মাশরাফি বিন মুর্তজার পর দ্বিতীয় অধিনায়ক হিসেবে বিপিএলে একাধিক শিরোপা জেতার রেকর্ড গড়েছেন ইমরুল কায়েস। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস যে তিনবার বিপিএলের শিরোপা জিতেছে, এর দুবারই তিনি অধিনায়ক। কাল প্রথম আলোর সাক্ষাৎকারে বিদেশি তারকায় ঠাসা কুমিল্লা দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন ইমরুল।
অধিনায়ক হিসেবে দ্বিতীয়বার বিপিএল শিরোপা জিতলেন, কেমন লাগছে?
ইমরুল কায়েস: এটা দারুণ অনুভূতি। বিপিএলের ট্রফি তো আর চাইলেই পাওয়া যায় না। কুমিল্লা পরপর দুটি বিপিএল জিতেছে, দুবারই আমি নেতৃত্বে ছিলাম। নিজেকে খুব সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে। কুমিল্লা যেহেতু বড় ফ্র্যাঞ্চাইজি, প্রত্যাশাও বেশি থাকে। মনে হয় সেটা পূরণ করতে পেরেছি।
কুমিল্লা তিনবার ফাইনাল খেলে তিনবারই শিরোপা জিতেছে। ফাইনালে ভালো করার কোনো রহস্য?
ইমরুল: কুমিল্লা দলটা অনেকটা পরিবারের মতো। আমাদের বিদেশিরাও এখানে খেলে বুঝেছে যে কুমিল্লার সঙ্গে বাকি ফ্র্যাঞ্চাইজির পার্থক্যটা কোথায়। এখানে যেহেতু সালাউদ্দিন স্যার আছেন, অধিনায়কের কাজ অনেকটা সহজ হয়ে যায়। কারণ, তিনি মাঠের বাইরের বিষয়গুলো সামলে নেন। আমাদের কাজ থাকে শুধু মাঠে মনোযোগ দিয়ে খেলা। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে এটা গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে সবাই কুমিল্লায় খেলতে পছন্দ করে। এটাই সাফল্যের একটা বড় কারণ।
এর আগে ফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতা কি এবারের ফাইনালের শেষ কয়েক ওভারে সাহায্য করেছে?
ইমরুল: ফাফ, নারাইন, মঈনরা অনেক ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলেছে। অনেক ফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতা আছে তাদের। আমি নিজেও চারটা ফাইনাল খেলেছি। ওই সময় যদি প্রতিপক্ষ দলে সাকিব বা গেইল ব্যাটিং করত, তাহলে খেলাটা সহজেই বের হয়ে যেত। যেহেতু বরিশালের অনভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানরা খেলছিল, আমি ভেবেছিলাম যদি রানরেট একবার ৮ বা ৯-এ নিতে পারি, তাহলে ওরা চাপে পড়বে। শেষ পর্যন্ত তা–ই হয়েছে।
নারাইন, মোস্তাফিজের জন্য ম্যাচের এমন মুহূর্ত নতুন নয়। কিন্তু শহিদুলকে শেষ ওভারের আগে কী বলেছিলেন?
ইমরুল: বলেছি, যেভাবে সে বল করতে চায়, সেই বলটাই করতে। বোলিং মার্কে দাঁড়িয়ে যেন দোটানায় না ভোগে, সেটা নিশ্চিত করেছি। পরিষ্কার মন নিয়ে বল করতে বলেছি। সে আমার কথা শুনেছে। ভালোভাবেই কাজটা করেছে।
এবার কুমিল্লায় ফাফ ডু প্লেসি, সুনীল নারাইনের মতো ক্রিকেটার ছিলেন। মাহমুদুল হাসান ও পারভেজ হোসেনও ছিলেন। একই সঙ্গে বড় তারকা ও একেবারে নতুনদের নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
ইমরুল: বিদেশিদের ক্ষেত্রে হয় কি, তারা বেশির ভাগ সময় মাঠের খেলাটা নিয়েই ভাবে। দলের সঙ্গে তেমন সম্পৃক্ত হয় না। নারাইন দেখবেন যেকোনো লিগেই খুব বেশি কথা বলে না। চুপচাপ থেকে নিজের খেলা খেলে চলে যায়। এবার দেখবেন সে অনেক কথা বলেছে। আমি তার সঙ্গে অনেকবার ব্যক্তিগতভাবে কথা বলে বুঝিয়েছি, দলে তার গুরুত্ব কত বেশি। তাকে বুঝিয়েছি যে তার মতো বড় ক্রিকেটার যদি মাঠে বা ড্রেসিংরুমে যদি দু-একটা কথা বলে, তাহলে আমাদের নতুনদের অনেক সাহায্য হবে। এতে সে–ও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছে। তারা যদি শুধু টাকা নেয় আর খেলে, তাহলে তো আমাদের লাভ হলো না। আমি কারও সঙ্গে ভাব নিয়ে থাকিনি। আমি তাদের তুলনায় ছোট ক্রিকেটার। কিন্তু আমি চেষ্টা করেছি দলের জন্য তাদের একত্র করতে। তারাও খুব উপভোগ করেছে আমার সঙ্গে কাজ করে।
মাঠে দেখেছি, ডু প্লেসি-নারাইনরা অনেক পরামর্শ দিয়েছেন আপনাকে। সেটা আপনি কীভাবে গ্রহণ করেছেন?
ইমরুল: ওরা সব সময় পরামর্শ নিয়ে আসত। কিন্তু আমি সিদ্ধান্তটা নিজের বিচারবুদ্ধি ব্যবহার করেই নিতাম। গতকাল গেইল যখন ব্যাটিং করছিল, তখন নারাইন এসে আমাকে ফাইন লেগ পেছনে নিয়ে পয়েন্ট ওপরে নিয়ে আসতে বলেছিল। কিন্তু ওই সময় আমার সেটা মনে হয়নি। পরে যখন আমার সিদ্ধান্তটা ঠিক হয়, তখন নারাইন নিজেই এসে বলেছিল যে না, তুমিই ঠিক ছিলে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে পরে সে আমার কাছে নতুন কোনো পরামর্শ নিয়ে আসেনি। দলের মধ্যে ওই সমন্বয়টা ছিল। সবাই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করত। ওরা একেকজন একেক রকম পরামর্শ দেবে, কিন্তু আমি কোনটা নিচ্ছি, সেটা বড় ব্যাপার।
দলে অনেক স্থানীয় ক্রিকেটারও ছিলেন, যাঁরা তাঁদের জায়গা থেকে যথেষ্ট বড় মাপের খেলোয়াড়…
ইমরুল: মুমিনুলের কথাই ধরুন না। সে কিন্তু আমাদের টেস্ট অধিনায়ক। মুমিনুল ম্যাচ খেলেনি। কিন্তু ম্যাচের বিরতিতে এসে ঠিকই আমাকে পরামর্শ দিত। কখনো বোঝাই যায়নি যে সে বাংলাদেশের এত বড় একজন ক্রিকেটার। মনে হবে না যে তার মন খারাপ। এটা একটা দলের ভালো করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বিপিএলে নিজে মাত্র দুবার ইনিংস উদ্বোধন করেছেন। অধিনায়ক বলেই কি এই ত্যাগ স্বীকার?
ইমরুল: আমি কিন্তু উদ্বোধনে নেমে এক ম্যাচে ৮১ রান করেছিলাম। তবু আমি জয়কে (মাহমুদুল হাসান) জায়গা ছেড়ে দিয়েছি। কারণ, দলটা সবার আগে। আমি নিজের কথা চিন্তা করিনি। চিন্তা করেছি দলের কথা। আমি যদি নিচে খেলি, তাহলে হয়তো বাঁহাতি স্পিনারদের মেরে দিতে পারব। খেলাটাও আমাদের জন্য সহজ হবে। যদি অধিনায়ক এই ত্যাগ স্বীকার না করে, তাহলে দলের জন্য কঠিন হয়ে যায়।
নারাইনকে উদ্বোধনে পাঠানোর সিদ্ধান্তও আপনার?
ইমরুল: আমার মনে হচ্ছিল টপ অর্ডারে একজন বিগ বিটার দরকার। নারাইনকে আমরা নিচে ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারছিলাম না। সে ওই রকম ইনিংস খেলেছে বলেই আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। এটা ঝুঁকি ছিল। ঝুঁকিটা কাজে লেগেছে।
নিজের ক্যারিয়ারে বিপিএল সাফল্য কোনো প্রভাব ফেলবে?
ইমরুল: আমি আরও কয়েকটা মৌসুম ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে যেতে চাই। যদি ফিট থাকি, ভালো থাকি, তাহলে তিন-চার মৌসুম বিপিএল খেলে যাব। বাংলাদেশ দলে সুযোগ এলে তাহলে ভালো করার চেষ্টা করব। যদি না–ও আসে, তাহলেও সমস্যা নেই। আমি দিন শেষে ক্রিকেটার, ক্রিকেট খেলে যাব।