অনেকেই বিছানায় যান নির্ধারিত সময়ে, কিন্তু ঘুম আসতে দেরি হয়। ফলে রাতের অনেকটা সময় পার হয়ে যায় জেগে থাকতে থাকতে। যাঁরা এ সমস্যায় ভোগেন, তাঁদের অনেকেই ঘুমের জন্য ওষুধের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। তবে ঘুমের ওষুধের প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরশীলতাও শরীরের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীরের নানা রকম ক্ষতি হতে পারে। নিচে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো:
১. উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বৃদ্ধি
যথেষ্ট ঘুম না হলে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশনের ঝুঁকি বেড়ে যায়। নিয়মিত কম ঘুমালে শরীরের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়, যা রক্তচাপ বৃদ্ধি করে। ফলে হৃদযন্ত্র ও রক্তনালী সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না এবং দীর্ঘমেয়াদে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়।
২. হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়
ঘুমের সময় হৃদপিণ্ড এবং রক্তনালী বিশ্রাম নেয়। কিন্তু ঘুম কম হলে এই বিশ্রামের সুযোগ কমে যায়, যা কার্ডিওভাসকুলার সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়। দীর্ঘদিন ঘুমের অভাবে হার্ট অ্যাটাক বা অন্যান্য হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
৩. ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি
নিয়মিত কম ঘুম শরীরে ইনসুলিনের কার্যকারিতা নষ্ট করে। এতে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে বাধা সৃষ্টি হয়। এ কারণে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়
ঘুমের মাধ্যমে শরীর নিজেকে পুনরুজ্জীবিত করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ঘুমের অভাবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার কার্যকারিতা কমে যায়। ফলে নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
৫. মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি
মস্তিষ্কে ওরেক্সিন নামক নিউরোট্রান্সমিটার আছে, যা মস্তিষ্ককে সচল রাখে। কম ঘুমের ফলে ওরেক্সিন উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয়। এতে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যায়, বিষণ্ণতা, স্মৃতিভ্রংশ এবং হ্যালুসিনেশনের মতো সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
৬. হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে
ঘুমের অভাবে পাচনতন্ত্র সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। ফলে খাবার হজমে সহায়ক পাচক রসের নিঃসরণে বাধা সৃষ্টি হয়। এতে বদহজম, গ্যাস্ট্রিকসহ নানা ধরনের হজমের সমস্যা দেখা দেয়।
পর্যাপ্ত ঘুমের গুরুত্ব
শরীর সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখতে প্রতিদিন অন্তত ৬-৭ ঘণ্টা ঘুমানো অত্যন্ত জরুরি। যদি নিয়মিত ঘুমের সমস্যা হয়, তাহলে ইচ্ছেমতো ওষুধ সেবন না করে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সঠিক পরিমাণে ঘুম শরীর ও মনের সুস্থতার জন্য অপরিহার্য।
সতর্ক হোন এবং সঠিক ঘুম নিশ্চিত করুন, কারণ সুস্থ জীবনের জন্য ঘুমই এক গুরুত্বপূর্ণ চাবিকাঠি।