বংসাবশেষ বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করবে রোববার সকালে অথবা শনিবার শেষরাতের দিকে। এরপর সেটি আছড়ে পড়বে পৃথিবীর কোনো একটি জায়গায়। ১৮ টন ওজনের এই রকেটের টুকরোটি হতে চলেছে গত কয়েক দশকের মধ্যে বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করা সবচেয়ে ভারী মহাকাশ বর্জ্য।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুক্রবার দাবি করেছে, ধ্বংসাবশেষের বেশিরভাগ অংশই বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের পর পুড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে এবং যেটুকু পৃথিবীতে পড়বে, তাতেও ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা একেবারেই কম।
গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা চীনা রকেটের ধ্বংসাবশেষের গতিপথ পর্যবেক্ষণ করছে। তবে সেটিকে গুলি করে আকাশেই ধ্বংস করার কোনো পরিকল্পনা আপাতত নেই।
শুক্রবার এক টুইটে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারোস্পেস করপোরেশন জানিয়েছে, তাদের সেন্টার ফর অরবিটাল রিএন্ট্রি এবং ডেব্রিস স্টাডিজ (সিওআরডিএস)-এর সবশেষ অনুমান অনুসারে রোববার গ্রিনিচ মিন টাইম ০৪:১৯ মিনিটের (বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টা ১৯ মিনিট) আট ঘণ্টা আগে বা আট ঘণ্টা পরে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করবে চীনের ‘লং মার্চ ৫বি’ রকেটের ধ্বংসাবশেষ।
সিওআরডিএস’র অনুমানে রকেটটি পুনঃপ্রবেশের সম্ভাব্য অঞ্চল হিসেবে নিউজিল্যান্ডের নর্থ আইল্যান্ডের আশপাশের কথা বলা হয়েছে। অবশ্য পৃথিবীতে প্রবেশপথের যেকোনো জায়গায় সেটি আছড়ে পড়তে পারে বলেও জানিয়েছে তারা।
মহাকাশে নতুন একটি স্পেস স্টেশন বানাচ্ছে চীন। এর গুরুত্বপূর্ণ অংশ তিয়ানহে মডিউল নিয়ে গত ২৯ এপ্রিল হাইনান দ্বীপের ওয়েনচ্যাং স্পেস সেন্টার থেকে রওয়ানা দেয় ‘লং মার্চ ৫বি’ নামের ওই রকেট। মহাকাশ স্টেশন তৈরির জন্য কক্ষপথে ১১টি মিশন পরিচালনা করবে চীন। এর প্রথমটিতেই তিয়ানহে মডিউল পাঠানো হয়েছিল।
কিন্তু ভূপৃষ্ঠ থেকে আনুমানিক ১৬০ থেকে ৩৭৫ কিলোমটার ওপরে গিয়েই রকেটটির প্রধান অংশ (সেগমেন্ট) দ্রুত নিচের দিকে নেমে আসতে শুরু করে।
লং মার্চ ৫বি’র এই ধ্বংসাবশেষ পৃথিবীতে আছড়ে পড়ার সময় মারাত্মক বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কাপ্রকাশ করেছেন অনেকে। এ ঘটনায় চীনের অবহেলা দায়ী বলেও দাবি করেছেন কেউ কেউ।
হার্ভার্ড-ভিত্তিক জ্যোতির্বিজ্ঞানী জনাথন ম্যাকডোয়েল রয়টার্সকে বলেছেন, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের পর রকেটের ধ্বংসাবশেষের পুরোটা পুড়ে না গিয়ে কিছু অংশ ভূমিতে আঘাত করতে পারে। এমনকি সেটি আবাসিক এলাকায়ও পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এর আগে গত বছর আরেকটি লং মার্চ ৫বি রকেটের ধ্বংসাবশেষ অনিয়ন্ত্রিতভাবে বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করেছিল এবং তার কিছু অংশ পশ্চিম আফ্রিকার দেশ আইভরি কোস্টের একটি আবাসিক এলাকায় আছড়ে পড়ে। অবশ্য ওই ঘটনায় কেউ হতাহত হননি বলে জানা যায়।