বিশ্বে ইসলাম সব বিবেচনায় শ্রেষ্ঠ ধর্ম। ইসলাম শব্দের সরল অর্থ শান্তি। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই ইসলাম ধর্মের লক্ষ্য। অশান্তি হয় এমন সব কাজ ইসলাম ধর্মে নিষিদ্ধ। আমাদের নবী হযরত মুহম্মদ (স.) বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মানব। তিনি জীবনে মিথ্যা কথা বলেননি। তিনি ছিলেন সত্যের উপাসক। নবী হওয়ার আগে মক্কায় তিনি সত্যবাদিতার জন্য ‘আল-আমিন’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ইসলাম ধর্মের মূল ভিত্তি ইমান। আল্লাহ এক, অদ্বিতীয় তাঁর কোনো শরিক নেই। হযরত মুহম্মদ (স.) তাঁর (আল্লাহর) বার্তাবাহক। এই বিশ্বাসই ইমান। ইমান আনার পরে মানুষের পরিচয় হয় মুসলমান হিসেবে। মুসলমানরা হবে নবীর অনুসারী। মুসলমান আল্লাহর ইবাদত করে। ইবাদত শব্দের অর্থ সার্ভিস (সেবা) দেওয়া। ইবাদত দুই প্রকারের। আল্লাহর প্রতি (হকুল্লাহ) আর আল্লাহর সৃষ্টকুলের প্রতি (হক্কুল ইবাদত)। নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত হলো আল্লাহর প্রতি বান্দার ইবাদত। এ ইবাদতে ভুল হলে আল্লাহ তা ক্ষমা করার অধিকার রাখেন। এ বিষয়ে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কোরআনে বহু আয়াত আছে। কিন্তু বান্দার প্রতি অর্থাৎ আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি যে ইবাদত তা যদি আমরা পালন না করি এ জন্য যে গুনাহ হবে তা ক্ষমা করার মালিক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি যদি তা ক্ষমা না করেন তাহলে তা আল্লাহও ক্ষমা করবেন না। এমন বিধান অন্য কোনো ধর্মে আছে কি? বান্দার হককে ইসলাম ধর্মে আল্লাহর হকের পরেই স্থান দিয়েছে।
ইমানের পরে আসে নামাজ। সময়ের ৫টি অবস্থানকে কেন্দ্র করে ইসলাম ধর্মে ৫ বার আল্লাহকে স্মরণ করার বিধানকে নামাজ বলে। ভোরে ফজর, দুপুরে জোহর, বিকালে আসর, সন্ধ্যায় মাগরিব আর রাতে এশার নামাজ ফরজ (অবশ্য পালনীয়) করা হয়েছে। মুসলমানরা একত্রিত হয়ে যথাক্রমে ২, ৪, ৪, ৩ ও ৪ রাকায়াত ফরজ নামাজ মসজিদে একত্রিত হয়ে আদায় করে। নামাজ আদায়ের আগে পানি দিয়ে পবিত্র হওয়ার (অজু করার) বিধান রয়েছে। দৈনিক ৫ বার অজু করার ফলে হাত, মুখমÐল, নাক, পা, মাথা পানি দিয়ে তিনবার করে বিশেষ নিয়ম মেনে ধৌত করা হয়। এতে মানসিক ও শারীরিক প্রশান্তি লাভ করা যায়। দৈনিক ৫ বার ছাড়াও ইসলাম ধর্মে সাপ্তাহিক, অর্ধবার্ষিক ও বার্ষিক আরও তিন ধরনের ফরজ নামাজ আদায় করতে হয়। প্রতি শুক্রবার মসজিদে ২ রাকায়াত ফরজ নামাজ, দুই ঈদে মাঠে ২ রাকায়াত ওয়াজেব নামাজ ও বছরে একবার পবিত্র কাবাঘরে হজের তাওয়াফ করতে হয়। এতে মুসলমানদের মধ্যে সাপ্তাহিক, অর্ধবার্ষিক ও বার্ষিক সম্মেলন আকারে পারস্পরিক দেখা শোনা হয় ফলে ভ্রাতৃত্ব দৃঢ় হয়। অন্য কোনো ধর্মে এমন ব্যবস্থা আছে বলে আমার জানা নেই। নামাজের মাধ্যমে মানুষের মনে আল্লাহর প্রেম সৃষ্টি হয়। ফলে প্রকৃত
নামাজ আদায়কারীর দ্বারা কোনো অন্যায় কাজ সাধিত হয় না।
দ্বিতীয় স্থানে আসে বছরে ১ মাস রোজা পালন। হিজরি বর্ষের রমজান মাসে দিনের বেলা পানাহার থেকে বিরত ও সকল প্রকার অন্যায় কাজ, অন্যায় চিন্তা ও কুমতলব থেকে মুক্ত থাকাই রোজা। রমজান মাসে প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক নর-নারী একই সময়ে সাহরি খায়, একই সময়ে ইফতার করে। এতে খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে একটি শৃঙ্খলা আসে। দৈনিক ৫ ওয়াক্ত নামাজের অতিরিক্ত হিসাবে আরও ২০ রাকায়াত তারাবিহ নামাজ পড়ার ফলে প্রতিটি রোজাদারের শরীর ও মন পরিশিলীত হয়। সারা দিন পানাহার ও কামাচার থেকে বিরত থাকায় একজন রোজাদার ক্ষুধার কষ্ট বুঝতে পারে বিধায় সে অনাহারি মানুষের দুঃখ যাতনা অন্তর দিয়ে অনুভব করতে সক্ষম হয়। যা একজন বেরোজাদার কখনও অনুভব করতে পারে না। রোজাদার অনাহারি গরিব মানুষদের সহায়তা সরার তাগিদ রোজার মাধ্যমে অনুভব করে। ফলে মনুষ্যত্ববোধ হৃদয়ে বেশি করে জাগ্রত হয়। এতে মহান আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও আনুগত্য বৃদ্ধি পায়। নামাজ ও রোজার মাধ্যমে মানব মনে আল্লাহর প্রেম (তাকওয়া) সৃষ্টি হয়। চরিত্রে ন¤্রতা ও বিনয় সৃষ্টি হয়। মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও মমত্ববোধ জাগ্রত হয়। এটাই রোজার শিক্ষা।
সব মুসলমানের জন্য ইমান, নামাজ ও রোজা ফরজ। মুসলমানদের মধ্যে যারা ধনী তাদের জন্য আরও দুটি ফরজ ইবাদত আছে। তা হলো জাকায়াত আদায় করা ও জীবনে একবার মক্কায় গিয়ে হজ পালন করা। ধনীদের সম্পদে রয়েছে গরিবের হক। ইসলামের বিধান মেনে নির্দিষ্ট হারে সম্পদের ওপর জাকায়াত হিসাব করে কড়ায় গন্ডায় আদায় করতে হবে। ক্ষোদ দেখানো, ফাঁকিঝুকি দিয়ে নিজের মনগড়া হিসাবে জাকায়াত দিলে তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। ধনীরা যদি ঠিকমতো জাকায়াত না দেয় তা হলে শেষ বিচার দিনে তাদের ধরা খাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। ইসলামের বিধান মেনে সব মুসলমান জাকায়াত দিলে বিশ্বে মুসলমানদের মধ্যে গরিব খুঁজে পাওয়া যেত না। অন্য কোনো ধর্মে জাকাতের অনুরূপ আর্থিক ইবাদত নেই।
জীবনে একবার হজ পালন করা ধনী মুসলমানের জন্য ফরজ। হজ পালনের মধ্য দিয়ে একজন হাজী শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে ফিরে আসেন। সারা বিশ্বের মুসলমানরা আরাফাত ময়দানে একত্রিত হয়। যা একদিক দিয়ে বার্ষিক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের রূপ নেয়। যার ফলে বিশ্বের মুসলমানদের মধ্যে বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি হয়। হক্কুল ইবাদতের মধ্যে নিষ্ঠার সঙ্গে সব কাজকর্মই আসে। কৃষকের কৃষি কাজ, জেলের মৎস্য ধরা, মাঝির নৌকা চালানো, ঠিকমতো ড্রাইভ করা, সৎভাবে চাকরি করা ইত্যাদি হক্কুল ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। কথায় সৎভাবে সম্পাদিত সব কর্মই ইবাদত। আসুন আমরা আল্লাহ ও তাঁর সৃষ্ট সবার প্রতি আমাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করি। শান্তিময় সমাজ, দেশ ও বিশ্ব গড়ি।