অমুসলিমের রান্না করা খাবার খাওয়া যাবে তবে খাবারটি কোনোভাবেই হারাম হতে পারবে না । তাদের যবহকৃত পশুর গোশত খাওয়া যাবে না (আন‘আম ৬/১২১) । এক্ষেত্রে কোন মুসলিম বিসমিল্লাহ বলে যবেহ করে দিলে এবং তারা রান্না করলে তা খাওয়ায় কোন বাধা নেই। পাশাপাশি তাতে হারাম কোনো কিছুর সংমিশ্রণ থাকা যাবে না । (তাদের কোনো উপাস্যের জন্ম উৎস্বর্গকৃত না হতে হবে। )
(বুখারী হা/৩৪৪; মুসলিম হা/২৪৯১; আবুদাউদ হা/৪৫১০; মিশকাত হা/৫৮৮৪, ৫৮৯৫, ৫৯৩১) ।
রাসুলুল্লাহ (সা.) অমুসলিমদের দাওয়াত গ্রহণ করেছেন। তাদের রান্নাকৃত খাবার খেয়েছেন। তাদের দেওয়া উপহারও গ্রহণ করেছেন। (বুখারি, হাদিস: ২৬১৫)
আবু হুমাইদ আল-সাঈদি (রা.) বলেন, ‘আমি নবী (সা.)-এর সঙ্গে তাবুক যুদ্ধ করেছি। আয়লা-র বাদশাহ নবী (সা.)-কে সাদা রঙের একটি খচ্চর এবং একটি চাদর উপহার দিয়েছেন। ’ (বুখারি, হাদিস: ২৯৯০)
আল-আব্বাস বিন আবদুল মোত্তালিব হুনাইনের দিন সম্পর্কে বলেন, ‘রাসুল (সা.) সাদা রঙের একটি খচ্চরের উপর ছিলেন; যে খচ্চরটি ফারওয়া বিন নুফাছা আল-জুযামি তাকে উপহার দিয়েছিলেন। ’ (মুসলিম, হাদিস: ১৭৭৫)
আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, নবী (সা.)-কে দুমাত-এর (একটি স্থান) উকাইদির (রাজা) একটি রেশমী কাপড় উপহার দিয়েছেন। তখন তিনি সেটা আলী (রা.)-কে দিয়ে বললেন: ‘এটাকে কেটে খিমার (নারীর অবগুণ্ঠন) বানিয়ে ফাতেমাদের দাও। ’ (বুখারি, হাদিস: ২৪৭২; মুসলিম, হাদিস: ২০৭১)
ইমাম শারফ আন-নববী বলেন, ‘এ হাদিসে কাফেরের হাদিয়া গ্রহণ বৈধ হওয়ার পক্ষে দলিল রয়েছে। ’ (শারহু মুসলিম: ১৪/৫০)
আনাস বিন মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, এক ইহুদি নারী (সা.)-এর কাছে একটি বিষযুক্ত ভেড়া নিয়ে আসে। তিনি সে ভেড়া থেকে খেয়েছেন। (বুখারি, হাদিস: ২৪৭৪; মুসলিম, হাদিস: ২১৯০)
সৌদি আরবের স্থায়ী কমিটির ফতোয়াসমগ্রে এসেছে, ‘অমুসলিমেরা সাধারণ উপলক্ষগুলোতে যেমন- নতুন শিশুর জন্ম ও অন্যান্য উপলক্ষে মুসলিমদের যেসব মিষ্টান্ন দেয়, সেগুলো খাওয়া জায়েজ; তবে ধর্মীয় উপলক্ষকেন্দ্রিক কোনো খাবার খাওয়া জায়েজ নয়।
নবী (সা.) থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, ‘তিনি মুশরিকদের দেওয়া উপহার গ্রহণ করেছেন। ’ শাইখ আবদুল আজিজ ইবনে বাজ, শাইখ আবদুল আজিজ আলে শাইখ, শাইখ বকর আবু যায়েদ। (ফাতাওয়াল লাজনাদ দায়িমা, আল-মাজমুআ আস-সানিয়া: ১০/৪৭০)
শাইখ বিন উছাইমিন (রহ.)-কে জিজ্ঞেস করা হয়, আমার একজন অমুসলিম প্রতিবেশী আছে। কখনও কখনও বিভিন্ন উপলক্ষে সে আমাকে খাবার ও মিষ্টান্ন পাঠায়। এ খাবার আমি খাওয়া ও আমাদের বাচ্চাদের খাওয়ানো কি জায়েজ হবে?
জবাবে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ। যদি আপনি নিরাপদ মনে করেন, তাহলে কাফেরের দেওয়া হাদিয়া খাওয়া আপনার জন্য জায়েজ। কেননা নবী (সা.)-কে যে ইহুদি নারী ভেড়া হাদিয়া দিয়েছে এবং তিনি সেটা গ্রহণ করেছেন। যে ইহুদি তাকে তার ঘরে দাওয়াত করেছে, তিনি তার দাওয়াত গ্রহণ করেছেন এবং তার খাবার খেয়েছেন।
তাই কাফেরদের উপহার ও তাদের বাসায় খেতে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু শর্ত হচ্ছে- নিরাপত্তার নিশ্চয়তা। যদি কোনো আশংকা থাকে, তাহলে তাদের দাওয়াত গ্রহণ করা যাবে না। অনুরূপভাবে আরেকটি শর্ত হচ্ছে, খাবার ও উপহারগুলো তাদের ধর্মীয় উপলক্ষ কেন্দ্রিক না হওয়া (যেমন- পূজা ও বড়দিন পালন ইত্যাদি ধরনের কোনো উপলক্ষ)। এই ধরনের অবস্থায় উপলক্ষকেন্দ্রিক তাদের উপহার গ্রহণ জায়েজ নেই। (ফাতাওয়া নুরুন আলাদ দারব: ২৪/২)
অমুসলিমদের তাদের দাওয়াতে অংশগ্রহণ করলে ঈমান-আমলের ক্ষতি হবার আশঙ্কা থাকলে অংশগ্রহণ করা জায়েজ হবে না। (আহকামুজ জিম্মাহ: ১/৭২৩) অনুরুপভাবে তাদের জবাইকৃত পশুর গোশত খাওয়া যাবে না। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৭৩)