Image default
খেলা

চায়ের দোকান থেকে পেশাদার বক্সিংয়ে এক লড়াকু মা

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামপাড়া সচরাচর রাত আটটার মধ্যেই শান্ত হয়ে পড়ে। গতকাল শুক্রবার ছিল সরকারি ছুটির দিন। স্টেডিয়াম এলাকা তাই আরও বেশি সুনসান। কিন্তু এই নীরবতার মধ্যেও একটি জায়গা থেকে ভেসে এল দর্শকদের গর্জন—পল্টনের মোহাম্মদ আলী বক্সিং স্টেডিয়াম।

‘রাম্বল ইন গুলিস্তান’-পেশাদার বক্সিং টুর্নামেন্টের পোশাকি নামটা যেন বাস্তবেও মিলে যাচ্ছিল স্টেডিয়ামের বক্সিং গ্যালারিতে খেলা দেখতে আসা দর্শকদের উন্মাদনায়।

বক্সিং রিংয়ের ওপরে জ্বলছে হাজার পাওয়ারের বাল্ব। উঁচু ভলিউমে বাজছে মিউজিক। স্টেডিয়ামের গেটে দাঁড়ানো স্বেচ্ছাসেবকেরা টিকিট ছাড়া কাউকে গ্যালারিতে ঢুকতে দেননি। রিংয়ে বক্সাররা নামতেই একেক জনের নাম ধরে দর্শকদের সে কী চীৎকার! টেলিভিশনে দেখা পেশাদার বক্সিং টুর্নামেন্টের জমকালো আবহটাই যেন ছিল পল্টনের এই স্টেডিয়ামে।

বাংলাদেশ বক্সিং ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে গত মে মাসে প্রথমবার হয়েছিল পেশাদার লড়াই। এরপর আরও দুবার পেশাদার বক্সিংয়ের আয়োজন করে এই সংস্থা। গত দুই আসরে শুধু ছেলেরাই লড়েছে। কালই প্রথম দেশের প্রথম দুই নারী বক্সার শামীমা আক্তার ও সানিয়া সুলতানার অভিষেক হলো পেশাদার জগতে। মোহাম্মদ আলী বক্সিং স্টেডিয়ামে সানিয়াকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন শামীমা।

চুড়ির বদলে এই মেয়েরা হাতে পরেছেন বক্সিং গ্লাভস। রিংয়ে নামার পর কপালে চুল ওড়ে বলে ‘বব কাট’ করে চুল ছেঁটেছেন শামীমা। তাঁকে দেখে বোঝার উপায় নেই কোনো নারী বক্সার রিংয়ে নেমেছেন। তবে সানিয়ার চুলগুলো ছিল আকর্ষণীয় বেণি-পাম্প করা।

ছোটবেলা থেকেই লড়াই-সংগ্রামের মধ্যে বেড়ে ওঠা সানিয়া একসময় বাবার সঙ্গে চায়ের দোকানে কাজ করতেন। কাজের ফাঁকেই খেলার টানে চলে যেতেন স্কুলের মাঠে। শুরুতে ফুটবল খেলতেন সানিয়া। তাঁকে বক্সিংয়ে নিয়ে আসেন কোচ ফজলুর রহমান। শুরুতে মা–বাবার আপত্তি ছিল। কিন্তু পর আর নিষেধ করেননি কেউ। কাল বক্সিং স্টেডিয়ামে দাঁড়িয়ে সানিয়া বলছিলেন সেসব দিনের কথা, ‘আমার নাক দিয়ে রক্ত ঝরত। এ জন্য ভয়ে কোনো খেলায় দিতে চাইতেন না বাবা। পরে বক্সিং শুরু করলে এই সমস্যা বন্ধ হয়ে যায়।’

সানিয়াকে ২০১৫ সালে বিয়ে দেন তাঁর বাবা। বিয়ের পরও খেলাটা ছাড়েননি। জাতীয় প্রতিযোগিতা, আন্তসার্ভিস, বাংলাদেশ গেমসসহ অন্যান্য ঘরোয়া টুর্নামেন্টে ৫১ কেজি ওজন শ্রেণিতে ৭ বার হয়েছেন চ্যাম্পিয়ন। ছেলে সাজিদ আহমেদের জন্মের কারণে তিন বছর খেলায় বিরতি দিয়েছিলেন। এরপর গত বছরের বাংলাদেশ গেমস ও এবার জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে খেলেছেন। সন্তান হওয়ার পর প্রথম আসরে নেমেই জেতেন সোনার পদক।

সংসার ও সন্তান সামলে খেলাটা কত কষ্টের, সেটাই বলছিলেন সানিয়া, ‘যখন ছেলের বয়স ৬ মাস, তখন ওকে ছেড়ে ক্যাম্পে চলে আসতে হয়েছিল। খেলতে নামলে সব সময় ছেলের কথা মনে পড়ত। শীতকালে ক্যাম্প শুরু হলে বেশি কষ্ট হতো। ছেলের জন্য খুব ভোরে উঠে খাবার তৈরি করে তবেই আসতে হতো ক্যাম্পে। আমার মায়ের কাছেই ছেলেটা বড় হয়েছে। মা না থাকলে হয়তো আমার বক্সিং খেলা হতোই না।’

মা–বাবার একমাত্র সন্তান হওয়ায় শামীমার খেলা নিয়ে প্রবল আপত্তি ছিল পরিবারের। কিন্তু ছোটবেলায় প্রচণ্ড ডানপিটে শামীমা বাড়ির পাশের বক্সিং ক্লাব দেখে এই খেলার প্রেমে পড়েন। ২০১২ সাল থেকে বক্সিং শুরু করেন শামীমা। ২০১৪ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত টানা জাতীয় প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন। শুরুতে অনেক আপত্তি থাকলেও শামীমা বক্সিং খেলেই বাবার হাতে টাকা তুলে দেন, ‘বক্সিং মারামারির খেলা। এ জন্য খেলতে দিতে চাইতেন না মা–বাবা। কিন্তু আমি এই বক্সিং খেলে যে টাকা পেয়েছি, সেটা দিয়ে বাড়ি বানিয়েছি। এখন মা–বাবা দুজনই খুশি।’

২০১৬ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত এসএ গেমসে প্রথম আন্তর্জাতিক আসরেই শামীমা মুখোমুখি হন ভারতীয় বক্সার মেরি কমের। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ছয়বারের সোনাজয়ী মেরি কমের সঙ্গে খেলার সেই স্মৃতি আজও ভোলেননি শামীমা, ‘তাঁকে রিংয়ে দেখে মনেই হয়নি কত বড় মাপের বক্সার। খেলায় হেরেছিলাম আমি। কিন্তু আমার অনেক প্রশংসা করেছিলেন।’

Related posts

সেন্ট জন অবশেষে এই বিশাল বিগ ইস্ট যুদ্ধে ইউকনের সাথে সমানভাবে রয়েছেন

News Desk

রাগ রিয়াদ জিজ্ঞাসা করতে অক্ষমতার জন্য নির্ধারিত হয়

News Desk

চার্জারদের নতুন অবস্থান শুরু হয় বড় জো অল্টের খসড়া তৈরি করে এবং প্রতিরক্ষা ও রিসিভারকে শক্তিশালী করে

News Desk

Leave a Comment