সংবাদ সম্মেলনে আর্জেন্টিনা আর বাংলাদেশ মিলেমিশে একাকার! লিওনেল স্কালোনিই মিলিয়ে দিয়েছেন। আলবিসেলেস্তেদের ফুটবলে বাংলাদেশের মানুষের সুরভিত হওয়ার খবর জানেন আর্জেন্টিনার কোচও। আর্জেন্টাইনদের মতোই এ দেশের মানুষের চাওয়া। তাতে ব্যাপারটা দাঁড়িয়ে গেছে—আর্জেন্টিনা জিতলে বাংলাদেশও জেতে!
ব্রাজিল লাতিন ফুটবলের সুরভি ছড়িয়েছে বাংলাদেশে।
১৯৮৬ বিশ্বকাপে ডিয়েগো ম্যারাডোনার পর একালের লিওনেল মেসির পায়ের জাদুতে সেই সৌরভের অনেকটাই এখন আর্জেন্টাইন। নীল-সাদার জার্সিতে ছেয়ে গেছে বিভিন্ন নগরী, মানুষও বেশ মজে গেছে লিওনেল মেসিতে। লাল-সবুজের দেশের এই উন্মাদনার খবর জায়গা করে নিয়েছে বিশ্ব মিডিয়ায়। এটা দেখে লিওনেল স্কালোনির বিস্মিত হওয়ারই কথা। তবে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বিস্ময় চেপে রেখে আর্জেন্টিনার কোচ ভিনদেশের সমর্থনের রসায়ন ব্যাখ্যা করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন, ‘অনেক বছর ধরে আর্জেন্টিনার জার্সিতে মেতে উঠছে সারা বিশ্ব। তারা পাগলের মতো সমর্থন করে আর্জেন্টিনাকে। এটার শুরু ডিয়েগো ম্যারাডোনাকে দিয়ে। এখন হচ্ছে লিওনেল মেসির জন্য। বিশ্বের অনেক জায়গায় এ রকম উন্মাদনা দেখে আমরা আনন্দিত হই। এ জন্য বাংলাদেশের মানুষকে অসংখ্য ধন্যবাদ। ’
আর্জেন্টাইনদের সঙ্গে বাংলাদেশের লক্ষ-কোটি সমর্থক যোগ হওয়ায় আজ চাপটাও বেড়ে গেছে দলের ওপর। একই সঙ্গে আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনির ওপরও। তবে প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া বলে চাপ অবশ্যই কম। আর্জেন্টিনার কোচও চাপ অনুভব করছেন না, তবে নক আউটে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন, ‘অস্ট্রেলিয়া ভালো দল। লড়াইটা হবে দুটো একাদশের মধ্যে। তাই ফেভারিটের বিষয়টি এক পাশে সরিয়েই আমাদের ম্যাচটা খেলতে হবে। ছেলেরা নিশ্চয়ই এভাবেই খেলবে। অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা আছে। তাই আমাদের কাজটা কঠিন করে দিতে পারে। যতক্ষণ না সফলভাবে করতে পারছি, ততক্ষণ নিজেও বিশ্বাস করতে পারব না। ’
তিউনিশিয়া ও ডেনমার্ককে হারিয়ে শেষ ষোলোতে ওঠা অস্ট্রেলিয়ার কোচ গ্রাহাম আরনল্ডও চান দুইবারের বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনা যেন অস্ট্রেলিয়ার সেরা খেলাটা বের করে আনে, ‘একটা দল হয়ে অস্ট্রেলিয়া খেলবে এবং সবাই মাঠে সেরাটা দিতে উন্মুখ হয়ে আছে। ’ তবে দুই দলের লড়াইয়ের ব্যবধান বুয়েনস এইরেস টু ব্রিসবেনের দূরত্বের সঙ্গে তুলনীয়! ১৯৮৮ সালে প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া ৪-১ গোলে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে চমকে দিয়েছিল। এরপর ছয় ম্যাচের একটিতে ড্র ছাড়া বাকি পাঁচটিই জিতেছে আর্জেন্টিনা।
কাতারে ছন্দে ফেরা আর্জেন্টিনার জন্য এ ম্যাচও কঠিন হতে পারে না। তবে মিডফিল্ডার রোদ্রিগো দে পলের চোখে প্রতিপক্ষ এগিয়ে শারীরিকভাবে এবং গতিতে, ‘অস্ট্রেলিয়া খুব দ্রুতগতির ফুটবল খেলে। বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই লম্বা, দুই সেন্টারব্যাক বেশ দীর্ঘদেহী। এ ছাড়া উইংয়ে তারা ভালো খেলে এবং গতিও ভালো। এই জায়গায় আমাদের সতর্ক থাকতে হবে যেন বিপদে না পড়ি। ’ পোল্যান্ড ম্যাচের মতোই কিছু আশা করছেন তিনি। পোলিশদের মতো অস্ট্রেলিয়ানরাও আর্জেন্টিনাকে খেলতে দিয়ে পাল্টা আক্রমণের সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করবে, গতিতে চমকে দিতে চাইবে। তাই আক্রমণের পাশাপাশি রক্ষণভাগকেও ছায়া দিতে হবে আর্জেন্টিনার মাঝমাঠকে।
দে পল, পারেদেস, ফার্নান্দেসসহ এই তরুণ দলকে এ পর্যন্ত নিয়ে আসার পেছনে বড় ভূমিকা লিওনেল মেসি ও আনহেল দি মারিয়ার। এই দুজন জাহাজের ক্যাপ্টেনের ভূমিকা পালন করেছেন; কিন্তু দি মারিয়াকে নিয়ে বিপদে আছেন আর্জেন্টিনার কোচ। আগের ম্যাচে তাঁর পায়ের মাংসপেশিতে টান লেগেছিল। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে স্কালোনির দেওয়া সর্বশেষ তথ্য হলো, ‘ও (দি মারিয়া) কেমন বোধ করছে, সেটা পুরোপুরি জানি না। পোল্যান্ড ম্যাচে পেশির অস্বস্তি নিয়ে সে মাঠ ছেড়েছিল। ভাগ্য ভালো যে সেটা বড় চোটে রূপ নেয়নি। ওর খেলাটা অনিশ্চিত। ’ গতকাল সন্ধ্যায় শেষ ট্রেনিং সেশন দেখেই কোচ সিদ্ধান্ত নেবেন। তিন-চারটি বিকল্পও আছে তাঁর হাতে।
দি মারিয়া না থাকলেও খুব সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তিনি তো আর লিওনেল মেসি নন, যাঁর অনুপস্থিতিতে নেতিয়ে পড়ে দল। কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার ফুটবল জাগরণের সেই নেতা মাঠে থাকলেই আলবিসেলেস্তেদের রং বদলে যায়। এই খুদে জাদুকরের কারণে পুরো বিশ্ব মজেছে আর্জেন্টিনা-প্রেমে। তাদের ফুটবল সৌন্দর্যে। এটা উপভোগ করে আর্জেন্টিনা দলের প্রত্যেকটি খেলোয়াড়সহ সবাই। তাই স্কালোনি আজ আহমেদ বিন আলী স্টেডিয়ামেও পাশে চেয়েছেন সমর্থকদের, ‘ঐতিহাসিকভাবে আর্জেন্টাইনদের মধ্যে এই ফুটবল উন্মাদনা থাকে। পোল্যান্ডের মাচে মনে হচ্ছিল আমরা যেন আর্জেন্টিনায় খেলছি। এই ম্যাচেও ঠিক সে রকমই চাই। ’
আজ মাঠে নিশ্চয়ই আবার নীল-সাদার উন্মাতাল হাওয়া বইবে। তাতে নিশ্চিতভাবেই মিশে থাকবে বাংলাদেশের উন্মাদনাও।