২০১২ সাল। সেবারের গনিত অলিম্পিয়াডের আসর বসে আর্জেন্টিনায়। কিন্তু বাংলাদেশের প্রতিযোগিরা পড়েন বিপাকে। আর্জেন্টিনার ভিসা করাতে ছুটতে হয় সেই দিল্লিতে। কারণ, বাংলাদেশে দেশটির দূতাবাস নেই।
অবশেষে সেই সমস্যার সমাধান হলো। ঢাকায় আবার চালু হলো আর্জেন্টিনার দূতাবাস। আর এই দূতাবাস খোলার পেছনে আছে ফুটবল কূটনীতির অসাধারণ এক গল্প। বাংলাদেশ জুড়ে বিশ্বকাপের সময় আর্জেন্টিনা সমর্থকদের উন্মাতাল সমর্থন দেশটিকে বাধ্য করেছে ঢাকায় দূতাবাস খুলতে। আর বাংলাদেশি এই আর্জেন্টিনা সমর্থকদের উন্মাদনা বিশ্বের কাছে পৌঁছে দিতে অসাধারণ একটা নেপথ্য ভূমিকা রেখেছিল মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস নগদ। এই ঘটনাটির জন্ম দিয়েছিলেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক।
২০২২ ফিফা বিশ্বকাপ সামনে রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি ভেন্যুতে জায়ান্ট স্ক্রিনে খেলা দেখার ব্যবস্থা করেছিল নগদ। ভেন্যু তিনটি হলো-টিএসসি, সোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বর ও মহসিন হলের মাঠ। এর মধ্যে মহসিন হলের মাঠে খেলার দেখার আয়োজন নিয়ে আন্তর্জাতিক হইচই শুরু হয়ে যায়। বিশ্বের নামকরা সব সেলিব্রিটিরা এই মাঠের ছবি পোস্ট করছেন টুইটার, ফেসবুকে। আর্জেন্টিনার মিডিয়াতে প্রকাশ হয় এই খবর।
খোদ দলের কোচ লিওনেল স্ক্যালোনি এবং পরে লিওনেল মেসিও এ নিয়ে কথা বলেন। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের উৎসবে উড়তে থাকে বাংলাদেশের পতাকা। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রথমে বাংলাদেশের সম্পর্ককে অন্য স্তরে নেওয়ার কথা বলেন। এরপর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রপতিকে বিশ্বকাপ জয়ের শুভেচ্ছা জানিয়ে দূতাবাস খোলার আহ্বান জানান। আর সেই থেকেই এখন ঢাকায় দেখা গেল আর্জেন্টিনার দূতাবাস।
পুরো ব্যাপারটার পেছনে থাকা নগদ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক বলছিলেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম এই দেশের তারুণ্যের সামনে খেলাধুলাকে তুলে ধরতে। খেলা নিয়ে তরুণদের ব্যস্ত থাকার মানে হলো, তারা মাদক-সন্ত্রাস থেকে দূরে থেকে নিজেদের সম্ভাবনা নিয়ে ভাবতে পারবে। সে জন্যই আমরা বিশ্বকাপকে সবার কাছে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছিলাম।’
সেই সঙ্গে তানভীর এ মিশুকের ফুটবল নিয়ে কিছু স্বপ্নও ছিল। তিনি বলছিলেন, ‘হতে পারে বাংলাদেশ এখন ফুটবলে পিছিয়ে। কিন্তু আমি স্বপ্ন দেখি, একটা সময় বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বকাপে নিজের দেশের জন্যই চিৎকার করবে। আর সেই স্বপ্নটা বড় করার জন্য ফুটবল নিয়ে উন্মাদনা তৈরি করাটা বড় একটা কাজ।’
সেই উন্মাদনা দেশের গন্ডি পার হয়ে যে দূতিয়ালির জায়গায় পৌঁছে যাবে, এটা কল্পনা করেননি তানভীর এ মিশুক। তিনি বলছিলেন, তারা ভেবেছিলেন, ব্যাপারটা দেশেই সীমাবদ্ধ থাকবে, ‘আমরা ভেবেছিলাম, খেলা দেখানোর এই আয়োজন নিয়ে দেশে হইচই হবে। কিন্তু সেটা যে এমন আন্তর্জাতিক স্তরে পৌঁছে যাবে, সেটা আমরা ভাবিনি। আজ বাংলাদেশে আর্জেন্টিনার দূতাবাস খোলা হলো, এটা আমাদের জন্য গর্বের। এর পেছনে আমরা ছোট্ট একটা ভূমিকা রাখতে পারলাম, সে জন্য নিজেদের ধন্য মনে করছি।’