অভিনন্দন, ফুটবল কন্যারা
খেলা

অভিনন্দন, ফুটবল কন্যারা

শুধু দেশের ফুটবল নয়, দেশের ক্রীড়াঙ্গনের ইতিহাসে এমন বিরল সংবর্ধনা আর কেউ পায়নি। নারী সাফের চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ ফুটবল দলের দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে গোটা দেশ থমকে গিয়েছিল। দেশের ক্রীড়াঙ্গনে সাফল্য আগেও এসেছিল। মানুষকে আনন্দ দিয়েছিল। কিন্তু এমন আবেগে ভাসেনি কেউ। নারী ফুটবলাররা সাফে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশে ফিরে বিমানবন্দরে পেলেন রাজসিক সংবর্ধনা।

নেপালের কাঠমান্ডু থেকে বিমানটি ঢাকার মাটিতে পা রাখে গতকাল বুধবার দুপুরে। ফুটবলের বীরকন্যারা বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে ঢোকার আগেই দেখেন শত শত মানুষের ভিড়। ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে কেক খাওয়ানো হয় খেলোয়াড়দের। ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের মুখে কেক তুলে দেন। বাফুফের নারী ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণকে কেক খাওয়ান। এভাবে একে একে খেলোয়াড়দের মুখে কেক তুলে দেওয়া হয়। সাদা কাপড়ের ওপরে লাল রঙে লেখা চ্যাম্পিয়ন ব্যান্ড পরিয়ে দেওয়া হয় খেলোয়াড়, কোচ, কর্মকর্তাদের। লাউঞ্জের ভেতরে তখন উপচে পড়া ভিড়। কর্মকর্তারা ছুটে গিয়েছিলেন ট্রফি জয়ীদের দেখার জন্য। বিমানবন্দরে দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করছেন এমন একাধিক কর্মকর্তার ভাষ্য হচ্ছে, তারা এমন ভালোলাগার উপলক্ষ্য আর পাননি। আর দেখেননি। আগেও এই পথে বিদেশ থেকে খেলোয়াড়রা সাফল্য এনেছিল কিন্তু নারী দলের এই জয় যেন পৃথিবীর সব চূড়া ছাড়িয়ে গেছে।



বিমানবন্দরের এই উৎসবের আমেজ ততক্ষণে দেশ জুড়ে ছড়িয়ে গেছে। রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, ময়মনসিংহের কলসিন্দুর গ্রাম, রংপুরের সদ্যপুষ্কুরিণীর জয়পাড়া গ্রাম পর্যন্ত আনন্দের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে। বিমানবন্দরে ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত সাবিনা, সানজিদা, কৃষ্ণা, মারিয়া, মনিকারা ছাদখোলা বাসে ওঠেন বেলা ৩টায়। শুরু হয় আনন্দ শোভাযাত্রা। মানুষের ভিড় দেখে তারা হতভম্ব। বিমনবন্দর যেন জনসমুদ্র। পথে পথে মানুষের ভিড়। ব্যানার নিয়ে হাজির মানুষ। চিৎকার দিয়ে ফুটবলের জন্য স্লোগান দিচ্ছে। ছাদখোলা বাসে দাঁড়িয়ে সাফ চ্যাম্পিয়ন নারী ফুটবলাররা হাত নেড়ে উৎসুক জনতার অভিনন্দনের জবাব  দেন।


নারী ফুটবলাররা সাফে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশে ফিরে পেলেন রাজসিক সংবর্ধনা। ছবি: আবদুল গণি

নারী সাফে বাংলাদেশ খেলতে শুরু করে ২০১০ সালে। তারও আগে থেকে ভারত, নেপাল নারী ফুটবলের পথে হাঁটছে। বিশেষ করে ভারতীয় ফুটবলের ঐতিহ্য কয়েক দশকের। যেটা নেই বাংলাদেশের নারী ফুটবলের। দেশের ফুটবল যখন বারবার ব্যর্থতার খবরে ঢেকে যায়, তখন নানা বাধা পেরিয়ে আসা নারী ফুটবল দল ছোট ছোট সাফল্য দিয়ে আসছিল। এই নারীদের প্রতি বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের ভালোবাসা রয়েছে। কারণ বাংলাদেশের নারী ফুটবলাররা পারিবারিকভাবে অর্থকষ্টে ছিলেন। অনেকের ঘর ছিল না। বৃষ্টির রাতে জেগে বসে থাকতে হয়েছে। ভাঙা ঘরে পানি ঢুকেছে। বন্যা হলে চৌকি ভেসে গেছে। দিনমজুর কিংবা কৃষক পিতার কাজ না থাকলে অনেক সময় ঘরে তিন বেলা খাবার থাকত না। অভাবের সংসারে দুঃখের শেষ নেই। বাধ্য হয়ে কন্যাদের বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন অনেক বাবা-মা। এমন পরিবারের সন্তানরা ফুটবল খেলবে প্রথমে সেটা এই সমাজের অনেকেই মেনে নিতে পারেননি। সমাজের ভয়ে পরিবার থেকেও ফুটবল মাঠে যাওয়ার সাড়া মেলেনি। তারপরও লুকিয়ে লুকিয়ে ফুটবলের বন্ধুর পথে পা বাড়িয়েছেন অদম্য কৃষ্ণা, সানজিদা, মনিকা, স্বপ্নারা। আর তাদের জন্যই দেশের এই সাফল্য। সে কারণেই সাফে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের নারী ফুটবলারদের প্রতি মানুষের এত ভালোবাসা। ওরা নিজেরাও বুঝতে পারেননি সাফের শিরোপা জয় এদেশের আপামর সাধারণ মানুষকে এত আনন্দ দেবে।


নারী ফুটবলাররা সাফে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশে ফিরে বিমানবন্দরে পেলেন রাজসিক সংবর্ধনা। ছবি: আবদুল গণি

নারী সাফে টানা পাঁচটি আসরে ভারত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তাদের দুর্গ ভাঙার মতো কারো শক্তি ছিল না। সবাই জেনে গিয়েছিল সাফ মানেই ভারত চ্যাম্পিয়ন। সেই ভারতকে দেখিয়েছে বাংলার নারীরা কীভাবে পায়ে পায়ে ফুটবল খেলে। খেলার কিকঅফ থেকে শুরু করে শেষ বাঁশি পর্যন্ত দুর্দান্ত খেলে ভারতকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে। ৬-০ গোলে হারিয়েছে পাকিস্তানকে। মালদ্বীপকে হারিয়েছে। সেমিফাইনালে ভুটানকে হারিয়েছে ৮-০ গোলে। সাফের লড়াইয়ে তিন বার নেপালের মুখোমুখি হয়ে বাংলাদেশ হেরেছে। এবার ফাইনালে সেই নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। সাফের সব কয়টি পুরস্কার পেয়েছে বাংলাদেশ। চ্যাম্পিয়ন, ফেয়ার প্লে ট্রফি, সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার পেয়েছে বাংলাদেশ। সেরা প্লেয়ার হয়েছেন অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। রুপনা চাকমা টুর্নামেন্টের সেরা গোলকিপার হয়েছেন। পাঁচ খেলায় বাংলাদেশ ২৩ গোল করেছে এবং ১ গোল হজম করেছে। এমন খেলা দেশের ফুটবলে সারা জীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবে। অভিনন্দন, সোনার কন্যারা।

 

Source link

Related posts

LIV গল্ফের ফিল মিকেলসন একটি মুছে ফেলা সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে গল্ফের ভবিষ্যত সম্পর্কে একটি দৃঢ় সতর্কতা পাঠান

News Desk

সাকিব আল-মাহদি, “আদর্শবাদী।”

News Desk

জিম হারবাঘের সাথে প্রথম দিন, এবং চার্জারদের “উপাদান” সম্পূর্ণ নতুন অর্থ গ্রহণ করে

News Desk

Leave a Comment