ফেরাউন বা ফারাও প্রাচীন মিশরের রাজাদের উপাধি হিসেবে পরিচিত ছিল। মিশরের ইতিহাসের এক বিস্তৃত সময়জুড়ে ফেরাউন শাসকের ভূমিকা পালন করতেন এবং সাধারণভাবে তাঁরা দেবতা-সমমানের মর্যাদায় অভিষিক্ত ছিলেন। এই নিবন্ধে আমরা ফেরাউনের পরিচয়, তাঁর ইতিহাস, জীবনযাপন, এবং ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করব।
প্রাচীন মিশরের শাসনব্যবস্থা ও ফেরাউনের ভূমিকা
প্রাচীন মিশর একটি শক্তিশালী ও দীর্ঘস্থায়ী সভ্যতা হিসেবে ইতিহাসে প্রসিদ্ধ। খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৩১৫০ থেকে ৩০ অবধি মিশরের রাজত্ব বিস্তৃত ছিল এবং এই দীর্ঘ সময়কালে বিভিন্ন রাজবংশের শাসকরা পালাক্রমে ক্ষমতায় আসেন। এই শাসকদেরই ফেরাউন বলা হত। “ফেরাউন” শব্দটি এসেছে মিশরের “পের আ” শব্দগুচ্ছ থেকে, যার অর্থ “মহান গৃহ” বা রাজপ্রাসাদ। পরবর্তীতে এই শব্দটি সরাসরি শাসককেও বোঝাতে শুরু করে।
ফেরাউনের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক শক্তি
প্রাচীন মিশরে ফেরাউন শুধু একজন শাসক ছিলেন না, বরং তাঁকে দেবতা হিসেবে গণ্য করা হতো। মিশরের মানুষ মনে করত যে ফেরাউন সূর্যদেবতা ‘রা’ বা ‘আমুন-রা’ এর সন্তান। এমনকি তাঁর মৃত্যুর পর ফেরাউন দেবতার সাথে মিলিত হন এবং তাঁর আত্মা মিশরের জনগণের সুরক্ষা দেয়।
ফেরাউন ছিলেন মিশরের ধর্মীয় প্রধান, এবং তাঁর আদেশ-নির্দেশ অনুযায়ী ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালন করা হতো। ফেরাউনের নির্দেশে বড় বড় মন্দির নির্মিত হতো, যেখানে দেবতাদের উদ্দেশ্যে পূজা হত। এ ছাড়াও তিনি নিজেই ছিলেন একজন দেবতা-সমতুল্য ব্যক্তি। ফেরাউনের নামে বড় বড় পিরামিড তৈরি হতো এবং এই পিরামিড তাঁর কবরস্থানের কাজ করত।
ফেরাউনের পরিচয়: কোন ফেরাউন মূসা (আ.) এর সময়ে ছিলেন?
কুরআন ও বাইবেলে ফেরাউনের উল্লেখ রয়েছে, বিশেষ করে নবী মূসা (আ.) এর সময়ে এক নির্দিষ্ট ফেরাউনের উল্লেখ পাওয়া যায়, যিনি মিশরের জনগণের উপর অত্যাচার চালাতেন। তবে কুরআনে সেই ফেরাউনের সঠিক নাম উল্লেখ নেই, ফলে ঐতিহাসিকরা বিভিন্ন ফেরাউনের সাথে নবী মূসা (আ.) এর সময়কাল মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করেছেন। এই প্রসঙ্গে দুটি ফেরাউনের নাম প্রায়শই সামনে আসে: “রামেসিস II” এবং “মেরেনপতা”।