শীতকালে গলাব্যথা এবং টনসিলের সমস্যা অনেকের জন্যই একটা সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। ঠান্ডা, সর্দি, কাশি বা হাঁপানি বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গলার সমস্যা বাড়তে থাকে। বিশেষ করে ঠান্ডা লাগলেই গলাব্যথা এবং টনসিলের সমস্যা দেখা দিতে পারে, যা উপেক্ষা করলে অনেক জটিলতা তৈরি হতে পারে। আসুন, জেনে নেওয়া যাক কীভাবে এই সমস্যাগুলির কারণে শীতকালে আপনাকে সাবধান থাকতে হবে।
গলাব্যথা এবং টনসিলাইটিস: কারণ ও উপসর্গ
শীতের সময় ঠান্ডা লেগে গলায় ব্যথা হওয়া সাধারণ হলেও, এই সমস্যা টনসিলাইটিসের কারণে হতে পারে। টনসিলাইটিস হলো টনসিলের প্রদাহ, যা দুই ধরনের হতে পারে: তীব্র (অ্যাকিউট) টনসিলাইটিস এবং দীর্ঘমেয়াদি (ক্রনিক) টনসিলাইটিস। ঠান্ডা, জীবাণু বা ভাইরাসের কারণে টনসিলের গ্ল্যান্ড ফুলে গিয়ে গলায় ব্যথা হতে পারে।
এছাড়া টনসিলের মতো আরেকটি গ্রন্থি আছে যা অ্যাডিনয়েড নামে পরিচিত, এবং এটি নাকের পিছনে থাকে। টনসিল এবং অ্যাডিনয়েডের প্রদাহ শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। এই সমস্যা হলে শিশুরা নাক দিয়ে শ্বাস নিতে পারবে না, ফলে মুখ দিয়ে শ্বাস নিতে শুরু করে।
টনসিলের কার্যাবলী এবং সমস্যা
টনসিলের ভিতরে থাকা লিম্ফয়েড কোষ আমাদের শরীরকে রোগবিষাণু থেকে রক্ষা করে। তবে, বারবার জীবাণুর আক্রমণ হলে এই কোষগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে এবং টনসিলেই জীবাণু বাড়তে থাকে। এর ফলে গলায় তীব্র ব্যথা, শ্বাসকষ্ট এবং খাবার গিলতে অসুবিধা হয়।
টনসিলাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির কিছু সাধারণ উপসর্গ হল:
- গলা খুসখুস করা
- খাবার গিলতে সমস্যা হওয়া
- কণ্ঠস্বর পরিবর্তন হওয়া
- মুখে দুর্গন্ধ হওয়া
- কানব্যথা
- মাথাব্যথা
- জ্বর
- লসিকা গ্রন্থি ফুলে যাওয়া
এছাড়াও, যদি ব্যথা ও জ্বর খুব তীব্র হয়ে ওঠে, তবে প্যারাসিটামল খাওয়ার পরেও আরাম পাওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
টনসিলাইটিসের চিকিৎসা
অ্যাকিউট টনসিলাইটিস এর চিকিৎসা সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিকের মাধ্যমে করা হয়। তবে, আপনি গার্গল করে বা আদা চা খেয়ে কিছুটা স্বস্তি পেতে পারেন। উষ্ণ জলে লবণ মিশিয়ে কুলকুচি করলে গলায় আরাম পাওয়া যায়। এই সময়ে গলায় ঠান্ডা লাগানো থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। শারীরিক অবস্থা গুরুতর হলে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধও দেওয়া হতে পারে। তবে, নিজে থেকে কোনো ওষুধ গ্রহণ না করাই ভালো।
নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
যদি কোনও ব্যক্তির বছরে তিন-চার বার টনসিলের সমস্যা হয়, তাহলে ইএনটি (Ear, Nose, Throat) চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। দীর্ঘমেয়াদী টনসিলাইটিসের ক্ষেত্রে টনসিলেকটমি, অর্থাৎ টনসিল অপসারণের অস্ত্রোপচারও প্রয়োজন হতে পারে।
অবহেলা না করা জরুরি
টনসিলের সমস্যা অবহেলা করলে তা সেপটিক ক্রনিক টনসিলাইটিস এর মতো মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। এতে হার্ট এবং কিডনির ওপরও প্রভাব পড়তে পারে। তাই, সময় মতো চিকিৎসা না করলে এর ফলাফল অনেক গুরুতর হতে পারে।
সাবধানী থাকার উপায়
ঠান্ডা থেকে বাঁচুন: শীতকালে গলায় ঠান্ডা লাগানো থেকে নিজেকে রক্ষা করুন।
গার্গল করুন: গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে কুলকুচি করলে গলার আরাম পাবেন।
সন্তুলিত খাবার খান: ভালো স্বাস্থ্য বজায় রাখতে পুষ্টিকর খাবার খান।
প্রতিবছর ভ্যাকসিন নিন: ঠান্ডা লেগে টনসিলের সমস্যা হলে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সঠিক যত্ন এবং সময়মতো চিকিৎসা নিতে পারলে শীতকালে টনসিল বা গলাব্যথার সমস্যা খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।