এখনো আমার সেরা ফর্মে আসিনি: তাসকিন
খেলা

এখনো আমার সেরা ফর্মে আসিনি: তাসকিন

তাসকিন আহমেদ, সন্দেহাতীতভাবে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের পেস আক্রমণের মূল অস্ত্র। ইনজুরির কারণে বর্তমানে মাঠের বাইরে থাকা এই ফাস্ট বোলারের ক্যারিয়ারে আমূল পরিবর্তন এসেছে। হাসিখুশি, চার্মিং বয়, সিনিয়রদের ছায়া থেকে বের হয়ে তাসকিন এখন দায়িত্ববান। দারুণ ফিট ও ইনফর্ম এই পেসার দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে দুর্দান্ত বোলিং করে সিরিজ-সেরার পুরস্কার জিতেছেন। একই সফরে দেশের জন্য আইপিএলের লোভনীয় প্রস্তাব হাতছাড়া করেছেন তিনি। সমসাময়িক প্রসঙ্গ নিয়ে তাসকিনের সঙ্গে কথা বলেছেন জান-ই-আলম

প্রশ্ন: ইনজুরির কী অবস্থা?
তাসকিন: ইনজুরির অবস্থা আগের চেয়ে একটু ভালো এখন। ৭ তারিখে (মে) ইংল্যান্ডে যাব ইনশাআল্লাহ। ১০ তারিখ ডাক্তারের অ্যাপয়েনমেন্ট। যতটুকু জানি, সার্জারি লাগবে না ইনশাআল্লাহ। কিন্তু ইনজেকশন লাগতে পারে। এটা দেবাশীষ দা (বিসিবির প্রধান চিকিৎসক) ভালো বলতে পারবেন।



প্রশ্ন: দক্ষিণ আফ্রিকায় দ্বিতীয় টেস্ট খেলা হয়নি, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হোম সিরিজও মিস হচ্ছে। সেরা ফর্মে থেকে খেলতে না পারার আক্ষেপ হচ্ছে কি?
তাসকিন: না, আমি তো আসলে এখনো আমার সেরা ফর্মে আসিনি। এটার জন্য কাজ করতেছি। ফর্মে না থাকলেও আমি আফসোস করতাম, বাংলাদেশ দলের হয়ে একটা ম্যাচ খেলতে না পারলে। আমি পিক ফর্মে আসি নাই এখনো, আমি কাজ করতেছি, আমার আগে পিক ফর্মে আসতে হবে। ভালো হচ্ছে, গড় ভালো হচ্ছে, তবে এখনো সেরা ফর্মে আসি নাই। আমি বিশ্বাস করি, আমি এর চেয়েও ভালো বোলিং করতে পারি। আমার দুর্বলতার জায়গায় উন্নতির অনেক সুযোগ আছে।



প্রশ্ন: তারপরও তো আসলে এই পারফরম্যান্সেই চারদিকে এত প্রশংসা। সবাই বাহবা দিচ্ছে। এটা কতটা উপভোগ করেন?
তাসকিন: না, আসলে এটা আমার মাঝে আসেনি। আপনিও দেখেছেন, আমার ক্যারিয়ারের শুরুতে অনেক আনন্দের জোয়ার এসেছিল, পরে আবার দুঃখের জোয়ার এসেছে। এটা খুব স্বাভাবিক বিষয় (প্রশংসা)। খেলোয়াড় হিসেবে আপনি ভালো খেললে বাহবা পাবেন, খারাপ খেললে সমালোচনা হবে, এটা স্বাভাবিক। খেলোয়াড় হিসেবে যেহেতু আমার স্বপ্ন বড়, ভালো করতেই হবে, এটা আমার চাকরি। ধারাবাহিক থাকাটা বড় বিষয়। আলহামদুলিল্লাহ, দলের জয়ের পেছনে অবদান রাখতে পেরেছি, এটা ভালো। তবে বড় খেলোয়াড় হতে হলে এটা বছরের পর বছর করতে হবে।

প্রশ্ন: তাসকিন ভালো করলে বাবা-মা খুব খুশি হতো। এখন তাসফিন যা করে, ভিডিওতে দেখলাম ট্রফিতে চুমো দিচ্ছে, এটা বাবা হিসেবে কেমন লাগে?
তাসকিন: আমার ছেলে বড় হচ্ছে। কথা বলে অনেক, মায়া লাগে বেশ। এখন আমার বাবা-মায়ের আমাকে নিয়ে কেমন অনুভূতি হতো, সেটা বুঝতে পারছি।

প্রশ্ন: এই যে পরিবর্তন, কীভাবে এলো? ফিটনেস, বোলিং নিয়ে কাজ করা, মাইন্ড ট্রেনিং করা। কোথায় ধাক্কা খাওয়ার পর নিজেকে নিয়ে এমন পরিবর্তনের চিন্তা হয়েছে?
তাসকিন: স্পোর্টসম্যান হিসেবে আমার গ্ল্যামার কিন্তু ২২ গজ। আমি এই জিনিসটা বুঝেছি অনেক পরে। প্রথম ২-৩ একটা গতিতে ছিলাম, বয়সও অনেক কম ছিল। তারকা খ্যাতি, টাকা—সব ভালোমতোই আসতেছিল। তখন মনে হয়েছিল জীবনটা স্বাভাবিক। আমি ভালো খেলছি, কিন্তু একটা খেলোয়াড়ের জন্য যে শৃঙ্খলা, কঠোর পরিশ্রম, নিবেদন গুরুত্বপূর্ণ, তখন এসব কম বুঝেছি। পরে যখন অনেক দিন দলের বাইরে ছিলাম, অবজ্ঞা দেখেছি, ধরেন প্রিমিয়ার লিগে ক্লাব কর্মকর্তাদের ব্যবহার, বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রকম ব্যবহারে কষ্ট পেয়েছি। আসলে আমার আব্বা-আম্মা কিন্তু আমাকে ছোট থেকে আদর করে বড় করছে। মানুষের খারাপ ব্যবহার, অবজ্ঞা—এগুলো আমার খারাপ লাগে।

অন্তত মানুষ হিসেবে আপনি আমাকে সম্মান তো দিবেন। খেলোয়াড় হিসেবে ভালো না খেললে বিসিবির সবাই সাপোর্ট করলেও অন্য অনেক জায়গা থেকে খেলোয়াড়রা অবজ্ঞা, বাজে ব্যবহারের শিকার হয়। ঐ জিনিসগুলো কষ্ট লাগছে, বিভিন্ন জায়গা থেকেই।

আমার সবকিছু তো খুব স্বাভাবিক যাচ্ছিল, যখন খারাপ হওয়া শুরু করল, তখন ভাবলাম যে না, এটা আসলে আমি না। আমি এর চেয়েও ভালো খেলোয়াড়। সবকিছু খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তখন আমি করোনার আগে ওমরাহ করতে গেলাম। সবাই বলত আমি আর বাংলাদেশ দলে খেলতে পারব না। ওমরাহ থেকে আসার পর সিদ্ধান্ত নিলাম, আমি একবার হলেও বাংলাদেশ দলে খেলব। আমি খেলবই যত কষ্ট করা লাগে। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া, আমি বাংলাদেশ দলে আবার খেলতে পারছি। আমি চাই আরও ৮-১০ বছর যেন ভালোভাবে খেলতে পারি। এটা আমার স্বপ্নের জায়গা।

প্রশ্ন: একটু বিস্তারিত জানতে চাই, লক্ষ্ণৌ থেকে যোগাযোগটা কে করেছে প্রথমে?
তাসকিন: বোর্ডে তো ওরা যোগাযোগ করেছিলই। আর গৌতম গম্ভীর ভাই আমার মাশরাফি ভাইকে ফোন করেছিল। ওদের দল থেকে সুজন ভাইয়ের (খালেদ মাহমুদ সুজন) সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। মাশরাফি ভাইকে প্রথম ফোন করেছিল গৌতম গম্ভীর। আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল ওদের দলের সিইও। তারপর কে এল রাহুল একটা ভয়েস মেসেজ দিয়েছিল।

প্রশ্ন: দেশের জন্য আইপিএল খেলার সুযোগ হাতছাড়া করে অবশ্য আপনি গোটা দেশেই প্রশংসিত হয়েছেন। তার পরও কতটা কঠিন ছিল এই সিদ্ধান্ত নেওয়া?
তাসকিন: আমার একটু কষ্ট হলেও আমি আসলে খুব সহজে মেনে নিতে পারছি। দেশের খেলা রেখে সিরিজের মাঝখানে চলে যাওয়াটা যায় না, ভাই। এটা হয় না। আইপিএল খেলার ইচ্ছা সবার আছে। আমি যদি বলি আমার ইচ্ছা নাই, এটা মিথ্যা কথা। কিন্তু সিরিজের মাঝখানে চলে যাওয়াটা, ঠিক না। আমি বলেছি (বিসিবি কর্তাদের), আমার ইচ্ছা আছে, তবে আমি খেলার মাঝখানে যেতে চাই না। তবে আমি চাই এসব হাই প্রোফাইল টুর্নামেন্টে খেলতে। তাছাড়া আমার বাবা-মায়ের ইচ্ছা আছে, আমি ওখানে খেলব। আশা করি ভবিষ্যতে সুযোগ আসবে। সবার দোয়া চাই।

Source link

Related posts

একটি 1968 মিকি ম্যান্টেল জার্সি নিলামে $3 মিলিয়ন আনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে

News Desk

মেয়ের ছবি প্রকাশ না করার কারণ জানালেন কোহলি

News Desk

3 গেমে প্রবেশকারী পেসারদের বিরুদ্ধে সিরিজ জয়ের জন্য নিক্স ফেভারিট

News Desk

Leave a Comment