গত সোমবার মধ্যরাতে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ‘দ্য বেস্ট ফিফা ফুটবল অ্যাওয়ার্ডস’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে পুরুষদের ক্যাটাগরিতে বর্ষসেরা কোচ, ফুটবলার ও গোলকিপার—তিন জনই আর্জেন্টিনার। শুধু তাই নয়, সেরা সমর্থকের পুরস্কারও চলে গেছে আর্জেন্টিনার দখলে। আর এমনটা হওয়ারই ছিল। কেননা, ৩৬ বছরে দলটি তৃতীয় বারের মতো বিশ্বকাপ জিতেছে। শুধু জিতেছে বললে কমই বলা হবে; তারা তাদের সেরাটা দেখিয়েছে বিশ্বকাপ মঞ্চে, ফুটবল বিশ্বকে উপহার দিয়েছে ইতিহাসের সেরা ফাইনাল খেলাটাও।
আর্জেন্টিনা (মেসি-এমিলিয়ানো মার্টিনেজ-লিওনেল স্কালোনি)
এদিকে আবারও শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপার দৌড়ে বেনজেমা-এমবাপ্পেদের পেছনে ফেললেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক লিওনেল মেসি। তবে এটা সবারই জানা ছিল আগে থেকে। বিশ্বকাপজয়ী দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন লিওনেল মেসি। প্রথম ম্যাচে সৌদির বিপক্ষে হারের পর এরপর টানা প্রতি ম্যাচেই তিনি দানবীয় পারফর্ম করে দলকে শেষ অব্দি বিশ্বকাপ ট্রফির স্বাদ নিয়েছেন। এ সময় এলএমটেন মোট ৭ গোল করার পাশাপাশি ৩টি গোলে অ্যাসিস্ট করেছিলেন। সেই প্রত্যাশা অনুযায়ী রিয়াল মাদ্রিদ ও ফ্রান্সের তারকা ফুটবলার করিম বেনজেমা এবং নিজের পিএসজির সতীর্থ ও বিশ্বকাপ ফাইনালে ফ্রান্সের হয়ে হ্যাটট্রিক করা কিলিয়ান এমবাপ্পেকে পেছনে ফেলে ফিফার বিচারে বর্ষসেরা পুরুষ ফুটবলারের সেরা খেতাব জেতেন তিনি।
অন্যদিকে এই রাতে মেসি একমাত্র আর্জেন্টাইন নন, যিনি ফিফার মঞ্চে সেরার সম্মান পেয়েছেন। তার পাশাপাশি আর্জেন্টিনাকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করানো কোচ লিওনেল স্কালোনির হাতে উঠেছে ফিফার বিচারে বর্ষসেরা কোচের সম্মান। তিনি ২০১৮ সালে রাশিয়া বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই যেন ঘুরে দাঁড়িয়েছে দলটি। ২০২১ সালে ব্রাজিলকে হারিয়ে ২৮ বছর পর জেতে কোপা আমেরিকা। পরে ইউরো চ্যাম্পিয়ন দল ইতালিকে হারিয়ে জেতে ফাইনালিসিমা। এবং সবশেষ কাতারে ৩২ বছর পর জেতে বিশ্বকাপ ট্রফি।
এছাড়া আর্জেন্টিনা দলে অধিনায়ক লিওনেল মেসি ও কোচ লিওনেল স্কালোনি ছাড়া দলের সব থেকে আলোচিত নাম গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। তিনি যেন অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকেন আর্জেন্টিনার গোলবারে। প্রতিপক্ষের শট রুখে দিয়ে জানান দেন নিজের দক্ষতার। এছাড়া বিশ্বকাপ মঞ্চে কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডস এবং ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে টাইব্রেকারে দলকে জিতিয়ে সহায়তা করে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে। আর তার এই অতিমানবিক পারফরম্যান্সের জন্য বছরের সেরা গোলকিপারের সম্মান পেয়েছেন মার্টিনেজ।
ফেয়ার প্লে
এছাড়া এই অনুষ্ঠানের অন্যতম বড় পুরস্কার ছিল ফিফা ফেয়ার প্লে পুরস্কার, যা পান জর্জিয়ান ডিফেন্ডার লুকা লোচোশভিলি। ফুটবল বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ হয়তো তার নামই শোনেননি। তবে ইতালিয়ান লিগ সিরি ‘আ’র ক্লাব ক্রেমোনেসের এই ডিফেন্ডার যে কাজের জন্য এই পুরস্কার পেয়েছেন, তা নিঃসন্দেহে মানবতার সর্বোচ্চ উদাহরণকে সামনে আনে। এই ডিফেন্ডার এর আগে যখন অস্ট্রিয়ান লিগে উলফসবার্গার এসির হয়ে খেলছিলেন, সেই সময় এক ম্যাচে প্রতিপক্ষের এক ফুটবলারের প্রাণ বাঁচান। আর এতেই তিনি নিজের করে নেন ফিফা ফেয়ার প্লে পুরস্কারটি।
পুসকাস অ্যাওয়ার্ড
এই রাতে আরও একটি পুরস্কার পান অজানা এক খেলোয়াড়। তার নাম মার্সিন ওলেক্সি। তার নাম হয়তো অনেকে জানেও না। এমনকি বড় কোনো ক্লাবের ফুটবলারও নন। তবু তিনি প্যারিসে জিতে নেন পুসকাস অ্যাওয়ার্ড। পোল্যান্ডের ক্লাব ওয়ার্টা পোজনানের অ্যাম্পুটি ফুটবল দলের খেলোয়াড় ওলেক্সি। তার একটি পা নেই। তবে শরীরের এই প্রতিবন্ধকতা নিয়েও গত বছর তিনি করেন এক দৃষ্টিনন্দন বাইসাইকেল গোল। গত বছরের ৬ নভেম্বর পোল্যান্ডের ঘরোয়া অ্যাম্পুটি ফুটবলে স্টাল রেজেজোর বিপক্ষে বাইসাইকেল কিকে অবিশ্বাস্য গোল করেন তিনি। ইতিহাস গড়ে নাম লেখান পুসকাস অ্যাওয়ার্ডে।
এছাড়া এই রাতে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে আরো পুরস্কার পেয়েছেন যারা—বর্ষসেরা নারী খেলোয়ড়ের পুরস্কার পেয়েছেন স্প্যানিস ক্লাব বার্সেলোনার মিডফিল্ডার অ্যালেক্সিয়া পুটেলাস, বর্ষসেরা নারী কোচ ইংল্যান্ডের সারিনা উইগম্যান, বর্ষসেরা নারী গোলরক্ষক ইংল্যান্ডের মেরি ইয়ার্পস, সেরা ভক্ত আর্জেন্টিনা।