মালদ্বীপের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে কাল সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশীপের ষষ্ঠ মিশন শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এর আগের সাফের পাঁচ আসরে অধরাই ছে শিরোপা। এমনকি শিরোপা তো দূরের কথা, গত পাঁচ আসরের মধ্যে কেবল একবারই ফাইনালে খেলেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। সেই ফাইনালেও ভারতের কাছে হেরে রানার্স আপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিলো লাল সবুজের জার্সিধারীদের।
আগামীকাল কাঠমুন্ডুর দশরথ রঙ্গশালায় বাংলাদেশ সময় পৌঁনে ছয়টায় মালদ্বীপের বিপক্ষে মাঠে নামভে সাবিনা-সানজিদারা। তবে এই ম্যাচে নামার আগে একটা দুঃসংবাদই পেয়েছে বাংলাদেশ। কালকের ম্যাচে নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডার আনাই মোগিনীকে পাচ্ছে না বাংলাদেশ।
দলের কোচ গোলাম রব্বানি ছোটন গনমাধ্যমকে জানিয়েছেন, কাল প্রথম ম্যাচে খেলতে পারছেননা নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডার আনাই মোগিনী। রোববার কাঠমুন্ডুর আর্মি হেডকোয়ার্টারে অনুশীলনের জন্য মাঠে নামতে গিয়ে বাঁ পায়ের দুই আঙ্গুলে ব্যথা পেয়েছিলেন তিনি। যদিও কোচের আশা ছিল মালদ্বীপের বিপক্ষে ম্যাচের আগেই সুস্থ হয়ে যাবেন মোগিনী। তবে আজ টানা তৃতীয় দিনের মতো অনুশীলন করতে পারেননি আনাই।
এদিকে, কাঠমুন্ডুর আর্মি হেডকোয়ার্টার মাঠে আজ সকালের অনুশীলনে দেখা গেল গোলকিপার রুপনা চাকমাকে ফাঁকি দিয়ে আধিনায়ক সাবিনা খাতুন বেশ কয়েকবার দুর্দান্ত গতিতে জালে জড়াচ্ছেন বল। অধিনায়কের এমন অনুশীলনেই বোঝা যায় প্রতিপক্ষের জাল কাঁপাতে কতটা মুখিয়ে আছেন তিনি।
দেশের মাটিতে সাবিনা দুর্দান্ত। মেয়েদের সাফে আগের পাঁচটি টুর্নামেন্টেই খেলেছেন তিনি। দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ তিনি, গোলের সংখ্যাও কম নয়। কিন্তু দলকে এনে দিতে পারনেনি অধরা শিরোপাটিই। ২০১৬ সালে একবার রানার্সআপ হলেও সোনালী ট্রফিটা অধরাই থেকে গেছে। এবারের আসরে সবচেয়ে অভিজ্ঞ হিসেবে অংশগ্রহনকারী সব দলেরই দৃষ্টি থাকবে সাবিনার দিকে। কারণ টানা ষষ্ঠ বারের মতো টুর্নামেন্টে অংশ নিতে যাচ্ছেন তিনি। এবার অন্তত শিরোপা ছুঁয়ে দেখার আফসোস ঘোচাতে চান তিনি। সেই লক্ষ্যে শুরুটাও বড় জয়ে করতে চান সাবিনা।
বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘পাঁচটি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ খেলেছি। কিন্তু একবারও চ্যাম্পিয়ন ট্রফি জিততে পারিনি। এই আফসোসটাই আমার রয়েছে। সেটাই এবার ঘুচাতে চাই।’
সাফের শিরোপা জিততে হলে বহুদূর যেতে হবে সাবিনাদের। তার আগে কাল প্রথম ম্যাচে উড়ন্ত সূচনা চান অধিনায়ক। সাবিনা বলেন, ‘এখন আপাতত আমাদের ফোকাস মালদ্বীপ ম্যাচ নিয়ে। এই ম্যাচে বড় ব্যবধানে জিততে চাই আমরা।’
মেয়েদের সাফে এর আগে বাংলাদেশের সঙ্গে দু’বার দেখা হয়েছিল মালদ্বীপের। কোন ম্যাচেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে পারেনি দ্বীপ দেশটি। ২০১৪ সালে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত তৃতীয় সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের গ্রুপ পর্বে মালদ্বীপকে ৩-১ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। যেখানে দুই গোল ছিল সাবিনার। দুই বছর পর ভারতের শিলিগুঁড়িতে অনুষ্ঠিত সাফের আসরে সেমিফাইনালে মালদ্বীপকে গুড়িয়ে দেয় সাবিনারা। সেই ম্যাচে ৬-০ গোলে বিধ্বস্ত হয়ে বিদায় নিয়েছিল মালদ্বীপ। ওই ম্যাচেও জোড়া গোল করেছিলেন দেশসেরা ফরোয়ার্ড সাবিনা। ২০১৬ সালে ফিফার প্রীতি ম্যাচেও ২-০ গোলে মালদ্বীপকে হারিয়েছিলো বাংলাদেশ।
মালদ্বীপের বিপক্ষে কাল্কের ম্যাচেও বড় জয়ের চ্যালেঞ্জ নেয়ার কথা জানান কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন, ‘প্রথম ম্যাচটি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ম্যাচটি বেশ রোমঞ্চকর হবে, কারণ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে সব সিনিয়র খেলোয়াড়রাই খেলে থাকে। তাই আমার মনে হয় পুরো টুর্নামেন্টটিই বেশ প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ হবে। বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে মানসিকভাবে প্রস্তুত মেয়েরা।’
এদিকে মালদ্বীপের অধিনায়ক আয়মিথ লিজার কন্ঠেও বাংলাদেশকে ছেড়ে কথা না বলার হুঁশিয়ারি। তিনি বলেন, ‘আমি জানি বাংলাদেশ তারুণ্য নির্ভর মেধাবী খেলোয়াড়দের একটি দল। তারা খুবই ভালো খেলে। তবে তাদের হারানোর সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে আমাদের।’
মালদ্বীপের কোচ আহমেদ শরিফ আরেকটু বাড়িয়েই বলেন, ‘আমরা গ্রুপ অব ডেথে পড়েছি। সবারই একটি প্রত্যাশা থাকে। আমরাও সেরা সাফল্য অর্জন করতে চাই। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশকেও আমরা সহজে ছাড় দেব না। নিজেদের সেরা কৌশল, পদ্ধতি এবং সামর্থ্য দিয়ে সেরাটা পাওয়ার চেষ্টাই করব আমরা।’