Image default
ইসলাম

কালেমা তায়্যিবার বিস্ময়

পূতময় মহান রব। রহস্যের অন্তহীন আঁধার। সৃষ্টিকুলের প্রতিটি পরতে লুকিয়ে আছে তাঁর সৃষ্টিকৌশল, অপার শক্তিমত্তা ও পরিচিতির নিখুঁত গাঁথুনি। বান্দা একটু মেধা খাটালেই নানাভাবে ধরা পড়বে তাঁর সৃষ্টিরহস্যের অনেক কিছু। পরিষ্কার হবে প্রভুর অস্তিত্ব¡। প্রশান্তি লাভ করবে তার আত্মা। কারণ তিনি নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি জাহের তিনি বাতেন বা প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য। (সূরা হাদিদ-৩) তাঁর কোনো কাজ অনর্থক বা প্রজ্ঞাহীন নয়। সবকিছুর পেছনেই আছে কোনো না কোনো লক্ষ্য। কোনো নিগূঢ় রহস্য। আমরা তা কখনো আংশিক বুঝি কখনো বা থেকে যায় অদৃশ্যের অন্তহীন ভাণ্ডারে। যে ভাণ্ডারের মালিক কেবলই তিনি। ঘোষিত হয়েছে, ‘আর তাঁর কাছেই আছে অদৃশ্যের চাবিকাঠি। এগুলো তিনি ছাড়া কেউ জানে না।’ (সূরা আনয়াম-৫৯)

এই কালেমাটির মর্যাদা-মাহাত্ম্য এ থেকেই অনুমেয় যে, মানব জাতির জন্য প্রেরিত সমস্ত নবী-রাসূলের প্রধান এবং প্রথম কাজই ছিল তাদের এই কালেমার দাওয়াত দেয়া কিংবা তাদের থেকে এই মর্মার্থের স্বীকৃতি নেয়া। ইসলামের মৌলিক পঞ্চভিত্তির প্রথমটিই এই কালেমার সাক্ষ্য প্রদান। কালেমার প্রতি বিশ্বাস ছাড়া কোনো মানুষ মুমিন হতে পারে না। তার কোনো ইবাদতও আল্লøাহর কাছে মূল্যমান বা প্রতিদানযোগ্য হতে পারে না। নেকির পাল্লায় এই কালোমার ওজন সমস্ত আমল অপেক্ষা বেশি হবে। এমনকি সাত আসমান সাত জমিনের সবকিছু থেকেও কালেমার ওজন বেশি হবে।’ (মুসনাদে আহমদ) আকাশের দৃশ্যমান কোনো খুঁটি বা পিলার নেই যা কুরআন থেকে আমরা জানতে পারি। (সূরা রা’দ-২) কিন্তু অদৃশ্য খুঁটির কথা আমরা নবীজী সা:-এর হাদিস থেকে জানতে পারি। তিনি ঘোষণা করেছেন, ‘যতদিন পৃথিবীতে আল্লাহ আল্লাহ বলা হবে তত দিন পৃথিবী ধ্বংস হবে না’। (মুসলিম) কোনো কোনো হাদিসে কালেমার ব্যাপারেও এমন কথা রয়েছে। তাই আমরা এবার ‘লফজে আল্লাহ’ এবং পবিত্র কালোমার কিছু গোপন কথা বা রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চালাব ইনশাআল্লাহ। সত্তাগত বা গুণগতভাবে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যেমন শরিকানার ঊর্ধ্বে তেমনি তাঁর জন্য নির্ধারিত নাম ‘লফজে আল্লাহ’ও অলৌকিকভাবে আজো শরিকানামুক্ত, ভবিষ্যতেও তেমনি থাকবে।

 

আজ পর্যন্ত কোনো মানুষ জেনে কিংবা না জেনে, শখের বশে কিংবা দুষ্টুমি করে এ নাম তথা ‘আল্লাহ’ নাম ধারণ করেনি কিংবা ধারণের মতো ধৃষ্টতা দেখায়নি। হজরত মুসা আ:-এর যুগের ফেরাউন ঔদ্ধত্য দেখিয়ে বলেছিল, ‘আনা রাব্বুকুমুল আলা’ তথা আমি তোমাদের সর্বাপেক্ষা বড় রব! (সূরা নাজিয়াত-২৪) এমনিভাবে হজরত ইবরাহিম আ:-এর সময়কার নমরুদ নিজেকে ‘রাব্বুল আলামিন’ দাবি করে তর্কের মজলিসে বলেছিল, ‘আনা উহয়ি ওয়া উমিতু বা আমি জীবনদাতা-মৃত্যুদাতা!’ (সূরা বাকারা-২৫৮) কিন্তু ‘আল্লাহ’ দাবি করার দুঃসাহস তারা দেখায়নি। আল্লাহু আকবার! কিয়ামতের আগে মহাপ্রতারক, মহামিথ্যুক দাজ্জালের আবির্ভাব হবে; কিন্তু সেও ‘আল্লাহ’ নাম ধারণ করতে পারবে না। আল্লাহ তায়ালা তাঁর নাম তিনিই হিফাজত করে যাচ্ছেন। এবার দেখা যাক অক্ষরগত দিক থেকে কী চমক রয়েছে নামটিতে। শব্দটিতে আরবি মূলবর্ণ রয়েছে তিনটি। আলিফ, লাম ও গোল হা। প্রত্যেকটি বর্ণ নুকতা ছাড়া। নুকতা আরবি বর্ণের একটি দুর্বলতা। এ দিক থেকে শব্দটি শক্তিশালী বা দুর্বলতামুক্ত। অপর দিকে, বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে প্রত্যেকটি বর্ণ উচ্চারণে সহজ। তাই শব্দটির তালাফফুজ সহজ ও শ্রুতিমধুর। আবার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বাক্যটি আল্লাহ শব্দে বর্ণিত তিনটি বর্ণ দ্বারাই গঠিত যা বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে।

 

পৃথিবীতে আল্লাহ ছাড়া এমন কে আছেন যে তাঁর নাম এবং পরিচয় একই বর্ণযোগে দিতে পারেন। সুবহানাল্লাহ! ‘আল্লাহ’ শব্দটির গাঁথুনিতে মোট চারটি বর্ণ আছে। আবার ‘লা ইলাহা ইল্লøাল্লাহ’ বাক্যটিতে চারটি শব্দ রয়েছে। কী চমৎকার মিল! বাক্যটিতে বর্ণগুলো ব্যবহার হয়েছে মোট ১২ বার, যা তিন ও চার সংখ্যা দ্বারা নিঃশেষে বিভাজ্য। তার মানে বুঝা যায়, বিষয়গুলো কাকতালীয় নয়। তার পেছনে অবশ্যই কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে। হ্যাঁ, অবশ্যই আছে। তার আগে কালেমার অপর অংশ ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ বাক্যটিতে একটু দৃষ্টি দিই। এখানেও আগের বাক্যটির মতো মিরাকেল দেখতে পাব। ‘মুহাম্মাদ’ শব্দটিতে আল্লাহ শব্দের মতো মূলবর্ণ তিনটি ব্যবহার করা হয়েছে। যথা, হা, মিম ও দাল। এই বর্ণগুলোও নুকতামুক্ত। আবার ‘মুহাম্মাদ’ শব্দটির গঠনে মোট চারটি বর্ণ রয়েছে। আর বাক্যটিতে আছে ১২টি বর্ণ। তাহলে দু’টি বাক্যের মধ্যেই আমরা ৩, ৪ ও ১২ সংখ্যার মধ্যে মিল দেখতে পাচ্ছি। আবার বাক্য দু’টিতে মোট বর্ণের সংখ্যা ২৪টি। ২৪ সংখ্যাটি আগের প্রত্যেকটি সংখ্যা দ্বারা বিভাজ্য। তার মানে প্রত্যেকটি সংখ্যাই একে অপরের সাথে মিল রাখছে।

 

তথ্য সূত্র : https://www.jaijaidinbd.com/

Related posts

আল্লাহর পথে জিহাদ

News Desk

শবে কদরের ফজিলত এবং উত্তম আমল

News Desk

রোজা ভঙ্গ হলে করনীয়

News Desk

Leave a Comment