Image default
ইসলামধর্ম

কবরে যে ৩টি প্রশ্ন করা হবে ও তার জবাব

প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। (সূরা: আল ইমরান, আয়াত: ১৮৫)
প্রত্যেক মানুষই মরনশীল। আল্লাহ তায়ালার ঘোষণা, প্রতিটি জীবনকেই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। হাশরের ময়দানে একত্রিত করা ও বিচার শুরু হওয়ার আগে কবরেই মানুষের সংক্ষিপ্ত হিসাব তথা পরীক্ষা শুরু হবে।
এ কারণেই যারা দুনিয়ার জীবনে আল্লাহকে বেশি ভয় করে তারা আখেরাতের প্রথম মঞ্জিল কবরের জীবন ও সংক্ষিপ্ত বিচারের সম্মুখীন হওয়াকেও বেশি ভয় করে।
তাকওয়াবানদের এ ভয়ের অন্যতম কারণ হলো, যারা কবরের সংক্ষিপ্ত বিচারে পার পেয়ে যাবে, তাদের পরবর্তী ধাপগুলো সহজ হয়ে যাবে। আর যারা কবরের সংক্ষিপ্ত বিচারে আটকে যাবে তাদের দুঃখ ও লাঞ্ছনার শেষ নেই। কবরের এ সংক্ষিপ্ত বিচার তথা প্রশ্নোত্তর পর্ব পরকালীন জীবনের ওপর বিশ্বাসের প্রথম স্তর।

কবরের সংক্ষিপ্ত বিচার:
মৃত্যুর পর মৃতব্যক্তিকে যখন প্রথমে কবরে রাখা হবে, তখন মুনকার-নকির নামক অপরিচিত, অদ্ভুত ও বিকট আকৃতির দু’জন ফেরেশতা কবরে আসবেন। যাদেরকে দেখলে মুমিন ব্যক্তি ভয় পাবে না। কিন্তু অপরাধী ব্যক্তিরা অস্বাভাবিক ভয় পাবে।
সেখানে প্রশ্নোত্তর মূলক সংক্ষিপ্ত বিচার শুরু হবে। যারা প্রশ্নের উত্তরগুলো যথাযথ দিতে পারবে, তারাই সফলকাম। আর যারা সংক্ষিপ্ত বিচারালয়ের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে না , তারা ব্যর্থ।
মুনকার-নকির কবরে এসে মৃতব্যক্তিকে শোয়া থেকে উঠিয়ে বসাবে। তারপর ধারাবাহিকভাবে ৩টি প্রশ্ন করবে-

প্রথম প্রশ্ন:

مَنْ رَبُّكَ؟
মান রাব্বুকা?
আপনার প্রভু কে?

প্রশ্নের উত্তর:

যদি সে ব্যক্তি নেককার হয় তবে বলবে-
رَبِّى الله
আল্লাহ আমার প্রভু।
আর যদি সে মন্দ লোক হয় তবে প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারবে না।

দ্বিতীয় প্রশ্ন:

مَنْ دِيْنُكَ؟
মান দ্বীনুকা?
আপনার দ্বীন বা জীবন ব্যবস্থা কী?

প্রশ্নের উত্তর:

যদি সে ব্যক্তি নেককার হয় তবে বলবে-
دِيْنِىَ الْاِسْلَام
ইসলাম‌ আমার জীবন ব্যবস্থা বা দ্বীন।
আর যদি সে মন্দ লোক হয় তবে প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারবে না।

তৃতীয় প্রশ্ন:

مَنْ هَذَا الرَّجُل؟
মান হাজার রাজুল?
এই ব্যক্তি কে?

প্রশ্নের উত্তর:

যদি সে ব্যক্তি নেককার হয় তবে বলবে-
نَبِيُّنَا مَحَمَّدُ رَّسُوْلُ الله
তিনি আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

আর যদি সে মন্দ লোক হয় তবে প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারবে না। সে বলবে আমি এ ব্যক্তিকে চিনি না। (নাউজুবিল্লাহ)
সংক্ষিপ্ত বিচারের ফলাফল: যারা এ প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারবে। তাদের কবরের সঙ্গে জান্নাতের যোগাযোগ স্থাপন করে দেয়া হবে। জান্নাতের হাওয়া এবং সুঘ্রাণ তাদের কবরে আসতে থাকবে। তাদেরকে বলা হবে-
এখন তুমি আরামে ঘুমাও। নতুন বিবাহ করা দম্পতির মতো। যারা মনের সুখে ঘুমোতে থাকে।’ এভাবে তারা কিয়ামত অনুষ্ঠিত হওয়ার আগ পর্যন্ত এক ঘুমে পুরো সময় পার করে দেবে।
আর যারা কবরের সংক্ষিপ্ত বিচারালয়ের ৩টি প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যর্থ হবে তাদের কর্ম অনুযায়ী কিয়ামত অনুষ্ঠিত হওয়ার আগ পর্যন্ত শাস্তি ভোগ করতে থাকবে।

পরিশেষে… কবরের সফলতা লাভে পবিত্র কোরআনের সুসংবাদ গ্রহণ করাই মুমিন মুসলমানের একান্ত কর্তব্য। আল্লাহ তায়ালা সংক্ষিপ্ত বিচারালয়ে মুনকার-নকিরের প্রশ্নের উত্তর সহজ হওয়ার বিষয়গুলো উল্লেখ করেন বলেন-
‘যারা শ্বাস্বত বাণীতে (কালেমায়) বিশ্বাসী, আল্লাহ তাদের দুনিয়া এবং আখেরাতে এ কালেমা তথা ঈমানের ওপর প্রতিষ্ঠিত রাখেন।’ (সূরা ইব্রাহিম, আয়াত: ২৭)।

কবরের তিনটি মৌলিক বিষয়ে প্রশ্ন, যথা রব, দ্বীন ও নবী। আল্লাহ তাআলা মানুষকে আলমে আরওয়াহ বা রুহের জগতে প্রথম রবুবিয়াত বিষয়ে স্বীকৃতি নেওয়ার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘আলাছতু বিরব্বিকুম’ আমি কি তোমাদের রব নই?, ‘কালু- বালা’ সবাই বলেছিল—জি, হ্যাঁ।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পরকালের চিরস্থায়ী জীবনের শান্তি ও কল্যাণের জন্য কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক জীবন-যাপন করার তাওফিক দান করুন। কবরের প্রশ্নগুলোর উত্তর সুন্দরভাবে দেয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Related posts

ইসলাম ও ঈমানের মধ্যে সম্পর্ক

News Desk

রোজা ভঙ্গ হলে করনীয়

News Desk

শিবের জন্ম রহস্য: পুরাণে দেবাদিদেব মহাদেবের আবির্ভাব

Sanjibon Das

Leave a Comment