ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জে নৌকায় বন্দর পার হয়ে সিএনজিতে প্রায় ১০ কিলোমিটার পথ শেষে জাতীয় তীর্থ লাঙ্গলবন্দের ১৪ নম্বর ঘাট। একেবারে ব্রহ্মপুত্র নদী। সেখানেও নৌকায় পার হয়ে শম্ভুপুরা ইউনিয়ন পরিষদ। ঘাটে উঠে ১০ মিনিট হাঁটার পথ। একেবারের গ্রামের ভেতরে প্রয়াত ফুটবলার মোনেম মুন্নার বড় বোন সামসুন নাহার আইভীর বাসা। এই সেই বেন যিনি মুন্নাকে তার একটি কিডনি দিয়ে জীবন প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখেছিলেন। মুন্না জীবন ফিরে পাওয়ায় এদেশের কোটি কেটি ফুটবল ভক্তের চোখের পানি মুছে দিয়েছিলেন।
২০০৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি মারা যান বাংলাদেশের ফুটবলে প্রথম আন্তর্জাতিক ট্রফি উপহার দেওয়া অধিনায়ক মোনেম মুন্না। অনেকই স্মরণ করেন তাকে। কিন্তু মুন্নার শরীরের অঙ্গ প্রতিস্হাপনে নিভে যাওয়া জীবনপ্রদীপের সলতে জ্বালিয়ে দেওয়া বড় বোন আইভীর খোঁজ কেউ নেয়নি। তা নিয়ে এক বিন্দু কথা ফোটেনি বোনের কণ্ঠে। তবে ছোট ভাই মুন্নার কথা উঠতে বোন আইভীর চোখ মুহূর্তেই ভিজে গিয়ে টলমল করে উঠল। অবয়বটা মুহূর্তে অন্ধকার হয়ে গেল। ভার হয়ে গেল কণ্ঠ। ভেজা চোখ ভারী কণ্ঠে কথা বলতে গিয়ে জড়িয়ে যাচ্ছিল।
স্বামী ফজলুল হক, সন্তান আব্দুর রউফ অন্তুর সামনে বসা সুতির শাড়ির আঁচলে মুখ লুকিয়ে কথা বলতে গিয়ে যেন পাহাড়ের নিচে চাপা পড়ছিলেন আইভী। ভারী পরিবেশ দূরে ঠেলে আইভী কথায় ফিরলেন। ভাইকে নিয়ে বোনের আকুতিমাখা শচীন দেব বর্মনের লেখা সেই বিখ্যাত গানটি শুনলে আইভী এই পার্থিব পৃথিবী থেকে হারিয়ে যান অন্য জগতে। সেই গানের সঙ্গে মোনেম মুন্নার চলে যাওয়ার মিল না থাকলেও গানের কয়েকটি লাইন আইভীকে এলোমেলো করে দেয়। আইভী বললেন, ‘আমি স্বপ্ন দেখি আমার ভাই মুন্নাকে। আমার কাছে আসে। আমার সঙ্গে কথা বলে। একটা সময় স্বপ্ন দেখতাম বাড়ির চার পাশ দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।’
মুন্নার বোনের খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেল মুন্নার বাবা ডা. হাসান আলী এবং মা খোরশেদা বেগম পরপারে চলে গেছেন। মুন্নারা পাঁচ বোন, চার ভাই। মুন্নার অবস্হান ছিল ষষ্ঠ। মুন্নার দুই কিডনি নষ্ট হলে ভারতের বেঙ্গালুরুতে নিয়ে যাওয়ায় হয় কিডনি প্রতিস্হাপনের জন্য। সঙ্গে বোন আইভী এবং মেজো ভাই হুমায়ুন কবির। বোনের টিসু্য মিলে যাওয়ায় কিডনি দেন আইভী। পাঁচ বছর বেঁচে ছিলেন মুন্না। এক কিডনি নিয়ে বোন আইভী ২০ বছর ধরে সুস্হ থাকলেও এখন তার কিডনিতে সমস্যা দেখা যাচ্ছে। ভাইয়ের আত্মা কষ্ট পাবে মনে করে আইভী বললেন, ‘এটা এমন কিছু না।’ সন্তান অন্তু বললেন, ‘কিডনিতে একটু সমস্যা আছে। ওষুধ খাচ্ছেন।’
ইত্তেফাকের খেলার পাতায় মুন্নার ছবি দেখে আবার আবেগ আপ্লুত, বাকরুদ্ধ বোন আইভী বললেন, ‘এত অল্প বয়সে আমার ভাইটা মরে গেল আজও আমি মানতে পারি না। স্বপ্ন দেখি আমার ভাই আমার কাছে আসে যায়। ভাইবোন নিয়ে কোনো গান শুনলে আমি ঠিক থাকতে পারি না। কেমনে করে বুঝাই ভাই (মুন্না) আমার কাছে কী ছিল।’