খ্যাতনামা ফাস্ট বোলার জন্ম দেওয়ার জন্য বরাবরই খ্যাতি আছে পাকিস্তানের। ইমরান খান, ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুস, শোয়েব আক্তারের সাথে আরেকটি বড় তারকা পরবর্তীতে খ্যাতি লাভ করে তিনি হলেন উমর গুল। যদিও বাকিদের মত কখনো রিভার্স স্যুইং বা গতির ঝড় তুলে নয়, উমর গুল পরবর্তীতে তিনি ইয়র্কার মাস্টার হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন! ২০০৯ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছেন পাকিস্তানের হয়ে, বলা ভাল পাকিস্তানকে জিতিয়েছেন তিনি। পাকিস্তানের সাবেক এই পেসার বিশ্ব ক্রিকেটে দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর ত্রাশ সৃষ্টি করেছেন।
১৪ এপ্রিল ১৯৮৪ সালে পেশোয়ারে জন্মগ্রহণ করেন উমর গুল। একটা মধ্যবিত্ত পরিবারেই বেড়ে উঠেন তিনি। ছোট বেলা থেকেই টেপ বলে ক্রিকেট খেলতেন। টেপ বল ক্রিকেটে বেশ দূরন্ত গতিতে বল করতেন বিধায় তার বন্ধুরা তাকে প্রোফেশনাল ক্রিকেটার হবার জন্য চাপ দেয়। সেখান থেকেই পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে উমর গুলের ক্যারিয়ারের শুরু হয়।
উমর গুল ২০০১ সালে বেলুচিস্তানের হয়ে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট অভিষেক করেন। ২০০৩ সালে শারজাহতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় তার৷ সেখানে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিনি ২ উইকেট লাভ করেন। হাই আর্ম একশন, লেয়ার স্যুইং ও ইয়র্কারে পারদর্শিতা দেখিয়ে দ্রুতই তিনি পাকিস্তান ক্রিকেটে ওয়াকার ইউনুসের জায়গা দখল করে নেন। ২০০৪ সালে ভারতের বিপক্ষে টেস্টে দূর্দান্ত বোলিং করে ৫ উইকেট শিকার করে তাক লাগিয়ে দেন তিনি।
এরপর ইনজুরিতে ২০০৫ সালে দল থেকে ছিটকে যান তিনি। পরবর্তীতে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট শুরু হবার পর থেকে এই ফরম্যাটে ভিত গড়েন তিনি৷ ডেথ ওভারে তার দূর্দান্ত বোলিং অনেকেরই নজর কেড়েছিলো। ২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দূর্দান্ত বোলিং করে পাকিস্তানকে ফাইনালে পৌঁছান তিনি।
অবশ্য সেবার ফাইনালে ভারতের কাছে হার নিয়ে মাঠ ছাড়ে পাকিস্তান। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে পাকিস্তানের জয় পাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বল হাতে বড় অবদান রাখেন গুল। সে আসরে ‘আউটস্ট্যান্ডিং সিম বোলার অব দ্যা ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টি’র পুরষ্কার জিতেন গুল।
একই টুর্নামেন্টে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ৬ রান দিয়ে ৫ উইকেট শিকার করে রেকর্ড গড়েন তিনি। প্রথম পুরুষ খেলোয়াড় হিসেবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে পাঁচ উইকেট শিকার করেন গুল। ২০১০ সালে মোহাম্মদ আসিফ ও মোহাম্মদ আমির ফিক্সিং কান্ডে জড়ানোর পর উমর গুলই পাকিস্তানি বোলিং লাইন আপের নেতৃত্ব দেন।
বোলার হওয়া সত্ত্বেও তিনি ডাউন দ্যা অর্ডারে দ্রুত রান করায় পারদর্শী ছিলেন। ২০১০ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে ৮ নম্বরে ব্যাট করতে আসেন গুল, তখন পাকিস্তানের স্কোর ৭ উইকেটে ১০৩ রান! সেখান থেকে তার করা অপরাজিত ৬৫ রানে পাকিস্তান ফলোয়ান পার করে। ইনজুরির কারণে দলে আসা যাওয়ার মধ্যেই ছিলেন গুল। সবশেষ ২০১৬ সেপ্টেম্বরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেন তিনি, এরপর আর দলে সুযোগ পাননি গুল।
২০০৭ ও ০৯ দুই বিশ্বকাপেই ১৩ উইকেট নিয়ে সেরা বোলার ছিলেন উমর গুল। প্রথম বোলার হিসেবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তিনি হ্যাট্রিক করেন। টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানের হয়ে ২য় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি তিনি! ২০১৩ সালে ইন্টারন্যাশনাল টি-টোয়েন্টি পারফরমার অব দ্যা ইয়ারের পুরষ্কার জেতেন তিনি। ২০০৮ সালে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) এর প্রথম আসরে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলার সুযোগ পান উমর গুল।