Image default
খেলা

নাদিয়া নাদিম: আফগান শরণার্থী থেকে প্রভাবশালী ফুটবলার ও চিকিৎসক

শরণার্থীরাও পর্যাপ্ত সুযোগ পেলে যে, বিশ্বের সবার সামনে অনুপ্রেরণার অপর নাম হতে পারে, তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত নাদিয়া নাদিম। তিনি একাধারে পেশাদার ফুটবলার ও সার্জন চিকিৎসক। ফুটবল মাঠে দাপিয়ে বেড়ানোর ফাঁকে ফাঁকে শেষ করেছেন পাঁচ বছরের চিকিৎসা কোর্স এমবিবিএস। খেলেছেন ডেনমার্ক জাতীয় নারী ফুটবল দল, ম্যানচেস্টার সিটি ও পিএসজিতে (প্যারিস সেইন্ট জার্মেই)। আর বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের কেনটাকির রেসিং লুইসভিল এফসির হয়ে খেলছেন। পাশাপাশি কথা বলতে পারেন মোট ১১টি ভাষায়।

১৯৮৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আফগানিস্তানের হেরাত প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন নাদিয়া নাদিম। পরিবারে তার আরও চার বোন রয়েছে, ভাই নেই। বাবা-মা ও বোনদের সঙ্গেই সেখানে বেড়ে উঠতে থাকেন। তার বাবা আফগান ন্যাশনাল আর্মির একজন জেনারেল ছিলেন। ২০০০ সালে তালেবানরা তার বাবাকে হত্যা করে। এরপর পরিবারের সঙ্গে দেশ ছেড়ে চলে আসেন ছোট্ট নাদিয়া।



নিজের ওয়েবসাইটে নাদিয়া নাদিম বলেন, ‘আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন একদিন হৃদয়বিদারক খবর পাই যে, তালেবানরা আমার বাবাকে হত্যা করেছে। এরপরে, আমার পরিবার আফগানিস্তান থেকে পালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। কারণ, পরিবারের ৬ জন নারীর জন্য সেটা নিরাপদ জায়গা ছিল না।’

সিদ্ধান্ত মোতাবেক পাকিস্তান হয়ে ইউরোপে পাড়ি জমায় নাদিয়ার পরিবার। এই ফুটবলার বলেন, ‘লন্ডনে আমাদের কয়েকজন আত্মীয় ছিল, তাই আমরা সেখানে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলাম। সেই অনুযায়ী, জাল পাসপোর্ট নিয়ে আমরা পাকিস্তান হয়ে ইতালিতে আসি। সেখান থেকে আমি এবং আমার পুরো পরিবার একটি ট্রাকে চড়ে বসি। ভাবছিলাম যে আমরা লন্ডনের দিকে যাচ্ছি। কয়েকদিন পর, আমরা সবাই বিগ বেন দেখার আশায় ট্রাকে ঘুরলাম। কিন্তু দেখতে পাইনি।


ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে এক মৌসুম খেলেছেন এই নারী ফুটবলার

আমরা যা দেখেছি তা হলো কেবল গাছ। আমরা একজন পথচারীকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারি যে, বাসটি আমাদের ডেনমার্কে নামিয়ে দিয়েছে। ইউরোপের উত্তরাঞ্চলের একটি ছোট দেশ, যাকে আমি আজকাল বাড়ি হিসেবে উল্লেখ করি।’

এর পরের গল্পটা কেবল সংগ্রাম ও নিজের পরিচিতি তৈরির। বেড়ে উঠতে থাকেন ডেনমার্কের একটি শরণার্থী শিবিরে। সেখানে থেকেই পড়াশোনা ও ফুটবলে নাম লেখানো। অ্যালবার্গের স্থানীয় ক্লাব বি৫২ এর হয়ে ফুটবলার হিসেবে পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু করেন এই আফগান তরুণী। এরপর টিম ভিবোর্গ, আইকে স্কোভবাক্কেন এবং ফরচুনা হজরিং ক্লাবের হয়ে খেলেছেন। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে ফরচুনা হজরিং ক্লাবের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগে অভিষেক ঘটে নাদিয়ার। সেই ম্যাচে স্কটিশ চ্যাম্পিয়ন গ্লাসগো সিটির বিপক্ষে ২-১ গোলে জয় পায় তার দল। দুটি গোলই করেন নাদিয়া নাদিম।


কিছু ম্যাচে পিএসজির অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন নাদিয়া নাদিম

তার আগে ২০০৯ সালে ডেনমার্ক জাতীয় নারী ফুটবল দলের হয়ে অভিষেক ঘটে এই আফগান শরণার্থীর। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত দলটির হয়ে ৯৯টি ম্যাচ খেলেছেন। ডেনমার্কে ৭ বছর খেলার পর ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটিতে নাম লেখান নাদিয়া। এর পরের বছর ২০১৯ সালে নাম লেখান পিএসজিতে। সবমিলিয়ে নিজের পেশাদার ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত ২০০টিরও বেশি গোল করেছেন তিনি।

এর পাশাপাশি ডেনমার্কের আরহাস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি হন। পাঁচ বছরের পড়াশোনা শেষে সম্প্রতি সেখান থেকে চিকিৎসক হয়ে বের হয়েছেন। চিকিৎসক হওয়ার পর গত ১৪ জানুয়ারি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা এক পোস্টে সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন নাদিয়া নাদিম। সঙ্গে সমালোচকদেরও এক হাত নিয়েছেন।

৩৪ বছর বয়সী নাদিয়া নাদিম বলেন, ‘প্রথম দিন থেকে যারা আমাকে সমর্থন করেছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ এবং চলার পথে তৈরি হওয়া আমার সব নতুন বন্ধুদেরও। আমি আপনাদের ছাড়া এটি করতে পারতাম না। আমি চিরকাল সবার এমন সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞ থাকবো।’ এ সময় সমালোচকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমি আবার এটি করেছি। পাছায় লাথি মেরেছি এবং আপনারা এবারও কিছুই করতে পারবেন না।’

Source link

Related posts

টাইমস অফ ট্রয়: পরের মাস ছয়টি ট্রোজানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

News Desk

কেটলিন ক্লার্ক হলেন “টেলর সুইফট ২.০”: জ্বর কোচ

News Desk

কলাম রিচি দ্বীপের বাসিন্দাদের “কিছু কিছু করুন” মানসিকতার সাথে তাত্ক্ষণিক উত্সাহ দেয় তার সম্ভাবনা দেয়

News Desk

Leave a Comment