Image default
ইসলাম

স্রষ্টার সিদ্ধান্তে সন্তুষ্টিই আধ্যাত্মবাদ

যিনি আল্লাহর ইচ্ছার ওপর রাজি-খুশি বা ফানা হয়ে যান তাকেই সুফি বলা হয়; যা সুফি দর্শনে ফানা আনিল এরাদা বলা হয়ে থাকে। সুফিদের ইহলৌকিক ও পরজাগতিক কোনো বস্তুর প্রতি আকাক্সক্ষা বা মোহ থাকে না। পরমের ইচ্ছাই হলো সুফির ইচ্ছা।

এরশাদ হয়েছে, ‘রাদিআল্লাহু আনহুম ওয়া রাদুআনহু।’ (সূরা আল-মুজাদালাহ : ২২)। অর্থাৎ রব তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা রবের প্রতি সন্তুষ্ট। সুফিদের অনর্থ বা অহেতুক কাজ-কর্ম পরিহার করে চলতে হয়। সুফিরা কম কথা বলেন। অল্প আহার করে থাকেন। কম ঘুমিয়ে থাকেন।

তারা অনর্থ অপ্রয়োজনীয় ঘোরাঘুরি পরিহার করে থাকেন। তারা রবের দর্শন তথা দিদারের ইচ্ছাতে সার্বক্ষণিক মোরাকাবা মোশাহেদা তথা ইয়াদ করে থাকেন। সুফিরা নির্বিলাশ জীবনযাপনকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। সুফিরা পার্থিব ধন-দৌলতের জন্য কখনো ইন্তেজারি করেন না; যা সুফি দর্শনে ফানা আনিল হাওয়া বলা হয়। দয়াময় প্রভুর ইচ্ছার ওপর কারও কোনো কর্তৃত্ব কিংবা কারও নিয়ন্ত্রণ নেই। মাওলানা বজলুল করিম মন্দাকিনী (রহ.) তার কালামে লিখেছেন, ‘রূপ মনোহর, নৈরূপ বরণ, নৈরূপে পরিয়ে, রূপ আবরণ, বহুরূপী রূপে, নিত্যনব সাজে, দেখাও রূপেরি শান।’

আল্লাহতায়ালা সৃষ্টির ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়ে শান ও কুদরতের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে থাকেন। আল্লাহতায়ালা সৃষ্টির পরিবর্তন-বিবর্তন ও ভাঙা-গড়ার মাধ্যমে বান্দার জন্য বিভিন্ন ধরনের উপমা উদাহরণ তুলে ধরে থাকেন; যা থেকে মানবকুল শিক্ষা নিতে পারে। যার ধারাবাহিকতা সৃষ্টির শুরু থেকে এখনো অব্যাহত রয়েছে। এরশাদ হয়েছে, ‘কুল্লা ইয়াওমিন হুয়া ফী শান।’ (সূরা আর-রহমান: ২৯)। অর্থাৎ তিনি সর্বদাই নিত্যনতুন কাজে মনোযোগ দেন।

আল্লাহতায়ালা হজরত আদম (আ.) ও হজরত হাওয়া (আ.) দুজনকে সৃষ্টি করে জান্নাতে রেখে দিয়েছিলেন। জান্নাতে বসবাসের এক পর্যায়ে আল্লাহতায়ালার হুকুম অমান্য করে তথা ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে গন্দম ফল তথা নিষিদ্ধ বস্তু খাওয়ার অপরাধে তাদের দুনিয়াতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তাদের পৃথিবীতে পাঠানোর মাধ্যমে জমিনের আবাদ প্রক্রিয়া শুরু হয়। সেই থেকে শুরু হয় সৃষ্টির ভাঙা-গড়ার নিত্যনতুন প্রক্রিয়া।

এ ধারাবাহিকতা কেয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। হজরত আদম (আ.) ও হজরত হাওয়া (আ.) কে ধরাধামে পাঠানোর মাধ্যমে মহান প্রভু সৃষ্টির আড়ালে থাকিয়া এক অপরূপ খেলা খেলিতেছেন। মাওলানা বজলুল করিম মন্দাকিনী (রহ.) তার কালামে আরও লিখেছেন, ‘কে তুমি হে সখা, আড়ালে থাকিয়া, হরিলে আমারি প্রাণ। ছলনা কৌশলে, জগৎ মজালে, এমন মোহনী জান।’

সৃষ্টির ভাঙা-গড়ার অপূর্ব লীলাখেলার বৈচিত্র্যের মধ্যে যিনি নিজেকে রবের ইচ্ছার অধীনে বিলীন করতে পেরেছেন। তিনিই হলেন প্রকৃত সুফি। পার্থিব জগতে সুফিরা যেমন দুঃখ-যাতনার সম্মুখীন হয়েছেন, রবের ইচ্ছার ওপর স্থির থেকেছেন। নবিদের ক্ষেত্রেও এরূপ দেখা যায়। হজরত ইবরাহিম (আ.), হজরত জাকারিয়া (আ.) কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছিলেন।

মহান প্রতিপালক সময় সময় বান্দার ভালোবাসার পরীক্ষা নিয়ে থাকেন। বান্দাকে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষার সম্মুখীন করে সাজানো- গোছানো জীবন সংসার নিমিষেই তছনছ করে দিয়ে ঘরের বাইর করে দেন। যারা রবের প্রেমে বিভোর তথা ফানা থাকেন, তারাই শুধু প্রেমের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেন। তাদের কোনো দুঃখ-যাতনা-বেদনা বিন্দু মাত্র টলাতে পারে না। যে পরীক্ষাটিতে হজরত মনসুর হাল্লাজ (রহ.)কে টলাতে পারেননি।

যারা আল্লাহতায়ালার নেওয়া পরীক্ষায় হাসি মুখে অটল থাকতে পারবেন, রবের ইচ্ছাকে নিজের ইচ্ছা মনে করবেন, তারাই সুফির মর্যাদা লাভ করবেন। দুনিয়া ও আখিরাতে কামিয়াবি লাভ করবেন। আল্লাহ সুফিদের পথ অনুসরণ করে দোজাহানের পাথেয় অর্জনের তৌফিক দান করুন। আমিন।

Related posts

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম এর পরিবর্তে ৭৮৬ লেখা যাবে কি ?

News Desk

নবজাতকের কানে আজান দেওয়ার ইসলামি বিধান কি ?

News Desk

আল আকসা মসজিদ মুসলমানদের কাছে কেন এতো গুরুত্বপূর্ণ

News Desk

Leave a Comment