পাঁচ বছর আগের কথা। ২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকে ঢাকায় নামার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলেন তাসকিন আহমেদ। বোলিংয়ে বিপর্যস্ত সময় কেটেছিল তার। রুগ্ণ পারফরম্যান্সের হতাশা দীর্ঘায়িত হয়নি যুগল জীবনের ছোঁয়ায়। সফরে তিন ফরম্যাটে ৬ ম্যাচ খেলে তিনি পেয়েছিলেন মাত্র ২ উইকেট, রান খরচ করেছিলেন উদারহস্তে।
এবার বদলে গেছে পুরো দৃশ্যপট। সেই দক্ষিণ আফ্রিকায় বল হাতে ধ্বংসযজ্ঞের লীলায় মাতলেন তাসকিন। তার আগুনে বোলিংয়ে পুড়ে ভস্মীভূত প্রোটিয়ারা। গতিময় ফাস্ট বোলিং ও দুর্দান্ত লাইন লেন্থের কারিশমায় গুঁড়িয়ে দিলেন প্রতিপক্ষের ব্যাটিং লাইন।
গতকাল সেঞ্চুরিয়নে ৯ ওভারে ৩৫ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন তিনি। ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বার ৫ উইকেট পেলেন তাসকিন। এর আগে ২০১৫ সালের জুনে মিরপুরে ভারতের বিরুদ্ধে অভিষেকেই ২৮ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন, যা এখনও তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ও এই দেশটিতে বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে এই কীর্তি গড়লেন তাসকিন। আফ্রিকায় সফরকারী দলের মধ্যে সর্বশেষ ২০১২ সালে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন লাসিথ মালিঙ্গা।
ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে থাকা তাসকিন এখন বাংলাদেশের পেস আক্রমণের প্রাণভোমরা। তিক্ত অতীত ভুলে এবার দক্ষিণ আফ্রিকায় তিন ম্যাচেই ৮ উইকেট তুলে নিলেন ডানহাতি এ পেসার। গত দুই বছরে অক্লান্ত পরিশ্রম, আত্মত্যাগের ফসল ঘরে তুলছেন ২৬ বছর বয়সি এ তরুণ। ফিটনেস নিয়ে কাজ করেছেন, বোলিংয়ে উন্নতি করেছেন চোখে পড়ার মতো। তিন ফরম্যাটেই দলের অটোমেটিক চয়েস, সাফল্যও পাচ্ছেন ধারাবাহিকভাবে।
তাসকিনের গর্জনে দক্ষিণ আফ্রিকা অলআউট হয়ে গেছে ১৫৪ রানে। যা বাংলাদেশের বিপক্ষে তাদের সর্বনিম্ন দলগত সংগ্রহ। সুযোগ পেয়েও আইপিএলে খেলতে পারেননি, জাতীয় দলের খেলার কারণে। স্বপ্ন পূরণের সুযোগ হারানোর ঝালটা যেন প্রোটিয়াদের ওপরই মেটালেন তিনি।
সেঞ্চুরিয়নের সুপার স্পোর্ট পার্কে ঝড়ো গতিতে রান তোলা শুরু করেছিল স্বাগতিকরা। মিরাজ ডি কককে ফেরানোর পরই তাসকিনের ঝলক শুরু। ভেরেইন্নেকে বোল্ড করেছেন ১৩তম ওভারে। পরের চার শিকারেই তাসকিনের গোলা ও মুশফিকের ক্যাচ নেওয়ার দৃশ্য বারবার মঞ্চস্থ হয়েছে। বাড়তি বাউন্স সামলাতে পারেননি মালান, প্রিটোরিয়াস। ২৯তম ওভারের তৃতীয় বলে মিলারও ক্যাচ দেন। দুই বল পরই রাবাদার ব্যাট ছুয়ে বল মুশফিকের হাতে গেলে সেঞ্চুরিয়নে ডানা মেলে উড়তে শুরু করেন তাসকিন।
নিজের ধ্বসাত্মক বোলিং নিয়ে ডানহাতি এ পেসার গতকাল বলেছেন, ‘আমার পারফরম্যান্স খুব খুশি আমি। প্রক্রিয়া ধরে রেখে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চেষ্টা করেছি। আমি কিছুটা বাউন্স পেয়েছি উইকেট থেকে। তাই আমার লাইন, লেন্থ ঠিক রাখতে চেষ্টা করেছি এবং কিছুটা বৈচিত্র্য ছিল। আমি নিজের কাজের ধরনে বিশ্বাসী, যেটা আমি গত দেড় বছর ধরে করে আসছি, এটাই সাফল্যের মূল কারণ।’