হ্যাঁ হিন্দুত্ব একটি সুবিশাল সমাজ ব্যবস্থা, তাই হিন্দু বলতে কোন সম্প্রদায়কে বোঝায় না। হিন্দু শব্দের অর্থ উদার বিশ্বজনীনতা, হিন্দু শব্দ সংস্কৃতি বাচক, এক অপৌরুষেয় শব্দ।যে ভারত ভূখণ্ডে বৈদিক,বৌদ্ধ, শৈব, বৈষ্ণব, এমন কি তথাকথিত অন্য ধর্মের সকল অধিববাসীরাও হিন্দু।
আমাদের পূর্বপুরুষরা দৃপ্তকন্ঠে উচ্চারণ করে গেছেন।
“আসিন্ধুসিন্ধুপর্য্যন্ত যস্য ভারতভূমিকা পিতৃভূঃ পূণ্যভূশ্চৈব স বৈ হিন্দুরিতিস্মৃতঃ।
অর্থাৎ সিন্ধুদেশ থেকে আরম্ভ করে দক্ষিণে সিন্ধু অর্থাৎ সমুদ্র পর্যন্ত পৃথিবীর তাবৎ পুণ্য সংস্কার, পুণ্য আচার, পুণ্য অনুষ্ঠান, পুণ্য জ্ঞানের বিমল ধারা যেখানে পিতৃভূঃ অর্থাৎ জন্মগ্রহণ করেছে সেই পাবন ক্ষেত্রে আমরা বাস করি বলে আমাদের পিতৃপুরুষরা নিজেদের হিন্দু নামে অভিহিত করতেন। বিশ্বের প্রাচীনতম ধর্মের কথা বললে হিন্দু ধর্মকেই উল্লেখ করা হয়। তবে জন্মলগ্ন থেকেই এর নাম হিন্দু ধর্ম ছিল না। এর প্রাচীন নাম সনাতন ধর্ম। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে এদেশে হিন্দু ধর্ম কোনও একজন ব্যক্তির মতাদর্শের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠেনি। ভারতের ভিন্ন সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও মতাদর্শ নিয়েই জন্ম নিয়েছে এই ধর্ম।
খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ থেকে ৫০০-এর মধ্যের সময়টি পরিচিত বৈদিক যুগ নামে। সেই যুগের পর অর্থাৎ খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ থেকে ৩০০-এর মধ্যে হিন্দুত্বের জন্ম হয়। যে ধর্মের মানুষের মূল কথা, বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডে যা যা রয়েছে, সেসবের মূলেই ঈশ্বর। ধর্ম, অর্থ, কর্ম ও মুক্তিতেই বিশ্বাসী এই ধর্মাবলম্বীরা। তাঁদের বিশ্বাস, ভগবানের অস্তিত্বেই সবকিছুর অস্তিত্ব। এদিকে ইতিহাস বিশেষজ্ঞদের মতে, আর্য জাতিরা ইউরোপের মধ্যে দিয়ে ইরান হয়ে ভারতে প্রবেশ করে। এবং তারাই ভারতে বেদ চর্চা শুরু করে। ধীরে ধীরে গোটা ভারতে তা ছড়িয়ে পড়ে।
এবার প্রশ্ন হল, হিন্দু শব্দটি কোথা থেকে এল? অনেকের মতে, আফগানদের থেকে এই শব্দটি শুনেছিল আর্যরা। কারণ সিন্ধু নদের তীরবর্তী সনাতন ধর্মের সাধু-সন্ন্যাসীদের হিন্দু বলে উল্লেখ করা হত। আর সেখান থেকেই নামটি প্রচলিত হয়ে ওঠে। এই সনাতন ধর্মের সন্ন্যাসীরাই বেদ, উপনিষদ, ভগবত গীতা শ্রুতিবদ্ধ করেছিলেন। যা পরবর্তীকালে লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল। সেই যুগে বেদের নিয়ম মেনেই সমাজের বিভিন্ন কাজ করা হয়। চিকিৎসা, সমাজ চালনা, গণনার মতো কাজগুলি যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য। যে সভ্যতা বৈদিক সভ্যতা হিসেবে পরিচিত। আর্য জাতির লোকেরা মূলত চারটি সম্প্রদায়ে বিভক্ত ছিল। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র। কাজের ভিত্তিতেই সম্প্রদায় ভাগ করে নেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীকালে যা হিন্দু সমাজের রীতিতে পরিণত হয়েছে।
সেই সময় কোনও মূর্তি পুজোর চল ছিল না। ছিল না কোনও মন্দিরও। ইন্দ্র, বরুণ, অগ্নি এবং সোম, এই দেবতারা যজ্ঞ এবং বেদ পাঠের মধ্য দিয়ে পূজিত হতেন। যে কোনও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কাজের আগে যজ্ঞ করা আবশ্যক ছিল। এর অনেক পরে রামায়ণ ও মহাভারত প্রথমে শ্রুতিবদ্ধ এবং পরে লিপিবদ্ধ হয়। বর্তমানে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ধর্ম এটি। গোটা বিশ্বের ১৫ থেকে ১৬ শতাংশ মানুষ হিন্দু ধর্মাবলম্বী। ভারতের পাশাপাশি নেপাল এবং মরিশাস ও ইন্দোনেশিয়াতেও এর বিস্তৃতি রয়েছে।
উপরোক্ত তথ্য বিভিন্ন সূত্র থেকে সংকলিত। হিন্দু ধর্ম ও হিন্দুত্ব নিয়ে একাধিক ব্যাখ্যা রয়েছে। তারই কিছু অংশে আলোকপাত করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।
তথ্য সূত্র: বাঙ্গালী হাউ ইন্ডিয়া থিঙ্কস, সংবাদ প্রতিদিন, ভিক্সপিডিয়া, উইকিপিডিয়া।