উইন্ডিজকে ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশ করে শুরু। এরপর থেকেই যেন জয় হয়ে গেছে দূর আকাশের তারা। টানা দশ ম্যাচে জয়শূন্য, হার নয়টি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে এ ধারা থেকে বেরোতে চায় বাংলাদেশ, ২০২৩ বিশ্বকাপে যেতে হলে এ ছাড়া উপায়ও নেই অবশ্য! তবে তার আগে অধিনায়ক তামিম ইকবালের দুশ্চিন্তা যেন কাটছেই না। ব্যাট বল তো আছেই, দুশ্চিন্তা বহুগুণে বাড়িয়ে দিচ্ছে দলের ফিল্ডিং।
শেষ চার মাসে দলের এ দুরবস্থার পেছনে সব বিভাগেরই দায় আছে কম বেশি। তবে দৃষ্টিকটু হয়ে দেখা দিয়েছে দলের বাজে ফিল্ডিং। এক নিউজিল্যান্ড সফরেই ফিল্ডারদের হাতগলে ক্যাচ বেরিয়েছে দেদারসে।
দ্বিতীয় ওয়ানডের কথাই ধরুন না! বাংলাদেশের ছুঁড়ে দেওয়া ২৭২ রানের লক্ষ্যে সেদিন জিততে বেশ বেগই পেতে হয়েছে নিউজিল্যান্ডকে। কিন্তু সুযোগ কি তামিমদেরও কম ছিল? লড়াকু পুঁজি পেয়ে নিউজিল্যান্ড ব্যাটারদের চেপে ধরেছিলেন তাসকিনরা। ৩৬তম ওভারে এসেছিল সুবর্ণ সুযোগও। কিন্তু তাসকিনের সে ওভারে মুশফিকুর রহিম আর মোহাম্মদ মিঠুনের হাতে ফসকেছিল জিমি নিশাম আর টম ল্যাথামের দুটো ক্যাচ। সেই ল্যাথামই পরে অপরাজিত এক সেঞ্চুরিতে দলকে নিয়ে গেছেন জয়ের বন্দরে।
ঘটনা সেখানেই শেষ হলেও বর্তে যেত বাংলাদেশ। সিরিজে এর আগে পরে আরও ক্যাচ ফসকেছে তামিম ইকবালের দলের। সফর থেকে ফিরে বিমানবন্দরে নবাগত নাসুম আহমেদ জানিয়েছিলেন, নিউজিল্যান্ডে এ সমস্যার মূলে ছিল সেখানকার পরিষ্কার আকাশ।
তবে তার এ বক্তব্যকে মিথ্যে প্রমাণ করেছে শ্রীলঙ্কা সিরিজে দলের ফিল্ডিং। দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিন সকালে প্রতিপক্ষ ওপেনার দিমুথ করুনারত্নে পেয়েছেন জীবন। এবারও দুর্ভাগা সেই তাসকিন। তার বলটা লঙ্কান অধিনায়কের ব্যাটে লেগে যায় প্রথম স্লিপে থাকা নাজমুল হোসেনের হাতে, কিন্তু তিনি তা তালুবন্দি করতে ব্যর্থ হন। পরে সেই করুনারত্নে করেন সেঞ্চুরি আর লঙ্কানরা পায় বড় স্কোরের ভিত।
দলের ফিল্ডিং বিভাগের এমন হতশ্রী দশাই ভাবনায় রেখেছে অধিনায়ক তামিমকে। সম্প্রতি ক্রিকইনফোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘এটা সম্ভবত এমন এক জায়গা যা নিয়ে আমি সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় আছি। যদি শেষ পাঁচ মাসে আপনি আমাদের দেখেন, তাহলে দেখবেন ব্যাটিং-বোলিংয়ের চেয়ে ফিল্ডিংই সবচেয়ে বেশি ম্যাচ হারিয়েছে আমাদের। ঘরের মাঠে দুটো টেস্ট (উইন্ডিজের বিপক্ষে), কিংবা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডে, আমাদের বড় সুযোগগুলো এসেছিল ফিল্ডিংয়েই।’
তবে সেসব ফিল্ডিং ব্যর্থতা অনুশীলনে সব কঠোর পরিশ্রমকে ধুলোয় মিশিয়ে দিচ্ছে, বললেন তামিম। তার কথায়, ‘আমরা মাঠে যা করছি, তাই সবাই দেখছে। অনুশীলনে যা করছি, তা চোখে পড়ছে না। আমি মনে করি, আমরা ভালো করার জন্য অনুশীলনে পর্যাপ্ত পরিশ্রম করছি। আমাদের দলের সবাই আরও ভালো করতে চায়, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আমরা ভুল করে বসছি।’
এ থেকে উত্তরণের একটা উপায়ও ভেবে রেখেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। বললেন, ‘আর সব দলের মতো হয়তো আমাদের সবাই খুব ভালো ফিল্ডার না। কিন্তু ভালো ফিল্ডার আছে আমাদের। আমাদের সক্ষমতা অনুযায়ী, যে-ই গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ফিল্ডিং করছে, সুযোগগুলো কাজে লাগাতে হবে। ভালো ক্যাচ নিতে হবে, দারুণ একটা দুটো রানআউট করতে হবে। যদি সেটা করতে পারি, তাহলে দেখবেন আরও বেশি ম্যাচ জিততে পারব।’
যে দশ ম্যাচে জয়শূন্য ছিল দল, তার ‘বেশিরভাগ ম্যাচেই’ জয়ের সুযোগ ছিল দলের, দাবি অধিনায়কের। তামিম বললেন, ‘দশ ম্যাচের বেশিরভাগ ম্যাচেই আমাদের জয়ের সুযোগ ছিল। কিন্তু যখন আমরা ম্যাচে শ্রেয়তর অবস্থানে ছিলাম, তখন আমরা কিছু ভুল করেছি, এ কারণে ম্যাচ হেরেছি।’
জয় পেতে হলে কাজে লাগাতে হবে হাতে আসা সব সুযোগ, উপলব্ধি তামিমের, ‘আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ছিলাম কিন্তু এখন আমাদের সব সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। কখন তা আসে, সেজন্যে আমাদের মনোযোগী হতে হবে।