চুল ঝরা বা টাক পড়া পুরুষদের একটি সাধারণ সমস্যা, যা প্রায়ই ৩০-৩৫ বছরের পর থেকেই শুরু হতে পারে। আমাদের সকলেরই চুলকে নিয়ে একটি উদ্বেগ থাকে কারণ এটি চেহারার সৌন্দর্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চলুন জেনে নিই, পুরুষদের টাক পড়ার কারণ এবং এটি ঠেকানোর কিছু কার্যকর উপায়।
কেন টাক পড়ে?
ডাঃ পিটার উইসের মতে, টাক পড়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো ডিএইচটি (DHT) হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি। ডিএইচটি বা ডাই হাইড্রো টেস্টোস্টেরন একটি পুরুষ যৌন হরমোন, যা অ্যান্ড্রোজেন নামেও পরিচিত। অ্যান্ড্রোজেনের প্রধান কাজ পুরুষের গৌণ যৌন বৈশিষ্ট্যগুলো বিকাশে সহায়তা করা এবং শরীরের চুল বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা। তবে অতিরিক্ত ডিএইচটি হরমোন মাথার চুলকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, যা টাকের সমস্যা তৈরি করে।
ডিএইচটির উচ্চমাত্রা থাকলে পুরুষের মুখ ও শরীরের চুলের পরিমাণ বেড়ে যায়, কিন্তু এটি মাথার চুলকে দুর্বল করে ফেলে। অন্যদিকে, নিম্ন ডিএইচটি মাত্রা পুরুষের যৌন অঙ্গের বিকাশে বাধা দিতে পারে। তাই, এটি ভারসাম্যে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
টাক পড়ার অন্যান্য কারণ
কেবল ডিএইচটি বৃদ্ধি নয়, আরও কিছু কারণ রয়েছে যেগুলি পুরুষদের টাক পড়ার সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে:
বংশগত কারণ: বংশগত প্রভাবও টাক পড়ার অন্যতম কারণ। যদি পরিবারের পুরুষ সদস্যদের মধ্যে টাক পড়ার প্রবণতা থাকে, তাহলে তা পরবর্তী প্রজন্মেও প্রভাব ফেলতে পারে।
পুষ্টির অভাব: চুলের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং মিনারেলের অভাবে চুল দুর্বল হয়ে পড়ে এবং অকালেই ঝরে যেতে শুরু করে। সঠিক পুষ্টি না পেলে টাক পড়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
কীভাবে টাক পড়া ঠেকাবেন?
ডিএইচটি নিয়ন্ত্রণ এবং অন্যান্য পদক্ষেপের মাধ্যমে টাক পড়া কিছুটা হলেও প্রতিরোধ করা যায়। এখানে কিছু কার্যকর পরামর্শ দেওয়া হলো:
১) ডিএইচটি নিয়ন্ত্রণে ওষুধ
চিকিৎসকের পরামর্শে ডিএইচটি ব্লকিং ওষুধ গ্রহণ করলে চুল পড়ার গতি কিছুটা কমানো সম্ভব। তবে একবার টাক পড়া শুরু হলে এটি সম্পূর্ণরূপে থামানো কঠিন। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডিএইচটি নিয়ন্ত্রণে ওষুধ বা থেরাপি নেওয়া যেতে পারে।
২) ডায়েটে পরিবর্তন আনা
ডিএইচটি নিয়ন্ত্রণের জন্য খাদ্যতালিকায় কিছু উপকারী উপাদান যোগ করা যেতে পারে, যেমন:
ভিটামিন বি: এটি চুলের জন্য উপকারী এবং ডিএইচটি নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক।
কুমড়োর বীজ: ডিএইচটি হ্রাস করতে কার্যকর, যা টাক পড়ার গতি কমাতে সহায়তা করে।
গ্রিন টি: এতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ডিএইচটির মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
ক্যাফেইন: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যাফেইন চুলের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে এবং ডিএইচটি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
৩) ডিএইচটি ব্লকিং শ্যাম্পু
বর্তমানে বাজারে অনেক ধরনের ডিএইচটি ব্লকিং শ্যাম্পু পাওয়া যায়। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এই ধরনের পণ্য ব্যবহার না করাই উত্তম। অনেক পণ্য সাময়িকভাবে উপকার দেয়, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে ত্বকের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলতে পারে।
৪) পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস
পুষ্টিকর খাবার এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস টাক পড়ার সমস্যা থেকে রক্ষা করতে পারে। দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় ফল, শাকসবজি এবং প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার যোগ করে চুলের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাওয়া সম্ভব।
সবশেষে
পুরুষদের টাক পড়ার সমস্যা কমাতে প্রাথমিকভাবে ডিএইচটি হরমোন নিয়ন্ত্রণ এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। বংশগত কারণ বা ডিএইচটি বৃদ্ধি ছাড়াও পুষ্টির অভাব এবং জীবনযাত্রার প্রভাবেও টাকের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করুন এবং চুলের প্রতি বিশেষ যত্ন নিন।