মরুর বুকে আর মাত্র তিনদিন পরই বাজবে বিশ্বকাপের দামামা। এরই মাঝে বিশ্ব ফুটবলের এই মহারণের উন্মাদনা ছুঁয়ে গেছে সারাবিশ্বের মানুষকে। চার বছরের অপেক্ষা শেষে মাঠে গড়াবে বিশ্বকাপের মহাযজ্ঞ। উৎসাহ বা রোমাঞ্চের কমতি নেই সোনার ওই ট্রফির জন্য লড়াইয়ে নামা সৈনিকদেরও।
বিশ্বকাপের আগে অবধারিতভাবেই শুরু হয়ে গেছে ফেভারিটদের নিয়ে জল্পনা-কল্পনা। কারা এগিয়ে বিশ্বকাপের ট্রফিটি নিজেদের করে নেওয়ার দৌড়ে, এই নিয়েই যেন এখন সবার মাথাব্যাথা। বিশ্বকাপের শিরোপা জেতার লড়াইয়ে ফেভারিট তালিকা নিয়ে ভাবনা রয়েছে ফুটবলারদেরও। কদিন আগেই এক সাক্ষাৎকারে আর্জেন্টাইন অধিনায়ক মেসি ফেভারিট হিসেবে বেঁছে নিয়েছে ব্রাজিল, ফ্রান্স আর ইংল্যান্ডকে। নিজের দলকে ফেভারিটের কাতারে রাখতেই যেন ঘোর আপত্তি মেসির।
মেসির সেই সাক্ষাৎকারের পর এবার ব্রাজিলিয়ান তারকা নেইমার ফেভারিট হিসেবে বেঁছে নিয়েছেন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনাকেই। এছাড়াও ব্রাজিলের এই পোস্টার বয় জানান, মেসিকে নাকি তিনি বলে দিয়েছেন কাতারের ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে শিরোপা জিতবে ব্রাজিল।
বুধবার (১৬ নভেম্বর) ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ নেইমারের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে। সেখানেই জানা যায় নেইমারের বিশ্বকাপ ভাবনা নিয়ে।
নেইমার বলেন, বিশ্বকাপ জেতা আমার সর্বোচ্চ স্বপ্ন। যখন থেকে আমি বুঝি ফুটবল কী, তখন থেকেই এই স্বপ্ন নিজের মনে লালন করছি। এবার আমার সামনে আরেকটি সুযোগ। আমি আশাবাদী এবার দারুণ কিছু হবে কাতারে। আসলে সবাই বিশ্বকাপ নিয়ে বড় আশাটাই করে। সবাই চায় সোনালি ট্রফিটি ছুঁয়ে দেখতে।
কাতারের মাটিতে বিশ্বকাপের দৌড়ে কে এগিয়ে এই নিয়ে কথা বলতে গিয়ে নেইমার বলেন, দেখুন বিশ্বকাপ সব সময়ই বিস্ময়ের। তবে এবার আমার কাছে এবারের আসরের ফেভারিট মনে হয় আর্জেন্টিনা, জার্মানি, স্পেন ও ফ্রান্সকে। আমি মনে করি, এই চারটি দলের সঙ্গে ব্রাজিলও ফাইনালে যাওয়ার যোগ্যতা রাখে। আচ্ছা, ইংল্যান্ডের নামটা ভুলে গেলাম। হ্যা, তাদেরও বেশ ভালো সম্ভাবনা রয়েছে এবার। সত্যি বলতে, আমি ব্যক্তিগতভাবেও হ্যারি কেইন ও সানচোকে পছন্দ করি। তারা দু’জনই অসাধারণ ও দুর্দান্ত খেলোয়াড়। আমি এমন খেলোয়াড়দের পছন্দ করি, যাদের এমন যোগ্যতা রয়েছে।
নেইমারের পিএসজি সতীর্থ ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু মেসিকে নিয়ে নেইমার বলেন, বিশ্বকাপ নিয়ে আমি খুব বেশি মাতামাতি করি না। তবে কখনও কখনও মজার ছলে অনেকের সঙ্গেই বলি এবার আমরা ফাইনাল খেলব। একদিন মেসিকে বলেছিলাম, কাতারের ফাইনালে আমরা তোমাদের হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হবো। সে এটা শুনে হাসতে লাগল। মেসি এবং এমবাপ্পের সঙ্গে খেলাটা সত্যিই অনেক আনন্দের। তারা দু’জন সত্যিকারের তারকা, যেখানে লম্বা সময় ধরে মেসিকে বিশ্বের সেরা ভাবা হয়। এমবাপ্পে এখনও তরুণ, সে দিন দিন উন্নতি করছে, নিজের প্রতিভার প্রমাণ দিচ্ছে এবং এখনও সে উন্নতির পথে। তাদের মতো খেলোয়াড়দের সঙ্গে খেলাটা সব সময়ই দারুণ কিছু আমার জন্য।
ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ব্রাজিলিয়ান এই তারকা বলেন, আমি অত্যন্ত সাধারণ একজন ব্যক্তি। যেহেতু আমি মানুষ, আমারও আবেগ অনুভূতি আছে। মাঝে মধ্যে আমাকে দুঃখ পেতে হয়, আবার কখনও হাসতে হয়। আসলে আমি নিজেকে নিয়ে গর্বিত। দেখুন, জীবনের নানামুখী অভিজ্ঞতা থেকেই আপনাকে শিক্ষা নিতে হবে। ভুলই আপনাকে নতুন পথ দেখাবে। কেউই জন্মগতভাবে পারফেক্ট হয় না। সবাইকে পদে পদে নানা বাঁধা পেরিয়েই নিজেকে শোধরাতে হয়।
নিজের ক্যারিয়ারে বিশ্বকাপের অপূর্ণতা নিয়ে নেইমার বলেন, আমার কাছে মনে হয় না যে বিশ্বকাপ না জিতলে আমার ক্যারিয়ুয়ার অপূর্ণ থেকে যাবে। আমি এখন পর্যন্ত অনেক কিছুই পেয়েছি। যেটা আমি নিজে কখনোই প্রত্যাশা করিনি। তাই আজও যদি আমার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যায় তবু কোনো আফসোস থাকবে না। আমি দিনশেষে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ।