ফুটবল কিংবদন্তী পেলেকে চোখের পানিতে শেষ শ্রদ্ধা জানালো ব্রাজিল। যে ক্লাবের মধ্য দিয়ে ফুটবলের রাজার রূপকথার অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছিল সান্তোসের সেই ভিলা বেলমিরো ক্লাবেই হয়েছে পেলের শেষকৃত্য। হাজারো ভক্ত-সমর্থকের সাথে শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ফিফা সভাপতি গিয়ান্নি ইনফান্তিনোসহ বিশ্বের আরও অনেক ফুটবল অনুরাগীরা।
পুরো দিন জুড়েই শেষবারের মত তারা প্রিয় পেলেকে দেখতে সান্তোসের ক্লাবটিতে জড়ো হয়েছিলেন। মাঠের মাঝখানে শেষবারের মত তাদের রাজাকে দেখতে রাত পর্যন্ত মানুষের ভিড় চোখে পড়েছে। এসময় পেলের কফিন সান্তোস ও ব্রাজিলের পতাকা দিয়ে আবৃত ছিল। সাথে ছিল সাদা ফুল। স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি লুজি ইনাসিও লুলা ডা সিলভা ও তার স্ত্রীও পেলের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
তিনবারের বিশ্বকাপ জয়ী পেলেকে সর্বকালের সেরা ফুটবলার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ক্যান্সারের সাথে লড়াই করে গত বৃহস্পতিবার ৮২ বছর বয়সে সাও পাওলোর একটি হাসপাতালের চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। দক্ষিণ আমেরিকান ও ব্রাজিলিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের প্রধানদের সাথে শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগ দেন ইনফান্তিনো। এ সময় তিনি বলেন, ‘পেলে চিরন্তন, তিনি বিশ্ব ফুটবলের একজন আইকন।’
শেষকৃত্যে যোগ দিতে আসা পেলের ভক্তদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ৫৯ বছর বয়সী কার্লোস মোতা ও তার ১২ বছরের ছেলে বার্নান্ডো। রিও ডি জেনিরো থেকে ৫০০ কিলোমিটারেরও বেশি পাড়ি দিয়ে তারা পেলেকে শেষবারের মত শ্রদ্ধা জানাতে এসে বলেছেন, ‘ব্রাজিলের জন্য পেলে যা করেছে তা ছোটবেলা থেকেই আমাকে দারুনভাবে প্রভাবিত করেছে। সে আমাদের জাতীয় নায়ক। আমি সবসময়ই আমার ছেলেকে একটি কথাই বলি, আমার কাছে তিনটি অবিসংবাদিত তথ্য আছে- বলের আকার গোল, ঘাসের রঙ সবুজ এবং পেলে সর্বকালের সেরা ফুটবলার।’
বার্নান্ডো তার জীবনে বাবার এই শিক্ষা মনে প্রাণে ধারন করেন, ‘আমি কখনই পেলের খেলা সামনাসামনি দেখিনি। তবে আমি তার ভিডিও দেখেছি। সে এমন একজন সেরা খেলোয়াড় যে কখনো এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে পারেনা।’
মাত্র ১৫ বছর বয়সে সান্তোসের হয়ে পেশাদার ফুটবলের অভিষেক হয়েছিল এডসন আরানটেস ডো নাসিমেনটোর, যাবে সবাই পেলে নামে চেনে। ১৯৫৮, ১৯৬২ ও ১৯৭০ সালে ব্রাজিলের হয়ে তিনি তিনটি বিশ্বকাপ জয় করেছে যা এখন পর্যন্ত কেউ অর্জন করতে পারেনি। পেলের মৃত্যুর পর থেকে পুরো বিশ্ব তাকে শ্রদ্ধা জানাতে শুরু করে। বিশ্বজুড়ে ক্রীড়াবিদ, রাজনীতিবিদ, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ফুটবলের রাজার জন্য আবেগময় বার্তা দিয়েছে, পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে। নতুন বছরের শুরুতেই পেলের এই মৃত্যু সকলের জন্য দু:সহ স্মৃতি হয়েই দেখা দিয়েছে।
ব্রাজিলিয়ান টেলিভিশন গ্লোবো জানিয়েছে, প্রায় ৭ হাজার মানুষ কাল দুপুর পর্যন্ত শেষকৃত্যে উপস্থিত ছিল। ছেলে এডিনহোর নেতৃত্বে পেলের কফিন বহন করে নিয়ে আসা হয় স্টেডিয়ামে। সর্বসাধারণের জন্য পেলের কফিন রাত পর্যন্ত রাখা হলেও শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে শেষ সময়টাতে শুধুমাত্র তার পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে পেলের মৃত্যুতে ব্রাজিলে তিনদিনের জাতীয় শোক ঘোষনা করা হয়। রিওতে ব্রাজিলিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের সদর দপ্তরে পেলের জায়ান্ট পোস্টার টানানো হয় যেখানে তার ছবির উপর লেখা ছিল ‘চিরন্তন’।