কাতারের মাটিতে ফুটবলের মহাযজ্ঞ বসতে বাকি আর মাত্র ৫ দিন। বিশ্ব শ্রেষ্ঠত্বের এই মহারণে সোনার ট্রফির জন্য ঝাঁপিয়ে পড়বে ৩২টি দেশ। স্বাভাবিকভাবেই বিশ্ব শ্রেষ্ঠত্বের সেই৮ মুকুটের দাবিদার ৩২ দলের সবাই। তবুও সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স, শক্তিমত্তা, টেকনিক আর ইতিহাস মিলিয়ে ফেভারিট তালিকা করতে গেলে সেখানে চলে আসে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানি, স্পেন, ফ্রান্সের নামগুলোই। শিরোপা জেতার সেই ফেভারিট দল হয়েই এবার কাতারে পা রাখার কথা লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা।
আলবিসেলেস্তেদের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স থেকে শুরু করে দুর্দান্ত একটি স্কোয়াড, সঙ্গে লিওনেল স্ক্যালোনির বুদ্ধিমত্তা, আর সবার উপরে তো রয়েছেন একজন লিওনেল মেসিই। দুর্দান্ত ছন্দে থেকে বিশ্বকাপের মঞ্চে খেলতে গেছে সাতবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী মেসি। এই আর্জেন্টিনাকে ফেরভারিট না বলে উপায় কি? তবে এবার খোদ মেসির মুখেই শোনা গেলো শুধুমাত্র মানুষের ধারণা মতেই আর্জেন্টিনা ফেভারিট। নিজেরাও যদি এই বিশ্বাস করে তাহলেই নাকি বড় ভুল করে বসবে তারা।
বিশ্বকাপ মিশনে ইতোমধ্যেই সংযুক্ত আরব আমিরাতে আর্জেন্টিনা দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন পিএসজির হয়ে এই মৌসুমের শুরু থেকে দুরন্ত ছন্দে থাকা মেসি। সেখানে স্বাগতিকদের সঙ্গে একটি প্রোতি ম্যাচ খেলে কাতারে পা রাখবে দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।
সম্প্রতি হোর্হে ভালদানোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আর্জেন্টাইন অধিনায়ক বলেন, ‘আমি মনে করি আমরা এখন একটা ভালো মুহূর্তে আছি। তবে মানুষের পাগলামিতে আমাদের গা ভাসিয়ে দেওয়া চলবে না। আমাদের বিশ্বাস করা চলবে না যে আমরা বিশ্বকাপের ফেভারিট। আমাদের বাস্তববাদী হতে হবে, প্রতিটা ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতে হবে।’
মেসির সেই কথার সঙ্গে অবশ্য একমত হতে পারবেন না অনেক আর্জেন্টাইন ভক্ত থেকে শুরু করে ফুটবল বোদ্ধারাও। টানা ৩৫ ম্যাচে অপরাজিত আলবিসেলেস্তারা, তিন বছর পার হয়ে গেছে দলটিকে হারাতে পারেনি বিশ্বের কেউ। সামনে আর দুই ম্যাচ জিতলেই সবচেয়ে বেশি ম্যাচে অপরাজিত থাকার বিশ্ব রেকর্ডটাও নিজেদের করে নেবে মেসিবাহিনী। সেই দল তো এবার বিশ্বকাপে পরিষ্কার ফেভারিট হিসেবেই যাওয়ার কথা।
অপরাজিত থাকার কারণেই নয় শুধু, আর্জেন্টিনাকে ফেভারিট ধরার অন্যতম কারণ হচ্ছে গত বছর চিরপ্রতিদ্বিন্দ্বী ব্রাজিলকে তাদেরই মাটিতে হারিয়ে কোপা আমেরিকার শিরোপা জয়। ২৮ বছরের অপেক্ষা শেষে আর্জেন্টিনা দেখা পায় কোনো আন্তর্জাতিক শিরোপার। মেসির আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের আন্তর্জাতিক শিরোপার আক্ষেপ মিটিয়ে দেয় কোপার সেই শিরোপা। আর সেই কোপা জয়ের পর থেকেই যেন বিশ্বকাপে চোখ রাখে আর্জেন্টিনা।
কোপা আমেরিকা জয়ের সেই মুহুর্তের কথা স্মরণ করে সাক্ষাৎকারে মেসি বলেন, ‘এত কিছুর পর অবশেষে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের হয়ে একটা দারুণ মুহূর্ত এলো! অনেক বছর পর, এতগুলো হতাশা পেরিয়ে অবশেষে এসেছে মুহূর্তটা। সে কারণেই আমি কোপা আমেরিকা জেতার পর কেঁদে ফেলেছিলাম।’
কোপা আমেরিকার পর লা ফিনালিসিমায় ইউরো চ্যাম্পিয়ন ইতালিকে৩-০ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপের পালে যেন আরও একটু বেশি হাওয়া দিয়ে যায় আকাশী নীলের শিবির।
দুর্দান্ত সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের সঙ্গে কোচ স্ক্যালোনির কার্যকরী দিক নির্দেশনা আর দলের সবাই এক হয়ে খেলার চরম স্পৃহাই যেন আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দিচ্ছে অন্য কোনো দল থেকে।
দলের প্রাণভোমরা মেসিও যেন এবার সবুজের গালিচায় ফুটবলের ফুল ফুটিয়ে চলেছেন প্রতিনিয়ত। বার্সেলোনা ছেড়ে গত মৌসুমে পিএসজিতে আসার পর খুব একটা ভালো সময় যায়নি এলএম টেনের। তবে চলতি মৌসুমের শুরু থেকে মেসি যেন জ্বলে উঠেছে আপন মহিমায়। নেইমার আর এমবাপ্পেকে নিয়ে অপ্রতিরোধ্য এক আক্রমণ ভাগ গড়ে তুলেছেন নিজের দায়িত্বেই। গোল করা আর করানো থেকে শুরু করে গতি আর ড্রিবলিং দিয়ে পুরো পিসজির হয়ে যেন প্রতিপক্ষের উপর ছড়ি ঘুরিয়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়তই। মেসির খেলা দেখে অনেক ফুটবল বোদ্ধার মতে এ যেন সেই তরুণ মেসিরই প্রতিরূপ।
মেসিরা যতই বলুক তারা ফেভারিট নয়, তবে এমন একটি দল নিয়ে কাতারের মাটিতে আশায় বুক বাধতে পারে যে কোনো আর্জেন্টাইন ভক্তই। আলবিসেলেস্তাদের বিশ্বকাপ মিশন শুরু হবে আগামী ২২ সেপ্টেম্বর। বিশ্বকাপের ‘সি’ গ্রুপে আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ সৌদি আরব, মেক্সিকো আর পোল্যান্ড।