শীতকালে ত্বকের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় ত্বকে শুষ্কতা, অ্যালার্জি, রোদে পোড়া দাগসহ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কারণ শীতের শুষ্ক আবহাওয়া ত্বক থেকে আর্দ্রতা শুষে নেয়, যা ত্বকের ওপরের স্তরে শুষ্কতার সৃষ্টি করে। এই সমস্যাগুলোর প্রতিটি সহজ কিছু নিয়ম মেনে সমাধান করা যায়।
১. ত্বকের শুষ্কতা এবং তার সমাধান
শীতে সবচেয়ে সাধারণ সমস্যা হল ত্বকের শুষ্কতা। এর ফলে হাত-পা, ঠোঁট ফাটা বা চামড়া ওঠার মতো সমস্যা দেখা দেয়। শুষ্ক ত্বক আর্দ্র রাখার জন্য নিচের নিয়মগুলো মেনে চলুন:
-
- প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন।
- ভারী ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন, বিশেষ করে শুষ্ক ত্বকের জন্য। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য হালকা ময়েশ্চারাইজার বেছে নিন।
- জলপাই তেল, গোলাপজল ও গ্লিসারিন সমপরিমাণে মিশিয়ে স্প্রে বোতলে ভরে সঙ্গে রাখুন। ত্বক শুকিয়ে গেলে এই মিশ্রণ স্প্রে করতে পারেন।
- নিয়মিত মুখ পরিষ্কার করুন এবং ত্বককে আর্দ্র রাখতে ক্রিমযুক্ত সাবান বা ফেসওয়াশ ব্যবহার করুন।
২. রোদে পোড়া ত্বক এবং তার সমাধান
শীতকালে রোদে বসা আরামদায়ক হলেও দীর্ঘক্ষণ রোদে থাকলে ত্বক পুড়ে যেতে পারে। সূর্যের আলট্রাভায়োলেট রশ্মি ত্বকের জন্য ক্ষতিকর।
প্রতিরোধ ও সমাধান:
-
- বাইরে যাওয়ার আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
- রোদে পোড়া ত্বকের যত্নে ডাবের পানি ব্যবহার করুন। এটি সরাসরি ত্বকে লাগানো যেতে পারে বা বরফ কিউব তৈরি করে লাগানো যায়।
- ডাবের পানি, বেসন ও মধু মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে ত্বকে লাগান। ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
- অসম ত্বকের জন্য আলুর রস, বেসন, মধু ও দুধের মিশ্রণ ব্যবহার করুন। তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে দুধের বদলে টক দই ব্যবহার করতে পারেন।
৩. ত্বকের অ্যালার্জি এবং এর সমাধান
শীতকালে সোরিয়াসিস, অ্যাকজিমা, দাদ এবং র্যাশের মতো অ্যালার্জির সমস্যা বৃদ্ধি পায়। এই সমস্যাগুলো শুষ্কতার কারণে আরও বাড়ে।
সমাধান:
- শীতের সময় নিয়মিত ভিটামিন ই, ডি এবং সি গ্রহণ করুন। খাবারের মাধ্যমে যদি না হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শে সাপ্লিমেন্ট খেতে পারেন।
- র্যাশের জন্য জলপাই তেল ও সামান্য পানি মিশিয়ে ত্বকে লাগান।
- সোরিয়াসিসের জন্য এক বালতি পানিতে এক চা-চামচ ফিটকিরি ও গোলাপজল মিশিয়ে গোসল করতে পারেন।
- ত্বকের আলগা স্তরের জন্য ভ্যাসলিন ব্যবহার করুন এবং এটি ত্বকে আরও কার্যকর করতে সেলোফিন পেপার দিয়ে মুড়িয়ে রাখতে পারেন।
৪. মৃত কোষের সমস্যা এবং সমাধান
শীতে ত্বকে মৃত কোষ জমা হয়, যা ত্বকের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা নষ্ট করে।
সমাধান:
- সপ্তাহে একবার স্ক্রাব ব্যবহার করুন। তবে স্ক্রাবার ত্বকের সঙ্গে মানিয়ে যায় কি না, তা নিশ্চিত করতে রূপবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
- স্ক্রাব করার পর অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
৫. ঠোঁট এবং পা ফাটার সমাধান
শীতকালে ঠোঁট ফেটে রক্ত বের হওয়া বা পা ফাটার সমস্যা প্রায়ই দেখা যায়।
সমাধান:
- ঠোঁটের শুষ্কতা দূর করতে গ্লিসারিন ব্যবহার করুন।
- পা ফাটার জন্য ভ্যাসলিন লাগিয়ে সেলোফিন পেপার দিয়ে মুড়িয়ে রাখুন।
- গ্লিসারিন ও ভ্যাসলিন মিশিয়ে প্রয়োগ করলে আরও ভালো ফল পাওয়া যায়।
অতিরিক্ত কিছু টিপস:
- শীতে উলের পোশাক সরাসরি ত্বকে পরার আগে নিচে সুতির পোশাক পরুন।
- শীতকালেও নিয়মিত গোসল করুন এবং প্রতিদিন মুখ ধুতে হবে কয়েকবার।
- ত্বকে ক্ষারযুক্ত সাবান বা ফেসওয়াশ ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
উপসংহার
শীতের সময় ত্বকের যত্নে সামান্য বাড়তি মনোযোগই আপনাকে রাখতে পারে ঝকঝকে ও মসৃণ। সঠিক নিয়ম মেনে চললে এই শুষ্ক মৌসুমেও ত্বক থাকবে আর্দ্র ও উজ্জ্বল। ত্বকের সমস্যা কমিয়ে স্বাস্থ্যকর ত্বক পেতে নিয়মিত উপরে উল্লেখিত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করুন।